তাজউদ্দীন স্থানটির নামকরণ করলেন মুজিব নগর:
১৯৭১ এর ১৭ এপ্রিল। সকাল ন’টা। অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও অন্যান্যদের নিয়ে বৈদ্যনাথতলায় মঞ্চে এলেন। আশেপাশের গ্রাম থেকে চেয়ার আনা হয়েছে। সংগৃহীত চেয়ারগুলোর একটাও পূর্নাঙ্গ নয়। কোনটার হাতল নেই, কোনটার বা পা নেই। পাহারাদের জন্য নিয়োজিত আনসারদের তখনো রান্না হচ্ছিলো। ক্যাপ্টেন মাহবুব আর জনাব তওফিক এলাহী চৌধুরী তখন অনুষ্ঠানসূচী প্রণয়নে ব্যস্ত।
ক্যাপ্টেন মাহবুব তাদের নিয়ে গার্ড অব অনার দিলেন অস্থায়ী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতিকে। কথা ছিলো মেজর ওসমান পরিচালনা করবেন গার্ড অব অনার অনুষ্ঠান কিন্তু তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে তখন শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে লিপ্ত। ফলে যুদ্ধক্ষেত্রে থেকে ফিরতে তার বিলম্ব হলো। প্রায় হাজার দুই লোক এসেছিলো অনুষ্ঠানে দৰ্শক হিসেবে।
প্রচুর বিদেশী সাংবাদিক, ফটোগ্রাফার ও টিভি ক্যামেরাম্যান এসেছেন। বেলা ১১টা নাগাদ বহু প্ৰতীক্ষিত অনুষ্ঠান শুরু হলো।
একটা জীপে করে জনাব তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কর্নেল ওসমানী ও অন্যান্য কয়েকজনকে নিয়ে মঞ্চের তোরণের কাছে এলেন। গার্ড অব অনার ও জাতীয় সঙ্গীতের পর নেতৃবৃন্দ মঞ্চে বসলেন। গগনবিদারী শ্লোগান বিপুল করতালির মাঝে নেতৃবৃন্দ মঞ্চে বসলেন। গগনবিদারী শ্লোগান বিপুল করতালি আর উল্লাসের মাঝে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বাধীনতা সনদটি পাঠ করলেন আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারী পার্টির চীফ হুইপ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউসুফ আলী।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন আহমদ স্বাধীনতা সনদের স্বপক্ষে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এই সভায়ই কৰ্ণেল আতাউল গণি ওসমানীকে (বর্তমানে জেনারেল) মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। অন্যান্য মন্ত্রীরা ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী খোন্দকার মুশতাক আহমদ, মন্ত্রী পরিষদের সদস্য জনাব এম, মনসুর আলী ও জনাব এ,এইচ, এম, কামরুজ্জামান কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমাধীন ভবেরপাড়া গ্রাম সেই গ্রামের বৈদ্যনাথতলায় এক ছায়াঘেরা আম্রকাননে অনুষ্ঠিত এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন স্থানের নামকরণ করলেন মুজিব নগর।