You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকা : শুক্রবার ১৯শে মাঘ, ১৩৭৯ ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩

প্রতিরোধ গড়তে হবে

জাতীয় শ্রমিক লীগের ডাকে মুজিববাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত অন্যান্য সংগঠনের সমর্থনে গত পরশুদিন সারা দেশে শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালিত হয়েছে। ঢাকা সহ দেশের অন্যান্য জায়গায় সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতীয় শ্রমিক লীগ পূর্বেহ্নেই ঘোষণা করেছিল-বঙ্গবন্ধুর মহান ভাবমূর্তি বিনষ্টের ষড়যন্ত্র, গুপ্তহত্যা, রাহাজানি ও সন্ত্রাস সৃষ্টির প্রতিবাদে তাদের এ হরতাল। গত পরশুদিন ঢাকায় ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে জাতীয় শ্রমিক লীগের আয়োজনে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বিভিন্ন বক্তাদের বক্তব্যেই একটি বিষয় অত্যান্ত অস্পষ্ট হয়ে উঠছে- তহলো-দেশের সাধারণ নির্বাচন সমাগত এবং এই নির্বাচনকে বানচাল করার ষড়যন্ত্রে বিভিন্ন মহল তৎপর হয়ে উঠেছে। নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় জেনেই তথাকথিত বিরোধী দলগুলো অশুভ পাঁয়তারা চালাচ্ছে। যা কিনা প্রকারাস্তরে নির্বাচন বানচালের দিকে এগিয়ে নিচ্ছে। দেশে দুষ্কৃতিকারীদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। খুন জখম গুপ্তহত্যা চালিয়ে এরা সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার জন্য বিভিন্ন কারসাজি চালিয়ে যাচ্ছে। বক্তাগণ তাদের বক্তব্যে সমাজ জীবনের প্রতিটি স্তর থেকে দুষ্কৃতিকারীদের উচ্ছেদ করার জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন। স্বাধীনতার শত্রুরা আজও সমাজ দেহ হতে মুছে যায়নি। রাজাকার, আলবদরদের ষড়যন্ত্র আজও চলছে। তথাকথিত মুসলিম লীগ জামাতের সন্ত্রাসদের আজও তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এরা দেশের শান্তি ও শৃঙ্খলা বিরুদ্ধে হুমকি প্রদর্শন করছে। গুপ্তহত্যা, রাহাজানি প্রভৃতির দ্বারা সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন করে তোলার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এরা। তথাকথিত বিপ্লবীরাও আজ হাত মিলিয়েছে সেই সকল অবলুপ্ত সংগঠনগুলোর কর্মীদের সাথে। এবং একটা পরিকল্পিত উপায়ে এই সকল স্বাধীনতার শত্রুরা সঙ্ঘবদ্ধ হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু ও তার আদর্শকে হের প্রতি পত্র করার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। আগামী নির্বাচনকে উপলক্ষ করে এরা সবচেয়ে বেশি তৎপর হবে বলে সন্দেহ পোষণ করা যায়। স্বাধীনতার শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান সেদিনের পল্টনের জনসভা করেছে তাকে বাস্তবায়িত করায় শান্তিপ্রিয় দেশবাসীর একমাত্র কাজ। গণতন্ত্রকামী সংগঠনগুলোর সামনে সমাজবিরোধীদের কারসাজি আজ একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা যেকোন মূল্যেই জাতিকে করতে হবে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার অন্যতম প্রধান সোপান হলো আগামী নির্বাচন। এই নির্বাচনের সংগ্রামের যদি মুজিববাদী সংগঠনগুলোর জয়লাভ হয় তাহলেই অত্যন্ত সহজ উপায় সমাজদেহ থেকে সমাজবিরোধী, দুষ্কৃতিকারী ও সন্ত্রাসীদের উচ্ছেদ করা যাবে। অন্যদিকে এখন থেকেই সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সাংগঠনিক তৎপরতা ছাড়া প্রতিপক্ষকে পরাহত করা সম্ভব হয় না। পল্টন জনসভায় নেত্রী নেতৃবৃন্দের বক্তব্যে প্রতিপক্ষ সহ সকল প্রকার সামাজিক ও স্বাধীনতার শত্রুদের বিরুদ্ধে জোর প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রমূর্ত আহ্বানই সোচ্চার হয়ে উঠেছে।

 

অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বৈদেশিক সহযোগিতা

বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মিঃ জে বি স্নাপ এখন ঢাকায়। ইতিমধ্যে তিনি বঙ্গবন্ধু এবং প্ল্যানিং কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের সাধারণ অর্থনৈতিক অবস্থা এবং এর উন্নয়নের জন্য গৃহীত প্রচেষ্টা সমূহের সম্বন্ধে তাকে ওরা কেবহাল করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আধ ঘন্টা ব্যাপী এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন ,স্বাধীনতা-উত্তরকালে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে বাংলাদেশ অত্যন্ত স্বল্প সময়ে প্রশংসনীয় অগ্রগতি সাধন করেছে।
বিগত স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশের অর্থনীতি যে ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল তার নজির বিরল। অর্থনীতির এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে পাকিস্তানের ওপর নয় ঔপনিবেশিক শক্তি আঘাত আনেনি। এছাড়া রয়েছে বিগত পঁচিশ বৎসরের অর্থনৈতিক শোষণের বিষফল। এদেশে তদানীস্তন আমলে অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে তোলারও কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি স্বাধীনতা-উত্তরকালে তাই সমস্যার নানা পাহাড় সম্মুখে এসে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ সরকারের। বাংলাদেশ তাই যুদ্ধো-ত্তরকালীন পুর্ণগঠনে নয়া, নয়া অগ্রযাত্রার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হচ্ছে আমাদেরই। উন্নয়নশীল দেশসমূহে তাদের অগ্রযাত্রার প্রয়োজন রয়েছে বৈদেশিক ঋণ ও অর্থসাহায্যের। বিশ্ব ব্যাংক সে প্রয়োজনকে সামনে রেখেই গঠিত। বাংলাদেশ অগ্রযাত্রা তাই তাদের দায়-দায়িত্ব কে তারা এড়িয়ে যেতে পারে না। ইতিমধ্যে তারা বাংলাদেশকে পাঁচ কোটি ডলার ঋণ দানের কথা ঘোষণা করেছে। সফররত সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট স্বয়ং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে প্রয়োজনানুসারে আরো ঋণদানের আশ্বাস দিয়েছেন। বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যাংকের একটি সদস্য রাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক ঋণদানকারী সংস্থা সমূহ এবং বৈদেশিক ঋণের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব বক্তব্য বিভিন্ন সময় অত্যন্ত সুস্পষ্ট এবং স্বার্থহীন ভাষায় প্রকাশ করেছেন। কোন শর্তযুক্ত ঋণ সে যে কোনো মহলের নিকট থেকেই আসুক না কেন তা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবেনা। ঋণ গ্রহণের উপরে আমাদের পছন্দ-অপছন্দ নিশ্চয়ই অগ্রাধিকার পাবে। আমরাই নির্ধারণ করব বিদেশ থেকে প্রাপ্ত ঋণ কোন খাতে ব্যবহার করা হবে। বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি গঠনের প্রয়াসী। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই সরকারি খাতে বিনিয়োগের হার বাড়বে। পুঁজিবাদী রাষ্ট্র সমূহের ঋণদানের উপর যে সন্দেহ-সংশয় উন্নয়নশীল রাষ্ট্রসমূহের রয়েছে তা হলো তারা বেসরকারি পুঁজিতে লগ্নির জন্যই অধিকতর আগ্রহী। জাতীয় সরকারকে তাই পুঁজিবাদী রাষ্ট্র সমূহ থেকে ঋণ গ্রহণের ব্যাপারে বিশেষ সর্তকতা অবলম্বন করতে হয়।

বাংলাদেশ সরকার সে সম্বন্ধে সজাগ রয়েছেন। অতীত পদক্ষেপসমূহে তার ভুরি ভুরি দৃষ্টান্ত মেলে।এই সেদিনও অন্যতম উন্নত পুঁজিবাদী রাষ্ট্র পশ্চিম জার্মানির সঙ্গে আমাদের ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তি শুধু শর্তহীন ই নয় বরং সুদের হারও কল্পনাতীত ভাবে স্বল্প। শতকরা মাত্র পচাত্তর পয়সা হারে ঋণ দানের দৃষ্টান্ত সত্যিই বিরল। আমরা আমাদের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এবং অগ্রযাত্রায় তাই বিদেশি ঋণ কে স্বাগত জানাই। কারণ অর্থনৈতিক ভিত্তি নির্মাণে এর প্রয়োজনীয় তা অনস্বীকার্য। স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে জাতীয় আদর্শের অনুকূলে যেকোনো সহযোগিতাকে আমরা অভিনন্দন জানাবো। আগামী পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংস্থা সমূহ এবং বৈদেশিক রাষ্ট্র উদার মনোভাব নিয়ে আমাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসবেন বলে আমরা আশা করি।

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক
পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!