You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.18 | ১৮ এপ্রিল ১৯৭১ ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামের স্মৃতিচারণ - সংগ্রামের নোটবুক

১৮ এপ্রিল ১৯৭১ ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামের স্মৃতিচারণ
কলকাতার বাসায় ফিরে তাজউদ্দিন ভাইকে জিজ্ঞাসা করি কলকাতায় পাকিস্তান মিশনের হোসেন আলীকে আমাদের পক্ষে আনা যায় কিন। ফরিদপুরের আত্মীয় শহিদুল ইসলামের মাধ্যমে হোসেন আলীর সাথে যোগাযোগ করা হল। হোসেন আলী প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করতে রাজী হলেন।
গঙ্গার ধারে একটি হোটেলে দু’জনের সাক্ষাৎ হল। হোসেন আলী আমাদের পক্ষে আসতে রাজী হলেন। মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহনের পরদিন (১৮ই এপ্রিল) স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে আরো একটি স্মরণীয় দিন। এই দিন সকালবেলা কলকাতা পাক মিশনের হোসেন আলীসহ প্রায় সকল কর্মকর্তা বাংলাদেশের পক্ষে আনুগত্য প্রকাশ করেন। সার্কাস এভিনিউতে অবস্থিত পাক দূতাবাসে এত দিন ধরে যেখানে পাকিস্তানের পতাকা উড়তো, সেখানে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়ানো হল। এই ঘটনায় দেশে বিদেশে এক ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। দূতাবাসে সেদিন জনতার ঢল নামে। বিভিন্ন সংগঠন মিছিল করে সার্কাস এভিনিউতে এসে হোসেন আলীকে স্বাগত সম্ভাষন জানায়। ফুলের মালায় মিশনের প্রাঙ্গন ভরে যায়।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী আমাকে প্রেরণ করেন হোসেন আলীকে অভিনন্দন জানাতে। হোসেন আলীর স্ত্রী, দুই কন্যা এবং এক ছেলের সাথে পরিচয় হল। তারা সকলেই স্বাধীনতা যুদ্ধে শরিক হলেন। হোসেন আলীর স্ত্রী খুবই সাহসী মহিলা। এ ব্যাপারে স্বামীকে তিনি প্রচণ্ড সাহস যুগিয়েছেন।
বিদেশী বেতারের সাথে বাংলাদেশের পাক দস্যুদের অত্যাচারের করুণ কাহিনী তিনি বর্ণনা করেন। কান্নাজড়িত তার এই বক্তব্য কলকাতা বেতারে প্রচারিত হয়। এই মহিলার হৃদয়স্পর্শী বক্তব্য যারা শুনেছেন তারাই মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন।
১৮ই এপ্রিলের পূর্ব রাতে বেগম হোসেন আলী ও তার একমাত্র মেয়ে মিলে স্বাধীণ বাংলার পতাকা তৈরি করেন। আমি থাকতে থাকতে বহু লোক এলো হোসেন আলীকে অভিনন্দন জানাতে। বেশীক্ষণ সেখানে আমি অবস্থান করিনি। বহু গণ্যমান্য লোককেও আসতে দেখলাম।
বাংলাদেশের বহু লোক পাক বাহিনীর অত্যাচারে কলকাতায় শরণার্থী হয়েছে। তাদের জন্য সাহায্য প্রয়োজন। ১৯শে এপ্রিল থেকে মিশনে কাপড়, অর্থ ইত্যাদি সাহায্য আসতে থাকে। হোসেন আলী আগেই পাক মিশনের অর্থ ব্যাংক থেকে তুলে রেখেছিলেন। এই অর্থ দিয়ে মিশন পরিচালনা করা হবে।
পাক মিশনের একজন মাত্র কর্মচারী বাংলাদেশের পক্ষে আনুগত্য প্রকাশ করেননি। তিনি তার বাসায় রয়ে গেলেন। মিশনে আসেন না। এই ভদ্রলোকের সাথে কথা বলতে তার বাসায় গেলাম। তিনি আমার পূর্ব পরিচিত। ১৯৬৪ সাল, তখন মোনায়েম খানের রাজত্ব। এই ভদ্রলোক সে সময় পাবনার পুলিশ সুপার ছিলেন। তার নাম আর আই চৌধুরী।

কে ছিলেন এই ‘এম হোসেন আলী’?
কি কি হয়েছিল ১৯৭১ এর আজকের এই দিনে?
.
১৯৭১ সালের ১৮ই এপ্রিল তথা বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহনের পরদিন স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে আরো একটি স্মরণীয় দিন। এই দিন সকালবেলা কলকাতা পাক মিশনের ডেপুটি হাই কমিশনার এম হোসেন আলীসহ প্রায় সকল কর্মকর্তা বাংলাদেশের পক্ষে আনুগত্য প্রকাশ করেন। সার্কাস এভিনিউতে অবস্থিত পাক দূতাবাসে এত দিন ধরে যেখানে পাকিস্তানের পতাকা উড়তো, সেখানে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়ানো হল। এই ঘটনায় দেশে বিদেশে এক ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। দূতাবাসে সেদিন জনতার ঢল নামে। বিভিন্ন সংগঠন মিছিল করে সার্কাস এভিনিউতে এসে হোসেন আলীকে স্বাগত সম্ভাষন জানায়।
.
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলামকে প্রেরণ করেন হোসেন আলীকে অভিনন্দন জানাতে। হোসেন আলীর স্ত্রী, দুই কন্যা এবং এক ছেলে, সকলেই স্বাধীনতা যুদ্ধে শরিক হন। জানা যায়, হোসেন আলীর স্ত্রী খুবই সাহসী মহিলা ছিলেন। তিনি তার স্বামীকে এ ব্যাপারে প্রচণ্ড সাহস যুগিয়েছেন।
.
বিদেশী বেতারের সাথে বাংলাদেশের পাক দস্যুদের অত্যাচারের করুণ কাহিনীও তিনি বর্ণনা করেন। কান্নাজড়িত তার এই বক্তব্য কলকাতা বেতারে প্রচারিত হয়। এই মহিলার হৃদয়স্পর্শী বক্তব্য তখন যারা শুনেছেন তারাই মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন।
.
বাংলাদেশের বহু লোক ততদিনে পাক বাহিনীর অত্যাচারে কলকাতায় শরণার্থী হয়েছে। তাদের জন্য তখন সাহায্য প্রয়োজন ছিল। যদিও, ১৯শে এপ্রিল থেকে মিশনে কাপড়, অর্থ ইত্যাদি সাহায্য আসতে শুরু করে, কিন্তু হোসেন আলী আগেই পাক মিশনের যে অর্থ ব্যাংক থেকে তুলে রেখেছিলেন, সেই অর্থ দিয়ে মিশন পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করা হয়।
.
তার মানে আজ, ১৮ই এপ্রিল বিদেশের কোন মাটিতে প্রথম আমাদের মানচিত্র খচিত লাল-সবুজের পতাকা উত্তোলিত হয়।