You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.17 | প্রবাসী সরকারের শপথ - সংগ্রামের নোটবুক

১৭ এপ্রিল ১৯৭১ প্রবাসী সরকারের শপথ

১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল ভারতের আগরতলায় এক বৈঠকে ২৮ জন এম পির উপস্থিতিতে সর্বপ্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয় এবং পাকিস্তানি বাহিনীর নিয়ন্ত্রন মুক্ত কুষ্টিয়া জেলার সীমান্তবর্তী মহকুমা শহর চুয়াডাঙা অথবা মেহেরপুর শহর কে বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী ঘোষনা করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। ঐ বৈঠকে ১৪ এপ্রিল অস্থায়ী সরকারের শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
কিন্তু এই গোপন সংবাদ বিদেশী সাংবাদিকরা জেনে ফেলায় দেখা দেয় বিপত্তি। আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্র থেকে এ সংবাদ প্রচারের পর পরই চুয়াডাঙা শহর পাক বাহিনীর টার্গেটে পরিণত হয়। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর জঙ্গি বিমান থেকে চুয়াডাঙার উপর ব্যাপক ভাবে বোমা হামলা চালাতে থাকলে ১৫ এপ্রিল চুয়াডাঙা পাকিস্তানি বাহিনীর নিয়ন্ত্রনে চলে যায়। সে কারণে বাধ্য হয়েই শপথ গ্রহনের তারিখ ১৪ এপ্রিলের পরিবর্তে ১৭ এপ্রিল নির্ধারণ করা হয়।
আর স্থান নির্বাচন করা হয় মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথ তলার আম্রকাননে। এ দিন বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধূ শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে গঠিত সরকারের শপথ গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী হলেন তাজ উদ্দিন আহমেদ। ঐতিহাসিক এই আম্রকাননে দেশ-বিদেশের সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে এক অনাড়ম্বর অথচ মনোঞ্জ অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী সভার সদস্যদেরকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।
ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে অর্থ দপ্তরের মন্ত্রী, এ এইচ এম কামরুজ্জামান কে স্বরাষ্ট্রÑএান ও পুনর্বাসন মন্ত্রী, খন্দকার মোস্তাক আহমদকে পররাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রী এবং এম এ জি ওসমানীকে প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করা হয়। চীপ অফ ষ্টাফ হিসেবে আবদুর রবের নাম ঘোষণা করা হয়।
এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে দিনাজপুর হতে নির্বাচিত গণপরিষদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারী পার্টির চীপ হুইপ অধ্যাপক ইউছুফ আলী বিপলবী সরকার গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। এ সময় প্রায় শতাধিক দেশি বিদেশী সাংবাদিক ও আশে পাশের এলাকার প্রায় হাজার পাঁচেক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। নাতিদীর্ঘ এই অনুষ্ঠানে আনসার ও ইপিআর বাহিনীর দুটি পৃথক প্লাটুনের কাছ থেকে প্রথমে উপ রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম অভিবাদন গ্রহন করেন। সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। এর পর পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দিন আহমেদ কুষ্টিয়া জেলার মেহের পুর মহকুমার বৈদ্যনাথ তলার ভবেরপাড়া গ্রামের নাম পরিবর্তন করে মুজিবনগর নাম করন করেন। গার্ড অব অনারের নেতৃত্বে ছিলেন ঝিনাইদহের তৎকালীন এসডিপি ও মাহবুব উদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানের স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় ছিলেন মেহেরপুর মহকুমার তদানিন্তন এসডিও তৌফিক ই-এলাহী চৌধুরী। সার্বণিক সহযোগিতায় ছিলেন ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের অধ্যাপক শফিকুললাহ। অনুষ্ঠান পরিচালনার সামগ্রিক দায়িত্বে ছিলেন টাংগাইল থেকে নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্য এ্যাডঃ আবদুল মান্নান।