You dont have javascript enabled! Please enable it!
অমলেন্দু দাক্ষী
অমলেন্দু দাক্ষীর পৈতৃক বাড়ি রাজশাহীতে। তাঁর বাবা পার্বতীচরণ দাক্ষী ছিলেন। রাজশাহী শহরের একজন নামকরা দাঁতের ডাক্তার। বাবার উৎসাহেই অমলেন্দু ডাক্তারি পড়েন। ১৯৫৪ সালে তাদের পরিবার রাজশাহী ছেড়ে পাবনায় চলে আসে। ছাত্রজীবনে প্রগতিশীল বামপন্থি রাজনীতির সাথে জড়িত হন অমলেন্দু দাক্ষী। পাবনায় এসে চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি তিনি রাজনীতিতেও সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তিনি মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি বা ন্যাপের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করলে অনেক রাজনীতিবিদকে গ্রেফতার করা হয়। অমলেন্দু দাক্ষীও গ্রেফতার হয়ে বেশ কিছুদিন রাজশাহী কারাগারে আটক ছিলেন। ১৯৬৪ সালে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সময় অমলেন্দু দাক্ষী দাঙ্গা প্রতিরােধ এবং দাঙ্গায় আক্রান্তদের সহযােগিতা করেছেন। পরের বছর পাক-ভারত যুদ্ধের সময়, ১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তাঁকে আবার গ্রেফতার করা হয়। এবার তিনি প্রায় এক বছর কারাবন্দি ছিলেন। ১৯৬৭ সালে ন্যাপ বিভক্ত হয়ে গেলে তিনি ভাসানীর নেতৃত্বাধীন অংশের সাথে যুক্ত থাকেন।

১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুজ্জোহাকে হত্যা করা হলে ওই দিন পাবনায় যে প্রতিবাদ মিছিল হয়, তাতে শামিল হয়েছিলেন অমলেন্দু। ওই সময়ের প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ রণেশ মৈত্র, আনােয়ারুল হক, প্রসাদ রায়, টিপু বিশ্বাস ও আনসারুল ইসলামের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল। অমলেন্দু দাক্ষী প্রগতিশীল রাজনীতিবিদদের আশ্রয় দিয়ে, অর্থ দিয়ে, বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে সহযােগিতা করেছেন। তার চেম্বার ছিল পাবনা শহরের কেন্দ্রস্থলে, নতুন ব্রিজ সংলগ্ন ট্রাফিক মােড়ে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দল তার পাথরতলার ভাড়া বাসায় হানা দেয়। বাড়ির দেয়াল ভেঙে পাকসেনারা ঘরে ঢুকে মারতে মারতে ডা. দাক্ষীকে তুলে নিয়ে যায়। তার স্ত্রী শােভারাণী দাক্ষী তাকে রক্ষা করতে গেলে পাকসেনারা তাকে লাথি মেরে সরিয়ে দেয়। এরই মধ্যে ধরে আনা হয় পাবনা পৌরসভার চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আমিনউদ্দিনকে। আরও কয়েকজনের সাথে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় পাবনা টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভবনে। সেখানে তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানাে হয়। ইতােমধ্যে সদ্য গঠিত মুক্তিবাহিনীর একটি দল টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভবনে পাকসেনাদের ক্যাম্পে হামলা চালায়। এতে প্রায় ৩০ পাকসেনা নিহত হয়। হামলার মুখে পাকবাহিনী আশ্রয় নেয় পাশের বিসিক শিল্প নগরীতে। তারা সঙ্গে করে বন্দিদেরও নিয়ে যায়। ২৯ মার্চ মুক্তিবাহিনী বিসিক শিল্প নগরীতে আক্রমণ করে। নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে পাকিস্তানি সেনা অফিসার সবাইকে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। তারপর সবার মৃতদেহ এক দড়িতে বেঁধে টেনে-হিচড়ে একটা ট্রেঞ্চের মধ্যে ফেলে দেয়। এখানে শহীদ হন ডা. অমলেন্দু দাক্ষী, আমিনউদ্দিন, সাঈদ তালুকদার, রামেজ পাগলা। গুলি খেয়েও ঘটনাক্রমে বেঁচে যান খালেক তালুকদার। তিনিই পরে এ ঘটনা অন্যদের জানিয়েছেন। শহীদ ডা, অমলেন্দু দাক্ষী এক ছেলে ও দুই মেয়ের বাবা ছিলেন।

সূত্র : শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ-  আলী মো. আবু নাঈম , ফাহিমা কানিজ লাভা

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!