You dont have javascript enabled! Please enable it! আনােয়ার পাশা - সংগ্রামের নোটবুক
আনােয়ার পাশা
“বাংলাদেশে নামল ভাের”- ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের গণহত্যার শুরুর পর মৃত্যু, রক্ত আর জল্লাদের খাচায় অবরুদ্ধ। ঢাকায় বসে এভাবেই একটি উপন্যাসের শুরু করেছিলেন তিনি। কাহিনীর শুরু এপ্রিল মাসে, জুন মাসেই সমাপ্তি। তখনও আমাদের স্বাধীনতার দিগন্ত অনেক দূর, কিন্তু সেই গভীর অন্ধকারে বসেই তিনি দেখেছিলেন নতুন ভােরের স্বপ্ন। আর তাই তিনি উপন্যাসের শেষ করেছিলেন এভাবে : “পুরনাে জীবনটা সেই পঁচিশের রাতেই লয় পেয়েছে। আহা তাই সত্য হােক। নতুন মানুষ, নতুন পরিচয় এবং একটি নতুন প্রভাত। সে আর কত দূরে? বেশী দূর হতে পারে না। মাত্র এই রাতটুকুই তাে! মা ভৈঃ। কেটে যাবে।” আমরা জানি সেই রাত কেটে গিয়ে নতুন ভাের এসেছিল, কিন্তু স্বাধীন দেশের মুক্ত স্বাধীন ভাের দেখে যেতে পারেননি মুক্তিযুদ্ধের প্রথম উপন্যাসের রচয়িতা আনােয়ার পাশা। আনােয়ার পাশা জন্মেছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর মহকুমার রাঙ্গামাটি চাদপাড়া ইউনিয়নের অন্তর্গত ডবকাই গ্রামে। তার বাবার নাম মকরম আলী, আর মায়ের নাম সাবেরা খাতুন। তাঁর জন্ম ১৯২৮ সালের ১৫ এপ্রিল, বাংলা সন অনুযায়ী ২ বৈশাখ ১৩৩৫। মকরম আলী দেশভাগের আগে দীর্ঘদিন স্থানীয় ইউনিয়ন বাের্ডের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি ফজলুল হক প্রবর্তিত ঋণ-সালিশি বাের্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। স্থানীয় ভাবতা আজিজিয়া উচ্চ মাদ্রাসায় ১৯৩৯ সালে তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। এ মাদ্রাসা থেকে ১৯৪৬ সালে মাদ্রাসা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাস করেন আনােয়ার। কিন্তু মাদ্রাসায় পড়ার আগ্রহ তার মােটেই ছিল না। তাই ১৯৪৬ সালে তিনি বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তি হন। তিনি যখন মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন, তখন ছাত্রাবাসে থাকতেন। কলেজে এসেও তিনি থাকতেন কলেজ ছাত্রাবাসে। আনােয়ার পাশা ১৯৪৮ সালে কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে আই. এ. পাস করেন।
দেশভাগের কারণে ওই সময় তিনি চলে আসেন রাজশাহী কলেজে। এ কলেজ থেকে ১৯৫১ সালে তিনি স্নাতক পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে পাস করেন। ছাত্র হিসাবে তিনি বরাবরই ছিলেন প্রথম সারির। আনােয়ার পাশা সম্পর্কে প্রশংসাপত্রে তঙ্কালীন পাকিস্তান সরকার গঠিত কেন্দ্রীয় বাঙলা উন্নয়ন বাের্ডের পরিচালক ড. মুহম্মদ এনামুল হক লিখেছিলেন : “He was one of the bright students of my class. He as a student made a very favourable impression on me.” (২৭.০৬.১৯৬৬)। রাজশাহী থেকে আনােয়ার পাশা আবার ভারতে চলে যান। সেখানে ভর্তি হন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেসময় বাংলা বিভাগের অধ্যক্ষ ছিলেন ড. শশিভূষণ দাশগুপ্ত। সুকুমার সেন, প্রমথনাথ বিশী প্রমুখ ছিলেন তার শিক্ষক। আনােয়ার পাশার সহপাঠীদের মধ্যে ছিলেন কবি শঙ্খ ঘােষ (সত্যপ্রিয় ঘােষ), ড. ক্ষেত্র গুপ্ত, ড. অশ্রুকুমার সিকদার প্রমুখ। কলকাতায় এসে তিনি থাকতেন কারমাইকেল ছাত্রাবাসে। পরবর্তীতে তিনি তাঁর ‘নীড়-সন্ধানী’ উপন্যাসটি উৎসর্গ করেছিলেন কারমাইকেল ছাত্রাবাসের বন্ধুদেরকে। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৫৩ সালে দ্বিতীয় বিভাগে স্নাতকোত্তর পাস করেন আনােয়ার পাশা। তার জন্মস্থান ডাবকাই গ্রামের তিনিই প্রথম স্নাতকোত্তর পাস ব্যক্তি ছিলেন।
১৯৫৩ সালের ১ এপ্রিল আনােয়ার পাশার সাথে বিয়ে হয় নদীয়ার পালিত বেখিয়া গ্রামের হেকমত আলী মণ্ডলের মেয়ে মসিনা খাতুনের। তাদের সংসারে দুই ছেলে জন্মেছিল- মাসারুল আফতাব ও রবিউল আফতাব। বিয়ের আট মাস পর Tথেকেই চাকরি জীবনের শুরু হয় আনােয়ার পাশার। তার আঠারাে বছরের। কর্মজীবনকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় ভারতে অবস্থানকালীন এবং পূর্ব পাকিস্তান। তথা বাংলাদেশে। তিনি প্রথম শিক্ষকতায় যােগ দেন ১৯৫৩ সালের ৮ ডিসেম্বর। মানিকচক হাই মাদ্রাসায়। সােয়া তিন মাস পরে ১৯৫৪ সালের ১৫ মার্চ যােগ দেন। ভাবতা হাই মাদ্রাসায় এবং এখানে প্রায় তিন বছর শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা নিয়ে ১৯৫৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি যােগ দেন সাদিখান দিয়ার বহুমুখী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। এখানে ছিলেন এক বছর।
শুরু থেকেই আনােয়ার পাশা চেয়েছিলেন অধ্যাপনাকে পেশা হিসাবে নিতে। ওই সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়ােগের বিজ্ঞাপন দেখে তিনি আবেদন। করেছিলেন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে মৌখিক (ভাইভা) পরীক্ষার জন্য ডাকা হলাে। মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে ফিরে এসে নিয়ােগের অপেক্ষায় ছিলেন আনােয়ার পাশা। কারণ, নিজের যােগ্যতা সম্পর্কে তিনি আস্থাশীল ছিলেন। কিন্তু একসময় জানতে পারলেন, ওই পদে নিয়ােগ দেওয়া হয়েছে এবং যাকে নিয়ােগ দেওয়া হয়েছে, তিনি যােগ দিয়ে ফেলেছেন। এতে তিনি সামান্য কষ্ট পেলেও আসল আঘাত পেলেন। অন্য জায়গায়। জানতে পারলেন, বাের্ডের বেশিরভাগ সদস্য তাকে মনােনীত করলেও, সমস্ত যােগ্যতা থাকার পরও শেষ পর্যন্ত তাকে নেওয়া হয়নি কোনাে একজন বিশেষ ব্যক্তির আপত্তির কারণে। আর সেই আপত্তির কারণ হলাে তিনি মুসলমান!  অসাম্প্রদায়িক ভারতে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতাে প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের সূক্ষ্ম সাম্প্রদায়িক ঘটনায় অত্যন্ত ব্যথিত হন আনােয়ার পাশা। বিতৃষ্ণা জেগেছিল তার মনে, কিছুটা হতােদ্যমও হয়ে পড়েছিলেন। তিনি জানতেন, এটা নিয়ে মামলা ঠুকে দিলে সেই মামলায় তাঁর নিশ্চিত জয় হবে। কিন্তু আনােয়ার পাশা এতটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে মামলা করার মানসিকতাও তার হয়নি। এরকম এক মানসিক অবস্থায় অকস্মাৎ একদিন জানতে পারেন, পূর্ব পাকিস্তানের পাবনাতে এডওয়ার্ড কলেজে বাংলা বিভাগের জন্য শিক্ষক নেওয়া হবে। দরখাস্ত করলেন ওই চাকরির জন্যে এবং নিয়ােগপত্র পেয়ে চলে এলেন পাবনায়।
১৯৫৮ সালে তিনি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে প্রভাষক হিসাবে যােগ দেন। সাম্প্রদায়িক চেতনার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা পাকিস্তানকে তিনি কখনও মন থেকে মানতে পারেননি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানেই তিনি চলে এলেন। মাবাবা, আত্মীয়-স্বজন ও জন্মভূমি ছেড়ে এসে এডওয়ার্ড কলেজে চাকরি নেওয়া সম্পর্কে তিনি ডাবকাইতে বসে ১৯৬০ সালের ৯ জুন ডায়েরিতে লিখেছেন : বাপ-মা যে আমার উপর খুশি নয়, এটা আমার প্রাণে খুবই বাজছে। এদেশের। কোনাে কলেজে চাকরি পেলে তাঁদের খুশি করতে পারতাম। ওখানে (পাবনা) চাকরিটা ভালাে, পরিবেশটা ভালাে নয়  আমার ন্যূনতম দাবি, যে-কোনাে কলেজের একটি চাকরি, এখানে মেটানাে অসম্ভব। এরা বিশ্বাসই করতে পারছে। যে, কোনাে মুসলমান কলেজে বাংলা পড়াতে সক্ষম। দরখাস্ত করে কোনাে কলেজ থেকে এ পর্যন্ত Interview Call পাইনি। .(বানান সংশােধিত) পাবনার কর্মজীবনেও আনােয়ার পাশা খুব স্বস্তি পাননি। এ সম্পর্কে ১৯৬০ সালের ২৬ আগস্ট ডায়েরিতে লিখেছেন : ভারতের মাটিতে আমার পরিচয় মুসলমান বলে আর পাকিস্তানে আমি ঘৃণিত ও অবহেলিত হচ্ছি মুসলমান নই বলে।… যে পরিবেশে এখানে আছি তাতে কেবল মর্যাদা নিয়ে গৌরব করার কিছু নেই। অধ্যাপকরা এদেশে যেন অভিশপ্ত জীব। … সাংস্কৃতিক মান এখানকার অত্যন্ত নিম্নস্তরের, এক কথায় দৈনন্দিন জীবন । এখানে আদৌ সুখকর নয়। তার উপরে আছে যথেষ্ট পরিমাণে মুসলমান নাহতে-পারার লাঞ্ছনা।
কিন্তু এই মানসিক অবস্থার মধ্যেও দমে যাননি আনােয়ার পাশা। শিক্ষকতার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কাজকর্মে নিজেকে যুক্ত করেন তিনি। পাবনার অন্নদা গােবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরি আয়ােজিত রবীন্দ্রজয়ন্তী, রবীন্দ্র প্রয়াণ দিবস, নজরুল জন্মবার্ষিকীসহ নানাবিধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তার অংশগ্রহণ সবার নজরে পড়ে। দুতিনটি অনুষ্ঠানে ভাষণ দিয়েই আনােয়ার পাশা শ্রোতাদের গভীর আস্থা ও শ্রদ্ধা অর্জন। করে নিতে সক্ষম হন। বাংলা সাহিত্যের শিক্ষক ও পণ্ডিত হিসাবে তার সুনাম ও জনপ্রিয়তা দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ল জেলার সর্বত্র। শিক্ষক হিসাবে তার নিষ্ঠা, নিয়মানুবর্তিতা এবং শিক্ষার্থী ছেলেমেয়েদের প্রতি বৈষম্যহীন স্নেহ-প্রীতির কারণে যে  ছাত্রছাত্রীরা সরাসরি তার ক্লাস করত, তাদের মধ্যেও তার জনপ্রিয়তা অল্পেই তুঙ্গে। উঠে গেল। ওই কলেজে ‘হাজার বছরের বাংলা সাহিত্য বিষয়ে একটি অনুষ্ঠানেরও। আয়ােজন করেন তিনি। এছাড়াও পরিচালনা করতেন ‘পাবনা সাহিত্য পরিষদ’ ও ‘সাহিত্য মজলিশ’ নামে দুটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান।  তবে এসব কাজের ফলে শাসকগােষ্ঠীর রােষানলেও পড়লেন আনােয়ার পাশা। রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠান আয়ােজনে উদ্যোগী হওয়ার অপরাধে’ পূর্ব পাকিস্তান। সরকারের স্বরাষ্ট্র বিভাগের নির্দেশে তার পাসপাের্ট ছয় বছরের জন্য স্থগিত রাখা হয়। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলার মানুষের ভালােবাসার টানেই তিনি ১৯৬৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ইমিগ্রেশন সার্টিফিকেট নিয়ে চিরতরে ভারত ছেড়ে ১২ এপ্রিল। পাকিস্তানের নাগরিকত্ব বেছে নেন। কবি শঙ্খ ঘােষের কাছ থেকে জানা গেছে, ভারত ছেড়ে চলে আসার সময় তার সঙ্গে দেখা হলে আনােয়ার পাশা বলেছিলেন,
 
“শঙ্খ, তুমি থাক আমার দেশে, আমি চলে গেলাম তােমার দেশে।” উল্লেখ্য, কবি শঙ্খ ঘােষের জন্য বরিশালের বানারীপাড়ায়, দেশভাগের পর তাদের পরিবার স্থায়ীভাবে কলকাতায় চলে যায়। পূর্ব পাকিস্তানে স্থায়ী হওয়ার পর সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী না হলেও ‘ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সাথে একটা ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে আনােয়ার পাশার। তিনি ন্যাপের সমর্থক বনে যান। পাবনা জীবনের একটি ঘটনায় আনােয়ার পাশার অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চরিত্র অত্যন্ত প্রখরভাবে ফুটে উঠেছিল। ১৯৬৪ সাল। পাবনায় হঠাৎ করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঘটে গেল। কিছুকাল আগে পশ্চিমবঙ্গের মালদহে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রতিশােধ নিতে হামলা করা হলাে পাবনার নিরপরাধ হিন্দুদের ওপর। ৩১ জন মানুষ নির্মমভাবে নিহত হলেন। শত শত নর-নারী হলেন আহত, কয়েকজন নারী হলেন ধর্ষিত। যে পুলিশ দাঙ্গা প্রতিরােধ করবে, তারাই হলাে দাঙ্গাকারীদের বড় সহায়ক। ট্রাকে করে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় সশস্ত্র দুবৃত্তদের আনাগােনা চলছিল পুলিশের নাকের ডগায়। হাজার হাজার বাড়িঘর, ব্যবসা। প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হলাে। দাঙ্গার শুরু সন্ধ্যারাতে, কিন্তু তা চলল রাত ৩টা পর্যন্ত। আতঙ্কে পাবনার জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়ল। পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের হিন্দু ছাত্রাবাসের জনা ত্রিশেক ছাত্র খবরটি শুনে আতঙ্কিত হয়ে ছুটে গেল অধ্যক্ষের বাসভবনে। অনেকক্ষণ ধরে ডাকাডাকি ও দরজা। ধাক্কানাের পর লুঙ্গি পরা অবস্থায় তিনি বেরিয়ে দরজাটা সামান্য ফাক করে রাগত স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন, “কে তােমরা? ছাত্ররা পরিচয় দিয়ে আতঙ্কের কথা বলে তাদের প্রাণে বাঁচানাের আবেদন জানালে তিনি ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বললেন, “দরকার হলে এসপির কাছে যাও। আমার কিছু করার নেই।” হতাশ হয়ে ফিরে এলাে ছাত্ররা।
ইতােমধ্যে একটি রিকশা নিয়ে ছুটে এলেন অধ্যাপক আনােয়ার পাশা।
তিনি ওই আতঙ্কিত ছাত্রদের কাছে সব শুনে কলেজের নাইটগার্ডকে ডাকলেন। নাইটগার্ডের সহযােগিতায় টিচার্স কমনরুমের দরজা খুলে আনােয়ার পাশা ছাত্রদের ওই কক্ষে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে তালা বন্ধ করে দিলেন। ছাত্রদের বললেন, “তােমরা ভেতরে চুপচাপ থাক। কথাবার্তা বলবে না, চিঙ্কার-চেচামেচি কিছুই করবে না। অন্য কেউ ডাকলেও না। আমি বাসায় যাচ্ছি তােমাদের জন্য খাবার-পানি নিয়ে আসি।” তিনি বাসায় গিয়ে তার স্ত্রীকে জনা ত্রিশেক মানুষের জন্য ভাত-তরকারি রান্না করতে বললেন। রান্না শেষ হলে আনােয়ার পাশা দুটি রিকশা ডেকে খাবার, এক হাড়ি পানি ও কয়েকটি গ্লাস সঙ্গে নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে ফিরে এলেন। ছাত্রদের ওগুলাে খেয়ে ঘুমিয়ে যেতে এবং নাইটগার্ডকে পুনরায় দরজায় তালা লাগাতে বললেন। সেই সাথে বললেন, যদি সকালে অবস্থা ভালাে থাকে তাহলে ছাত্ররা যেন। তাদের হােস্টেলে ফিরে যায়। কিন্তু অবস্থা খারাপ থাকলে এই রুমেই থাকতে বলে। তিনি বাসায় চলে গেলেন। সেই হিন্দু ছাত্রদের এভাবেই তিনি বাচিয়ে ছিলেন।
ছােটখাটো আকৃতির এই মানুষটি ছিলেন অতিমাত্রায় রবীন্দ্রভক্ত । আর নিজেও ছিলেন একাধারে কবি, গীতিকার, কথাশিল্পী, প্রাবন্ধিক, সমালােচক ও গবেষক। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই তিনি কবিতা লিখতে শুরু করেন। ১৯৬৫ সালের ৯ জুলাই পাবনায় লেখা ডায়েরিতে লেখেন : কবিতা আমার জীবনের প্রথম প্রিয়া- আমি যার প্রেমে পড়েছিলাম। ছেলেবেলায় ইস্কুলে যেতে রাস্তা বড়াে নির্জন এবং দুপাশে ঘন জঙ্গলে পূর্ণ থাকত। অনেকদিনই ওই পথে একা ইস্কুলে গেছি এবং যেদিনই একা যেতাম জোরে। জোরে আবৃত্তি করতাম। এখনাে সে সব দু-একটি মনে আছে- পাহাড়ের পরে। পাথরের ঘরে / আমার জন্মস্থান, ওই কবিতা এখন পেলে হয়ত পড়তেই ইচ্ছে। করবে না। কিন্তু সে-দিন কী ভালােই যে লাগত। ক্লাসের নতুন বই কেনা হলে। দেখা যেত, মাসখানেক না যেতেই বাংলা পাঠ্যবইয়ের সবকটি কবিতা কষ্ঠস্থ হয়ে গেছে। ইচ্ছে করে করেছি তা নয়, ব্যাপারটা কেমন যেন আপনা থেকেই হয়ে। যেত। কত চরণ তার মনের মধ্যে এখনাে জ্বলজ্বল করছে।
পাশা কলেজে পড়ার সময় কবিতা ও গল্প লিখতেন। রাজশাহী কলেজে বি. এ. শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি লেখেন ‘হাস্নাহেনা’ শিরােনামে একটি রম্যরচনা। তার প্রথম প্রকাশিত বই হলাে কাব্যগ্রন্থ ‘নদী নিঃশেষিত হলে, যা ১৯৬৩ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়। | নিজের নাম নিয়ে এক দোলাচালের ভেতর দিয়ে গেছেন আনােয়ার পাশা। প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের আগে পর্যন্ত প্রথমে ‘আনােয়ার’, পরে মুহম্মদ আনােয়ার’ নামেই লেখা প্রকাশ করেছেন তিনি। ইসলামের ইতিহাস’ শিরােনামে একটি মাদ্রাসাপাঠ্য বই বের হয়েছিল মুহম্মদ আনােয়ার’ নামে। পশ্চিমবঙ্গে মাদ্রাসায় শিক্ষকতাকালে এটি লিখেছিলেন, সম্ভবত ১৯৫৫-৫৬ সালে। পাশা’ নামটি তার পছন্দের ছিল না। তিনি একাধিকবার চেষ্টা করেছেন তার নাম থেকে ‘পাশা’ বাদ দিতে। প্রথম হাই মাদ্রাসা ফাইনাল পরীক্ষার ফরম পূরণ করার সময় ‘পাশা বাদ দিতে চেয়েছিলেন তিনি। শিক্ষকরা তাতে বাধা দিয়েছিলেন। তাই পরীক্ষা পাসের সনদগুলােতে। ‘পাশা”-যুক্ত হয়ে আছে। সাহিত্যক্ষেত্রে ‘পাশা’-বিহীন থাকার চেষ্টা করেছেন তিনি। সে জন্য শুধু ‘আনােয়ার নামে লেখালেখি শুরু করেন। নামের আনােয়ার’ শব্দটি তার খুব প্রিয়। বাঙলা ও বাঙালী নামে এক পত্রিকায় একটি গল্প প্রকাশিত হয়েছিল, তাতে লেখক ছিলেন শুধু আনােয়ার’। বুদ্ধদেব বসুর কবিতা’ পত্রিকায় কবিতা পাঠালে তা মনােনীত হয়, কিন্তু শুধু আনােয়ার নামে তিনি আপত্তি করেন।
 
তার ঠিকানার স্থানে আনােয়ার পাশা ছিল, সেখান থেকে ‘পাশা সংগ্রহ করে তিনি ওই নামে কবিতাটি প্রকাশ করেন। ‘পাশা’র হাত থেকে রেহাই পাবার শেষ চেষ্টা করেছিলেন ভারত ছেড়ে আসার পর। বাংলাদেশে এসে তিনি লিখতেও শুরু করলেন মুহম্মদ আনােয়ার নামে। পূর্ব পাকিস্তানে তার লেখা প্রথম প্রকাশ পায় ১৯৬১ সালে, রাজশাহী থেকে প্রকাশিত জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী ও মুস্তাফা নূরুল ইসলাম সম্পাদিত ত্রৈমাসিক পূর্বমেঘ” পত্রিকায়, ‘মুহম্মদ আনােয়ার’ নামে। এ নামে একাধিক লেখা পাবনা কলেজ ম্যাগাজিনে ও পূর্বমেঘ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু তার এ নামও শেষ পর্যন্ত টেকেনি। ১৯৬৩ সালে তার দুটি বইয়ের ছাপার কাজ শুরু হয়। বই বেরুবে কী নামে? ‘নদী নিঃশেষিত হলে’ বইটির কবিতা নির্বাচন নিয়ে কবিবন্ধু শঙ্খ ঘােষের সঙ্গে আলােচনার সময় তিনি জানতে পারেন, আনােয়ার পাশা’ নামটিই তাদের বেশি পছন্দ, মুহম্মদ আনােয়ার নয়। তাঁর প্রকাশকও ‘আনােয়ার পাশা’ নামটির ব্যবসায়িক সুবিধা দেখতে পেলেন। প্রকাশিত হলাে ‘আনােয়ার পাশা’র ‘নদী নিঃশেষিত হলে। একই সময়ে রবীন্দ্র ছােটগল্প সমীক্ষা ছাপার কাজ চলছিল ঢাকায়। কয়েক মাস পর সেই বইটি প্রকাশিত হলে সেখানেও লেখক হওয়ার। সৌভাগ্য অর্জন করলেন ‘আনােয়ার পাশা’। মুহম্মদ আনােয়ারচিরতরে জনতার ভিড়ে হারিয়ে গেলেন, আর আনােয়ারের সঙ্গে ‘পাশা’র যােগটা স্থায়ী হয়ে গেল।
রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষে ১৯৬১ সালে (বাংলা ১৩৬৮) রবীন্দ্র ছােটগল্প সমীক্ষা’ বইয়ের প্রথম খণ্ড রচনা করেন আনােয়ার পাশা। এতে গল্পগুচ্ছের প্রথম ও দ্বিতীয় খরে গল্পগুলাের আলােচনা ছাড়াও দেশ-কাল এবং প্রকৃতি সম্পর্কেও আলােচনা করেছেন। তিনি। এ বইয়ের সংশােধিত ও সংযােজিত দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে। রবীন্দ্র ছােটগল্প সমীক্ষা (দ্বিতীয় খণ্ড)’ প্রথম প্রকাশ পায় তার মৃত্যুর পরে, ১৯৭৮ সালে। ১৯৬৭ সালে তার তৃতীয় বই ‘সাহিত্যশিল্পী আবুল ফজল প্রকাশিত হয়। তার প্রথম উপন্যাস ‘নীড়-সন্ধানী’ পাবনায় অবস্থানকালে লেখা। ১৯৬৫-৬৬ সালে এটি ঢাকার মাসিক ‘পূবালী’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। বই আকারে ছাপা হয় ১৯৬৮ সালে। দ্বিতীয় উপন্যাস ‘নিযুতি রাতের গাথা’ প্রকাশ পায় ১৯৬৮ সালে। এই বইটি নীড়-সন্ধানী’র পরিপূরক খণ্ড। নীড়-সন্ধানী’ এবং ‘নিমুতি রাতের গাথা’ দুটি উপন্যাসই আত্মজীবনীমূলক। নীড়-সন্ধানী’ উপন্যাসের নায়ক হাসানের চরিত্র-চিত্রণে আনােয়ার পাশা তাঁর নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা ও অভিজ্ঞানই ফুটিয়ে তুলেছেন। এ উপন্যাসের নায়ক সম্পর্কে তিনি এক চিঠিতে লিখেছিলেন : একটি আধুনিক উদার মতাবলম্বী যুবক কোনাে ধর্মের ধার না ধেরে কেবল একজন মুক্ত মানুষ হিসাবে ভারতের মাটি আঁকড়ে বেঁচে থাকতে চেয়েছিলেন
 
কিন্তু কেবল মুসলমানের ঘরে জন্ম এই অপরাধে ভারতে তার স্থান হলাে না- এ  কথাটিই উপন্যাসে আমি দেখাতে চেয়েছি। আমার নায়ক যদি ইসলামী আর্দশে অনুপ্রাণিত হতাে এবং ভারতে তার ওপর নির্যাতন চলত তাহলে সেটা পাঠকের কাছে স্বাভাবিকতার উর্ধ্বে ভারতীয় মানসের কোনাে বিশেষ পরিচয় বহন করতাে না। ওটা হিন্দুস্থান, অতএব ইসলামী আদর্শ ওখানে মার খাবেই- এই কথাই মনে। হতাে। কিন্তু আমি দেখলাম, মুসলিম ঘরের কোনাে যুবক সে যতােই উদারতা। দেখাতে যাক- ভারতে তার নির্যাতন এবং অপমান অবশ্যম্ভাবী। (২৯ মার্চ ১৯৬৫ তারিখে লেখা চিঠির অংশবিশেষ) তাঁর একমাত্র গল্পগ্রন্থ ‘নিরুপায় হরিণী’ প্রকাশিত হয় ১৯৭০ সালে। এর আগে দ্বিতীয় কাব্যসংগ্রহ ‘সমুদ্র শঙ্খলতা উজ্জয়িনী ও অন্যান্য কবিতা’র প্রেসকপি তৈরি করেছিলেন। কিন্তু জীবদ্দশায় বইটি প্রকাশ পায়নি, তাঁর মৃত্যুর পর ১৯৭৪ সালে এটি প্রকাশিত হয়। আনােয়ার পাশা বেশকিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধও রচনা করেছেন। এ ছাড়া মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের সঙ্গে যুগ্ম-সম্পাদনায় ১৯৬৮ সালে প্রকাশ করেন। ‘চর্যাগীতিকা’ এবং ১৯৬৭ সালে ‘বড় চণ্ডীদাসের কাব্য’ (শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের কিছু অংশ)। ‘কালকেতু উপাখ্যান’ (মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর চণ্ডীমঙ্গলের অংশবিশেষ) ও ‘মানসিংহ-ভবানন্দ উপাখ্যান (ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের অন্নদামঙ্গলের অংশবিশেষ) প্রকাশিত হয় ১৯৬৭ সালে ও ১৯৬৯ সালে প্রকাশিত হয় ‘ঈশ্বরগুপ্তের কবিতা-সংগ্রহ। তার তৃতীয় উপন্যাস ‘রাইফেল রােটি আওরাত’ প্রকাশ পায়, তার মৃত্যুর পর ১৯৭৩ সালের মে মাসে একাত্তরের এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে ঢাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকায় বসে লেখা উপন্যাস এটি।
বাঙালিদের প্রতি পাকিস্তানিদের আচরণ, ২৫ মার্চ থেকে শুরু হওয়া গণহত্যা, মৃত্যু আর বুলেটের শহরে অবরুদ্ধ জীবন উঠে এসেছে এ রচনায়। ছােটখাটো কিছু ত্রুটি থেকে গেলেও এই উপন্যাসে প্রকাশিত আনােয়ার পাশার অভিজ্ঞতাকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটি ঐতিহাসিক দলিল বলা যায়।  ‘আনােয়ার পাশা রচনাবলী (৩য় খণ্ড)’ বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়েছে যথাক্রমে ডিসেম্বর ১৯৮১, জুন ১৯৮৩ ও মে ১৯৮৭ সালে। তিন খণ্ডেরই সম্পাদনা করেছেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তার একটি অসমাপ্ত উপন্যাসের নাম “নেতিগর্ভ/হিমগৃহ’ বলে উল্লেখ পাওয়া যায়।  আনােয়ার পাশার জীবন যেমন অসংখ্য চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে একটা সুস্থ-সুন্দর জীবনের সন্ধান, ঠিক তেমনি তার গল্প-উপন্যাসের চরিত্রগুলােও মর্যাদাবান জীবনের সন্ধানী। তিনি মাদ্রাসায় পড়শােনা শুরু করেও মাদ্রাসা ছেড়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যে পড়াশােনা করেছেন। এরপর মর্যাদা আর সম্মানের জন্য জন্মভূমি, আত্মীয়-পরিজন ছেড়ে হয়েছেন পরবাসী। এদেশে এসেও একের পর এক প্রতিকূলতা মােকাবেলা করেছেন। এই অদম্য মনােভাব এবং আশাবাদ তাঁর সাহিত্যে ছড়িয়ে আছে।
এডওয়ার্ড কলেজে অধ্যাপনাকালেই ১৯৬৬ সালের ২২ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার প্রভাষক পদে আবেদন করেন আনােয়ার পাশা। ওই বছর ১ নভেম্বর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী প্রভাষক হিসাবে যােগ দেন। ১৯৬৯ সালের ২৩ জুন, আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে স্থায়ী প্রভাষক হিসাবে নিয়ােগ দেওয়া হয়। এ সময় অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী ছিলেন বাংলা বিভাগের অধ্যক্ষ। এক বছরের মাথায়, ১৯৭০ সালের ১৪ জুলাই, তিনি উন্নীত হন জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদে। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি এ পদেই ছিলেন।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাকালে আনােয়ার পাশা ছাত্রছাত্রীদের শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলেন। তিনি তার শ্রম ও নিষ্ঠা দিয়ে ছাত্রছাত্রীদেরকে সাহিত্যানুরাগী করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি সংস্কৃতি-সংসদ ও ছাত্র সংসদের কাজে আগ্রহ প্রকাশ করতেন, সংস্কৃতি-সংসদের সংকলনের জন্য লিখেছেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে নিয়ে যে শক্তিশালী সগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়েছিল তার অন্যতম ছিলেন আনােয়ার পাশা। আনােয়ার পাশা মুক্তিযােদ্ধাদের উদ্দেশ্যে নিয়মিত বিভিন্ন চিঠি লিখে গেছেন। যার ফলে মুক্তিযােদ্ধারা মুক্তিসংগ্রামে উৎসাহিত হয়েছেন। তিনি মুক্তিযােদ্ধাদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতেন এবং সেই অর্থ মুক্তিযােদ্ধাদের ক্যাম্পে ক্যাম্পে সরবরাহ করতেন। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওয়াকিল আহমদ তার একটি লেখায় স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন, “আনােয়ার পাশার পরামর্শে আমিও দু’দফায় অর্থ প্রদান করি।” ২৫ মার্চের রাতে পাকিস্তানি হানাদারদের তালিকানুসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে হত্যার পর পরই আনােয়ার পাশা দৃঢ়তার সাথে বলেছিলেন, পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক এ. এন. এম. মুনীরউজ্জামান ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপক গােবিন্দচন্দ্র দেবের মতাে এমন দেশপ্রেমিক, গবেষক ও শিক্ষককে পাকসেনারা যখন নির্মমভাবে হত্যা করতে পেরেছে, (তখন) আজ স্পষ্ট হয়ে গেছে বাংলাদেশ স্বাধীন হবেই। মুনীরউজ্জামান এবং জি, সি, দেবের রক্ত কখনই বৃথা যেতে পারে না। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকা থেকে আনােয়ার পাশাকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যায় আলবদর বাহিনী। নির্মম নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করার পর মিরপুরের বধ্যভূমিতে তার লাশ ফেলে দেওয়া হয়। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে অধ্যাপক রাশীদুল হাসান তার পুরাে পরিবারসহ আনােয়ার পাশার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। আলবদর বাহিনী রাশীদুলের পরিচয় জানতে পেরে তাকেও ধরে নিয়ে যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তার লাশ উদ্ধার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়।

সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ-  আলী মো. আবু নাঈম , ফাহিমা কানিজ লাভা