You dont have javascript enabled! Please enable it!
আতিকুর রহমান
পেশায় চিকিৎসক আতিকুর রহমান জন্মেছিলেন ১৯৩১ সালের ১ ফেব্রুয়ারিতে, মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগরের কোলাপাড়ায়। তার। বাবা মীর জুলফিকার আহমেদ এবং মা আমিরুন্নেসা। সাত ভাইবােনের মধ্যে সবার ছােট ছিলেন আতিকুর রহমান। তাঁর ডাক নাম ছিল চুন্ন। মাত্র সাত বছর বয়সে তিনি বাবাকে হারান। শুরু হয় সংসারে টানাপড়েন। তখন থেকেই পড়াশােনার জন্য নির্ভর করতে হয় ভাইয়ের উপর। আর্থিক অনটনের মধ্যে বড় হলেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। আতিকুর ১৯৪৭ সালে কলকাতার বালিগঞ্জ এ, জে, মিত্র ইনস্টিটিউশন থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এন্ট্রান্স পাস করেন। তার ইচ্ছে ছিল কমার্স নিয়ে ইন্টারমিডিয়েট পড়ার। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে অবশেষে ভর্তি হন ঢাকা মিটফোর্ড মেডিকেল স্কুলে এম. এল. এফ. কোর্সে। ১৯৫৫ সালে তিনি এম, এল, এফ, পাস করেন। আতিকুর রহমান কর্মজীবন শুরু করেন ফরিদপুর জেলা বাের্ডের অধীন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার হিসাবে। পারিবারিক প্রয়ােজনে এক পর্যায়ে সরকারি চাকরি ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন এবং ঢাকার নারিন্দায় ৯নং শাহ সাহেব লেনে প্রাইভেট প্র্যাকটিস শুরু করেন। তাছাড়া তিনি পিপলস সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজে খণ্ডকালীন চাকরি করতেন।
ফরিদপুরে চাকরিরত অবস্থায় বেশ কয়েকবার পশ্চিম পাকিস্তানে চাকরির প্রস্তাব পান। কিন্তু প্রিয় মাতৃভূমি ছেড়ে যেতে তার মন সায় দেয়নি। ১৯৭০ সালে মিটফোর্ড মেডিকেল স্কুলে এম, বি, বি, এস, কোর্সে ভর্তি হন। আতিকুর। সংসার চালানাের জন্য পড়াশােনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরি ও প্র্যাকটিস চালিয়ে যান। সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পরও বাসায় ফিরে অসুস্থ স্ত্রীর সেবা করতেন। ঢাকায় নিজের বাসায় অনেক অসহায় মানুষকে আশ্রয় দিতেন। অনেককে তিনি চাকরি। জোগাড় করে দিয়েছেন। একজন সৎ ও পরােপকারী মানুষ হিসাবেই তিনি পরিচিত ছিলেন। মানুষের প্রয়ােজনে সবসময় বাড়িয়ে দিয়েছেন সাহায্যের হাত। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকার যেসব এলাকায় হামলা চালায় পুরান ঢাকা’ বা ঢাকার পুরাতন অঞ্চল তার অন্যতম। প্রাণের ভয়ে অসংখ্য মানুষ ঢাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু ডা, আতিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকাতেই থেকে যান। তিনি কোতােয়ালী ও সূত্রাপুর থানার মুক্তিযােদ্ধাদের ক্যাম্পে গিয়ে আহতদের চিকিৎসা করতেন, টাকা ও ওষুধ দিয়ে সাহায্য করতেন। মার্চের শেষ দিকে আতিকুর রহমান তাদের ৯ নম্বর শাহ সাহেব লেনের বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন। গােপীবাগে তার বড় ভাইয়ের বাসায়। গােপীবাগের বাসায় এক আহত মুক্তিযােদ্ধার অপারেশনও করেছিলেন তিনি। এছাড়া ঔষধপত্র দিয়ে এবং আর্থিকভাবেও মুক্তিযােদ্ধাদের সাহায্য করেন আতিকুর। এসব কারণে তিনি স্বাধীনতাবিরােধীদের আক্রমণের লক্ষ্যে পরিণত হন।
ডা. আতিকের বড় ভাইয়ের বাসার কাজের মেয়ের ছােটবােনের ছিল লিভার সিরােসিস। মেয়েটিকে নিয়ে তার বাবা যখনই আসতেন ডা. আতিকের কাছে, সবসময়ই তিনি মেয়েটির বাবাকে কিছু না কিছু সাহায্য করতেন। ১৯৭১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর, মেয়েটিকে নিয়ে তার বাবা আসেন ডা. আতিকের কাছে। তিনি তাকে রিকশা ভাড়া দিয়ে দেন যাতে মেয়েটিকে রিকশায় করে বাসায় নিয়ে যেতে পারেন। এই ছিল আতিকের জীবনের শেষ রােগী দেখা। ওই দিন রাতেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় ডা. আতিককে। অনেক খুঁজেও পরে আর এই দেশপ্রেমিক মানুষটির কোনাে সন্ধান পাওয়া যায়নি। ১৯৫৫ সালের ২ অক্টোবর জাহান আরা রহমানের সাথে তার বিয়ে হয়েছিল। তাদের সংসারে দুই ছেলে ও এক মেয়ে জন্মায়।

সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ-  আলী মো. আবু নাঈম , ফাহিমা কানিজ লাভা

 
error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!