২ বৈশাখ ১৩৭৮ শুক্রবার ১৬ এপ্রিল ১৯৭১
পাকিস্তানীদের দখলেঃ
পাঁচ গড় দখলের মধ্যে দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী দিনাজপুর জেলার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। জনপদের পর জনপদ অগ্নিসংযোগ করে, হুত্যা, ধর্ষণ লুটপাট চালায়। প্রচণ্ড লড়াইয়ের পর মুক্তিসেনারা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেলে পাকবাহিনী কুষ্টিয়া ও লাকসামের দখলও নিয়ে নেয়।
শান্তি কমিটিঃ
এদিকে কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হয়। আরও শক্তিশালী হয়ে যায় পাকিস্তানী শাসক। নূরুল আমীনের নেতৃত্বে শান্তি কমিটির নেতৃত্ব গভর্নর জেনারেল টিক্কা খানের সাথে দেখা করে।
মুক্তিবাহিনীঃ
তবে কিছু যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীও জয়লাভ করে। কুমিল্লার ত্রিপুরা সীমান্ত এলাকায় মুক্তিবাহিনী পাক বাহিনীর হামলা প্রতিহত করে। কুষ্টিয়, চুয়াডাঙ্গা, বেনাপোল ও কসরা সীমান্তে সারাদিন ধরে মুক্তি বাহিনী ও পাকসেনাদের মধ্যে সংঘর্ষ চলে। ঢাকায় কার্ফিউ ছিলো। তার মেয়াদ সকাল ৫ টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত শিথিল করা হয়। এদিকে সামরিক কর্তৃপক্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ও কর্মচারীদের অবিলম্বে কাজে যোগদান নির্দেশ দেন। রাজশাহীর সারদায় প্রতিরোধ বাহিনীর সাথে পাকবাহিনীর প্রচণ্ড লড়াই হয়।
কোলকাতাঃ
গভীর রাতে কলকাতা প্রেসক্লাব থেকে সকল সাংবাদিক বিপ্লবী বাংলাদেশ সরকার সদস্যদের সাথে সাক্ষাৎকারের জন্য যাত্রা করে। এর আগে চুয়াডাঙ্গার বিপ্লবী সরকার গঠন ও শপথ গ্রহণের কথা ছিলো। কিন্তু ডাঃ আসাবুল হক এম এন এ বিদেশী সাংবাদিকদের কাছে একথা ফাঁস করে দিলে পাকবাহিনী চুয়াডাঙ্গা দখল করে নেন। সেজন্য বিপ্লবী বাংলাদেশে সরকারের মন্ত্রীসভা শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের স্থান সম্বন্ধে গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়।
এদিকে, আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন শরণার্থীদের পরিস্থিতি প্রচার করা হয়। পাক বাহিনী নারকীয় লোমহর্ষক গণহত্যার বিবরণ সাড়া বিশ্বের গণ মাধ্যমে প্রচার হতে থাকে।
বিদেশী পত্রিকাঃ
১৬ এপ্রিল শুক্রবার ব্রিটেনের প্রভাবশালী সাপ্তাহিক পত্রিকা নিউস্টেটসম্যন এর প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত “দি ব্লাড অব বাংলাদেশ” শীর্ষক সম্পাদকীয় ছাপায়।
সিনেটরদের অবস্থানঃ
সিনেটার এডওয়ার্ড মাস্কী ১৬ এপ্রিল তারিখে ওয়াশিংটনে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক পাকিস্তানকে সামরিক সাহায্য দান অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
ব্রিটেনঃ
ব্রিটেনের বামপন্থী রাজনৈতিক দল দি সোস্যালিষ্ট লেবার লীগ এর উদ্যোগে পূর্ব লণ্ডনের টয়েন-বী হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সমর্থনে একটি বিরাট জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে সমর্থন জানিয়ে পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনী প্রত্যাহার ও শেখ মুজিবের মুক্তি দাবী করা হয়।