জিয়ার রাজত্ব | জিয়ার সংবাদ সম্মেলন | বিএনপি কবে কিভাবে গঠনের ঘোষণা আসে?
৪৯.সময়ও এগিয়ে চললাে ৩০শে সেপ্টেম্বর ও ২রা অক্টোবর বগুড়া ও ঢাকায় ব্যর্থ সামরিক অভ্যুথান হলো। অভ্যুথানের দু‘তিন দিন পর প্রেসিডেন্ট দেশী ও বিদেশী এক সাংবাদিক সম্মেলনে ঘােষণা করলেন যে, ভারত হতে যে সমস্ত সশস্ত্র দুস্কৃতিকারী এসেছে, যারা সীমান্তে হামলা ও ফারাক্কায় ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহার বিষয়ে টু শব্দ উচ্চারণ করে না তাদের উস্কানীতেই ব্যর্থ অভ্যুথান ঘটে। শুরু হলাে ধামকি, হুংকার। কিন্তু তদন্তে প্রমাণিত হলাে চক্রান্ত ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ জড়িত নেই। ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক বলয়ে প্রেসিডেন্ট কার্টার বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সােচ্ছার হলেন। ১৯৭৭ এর শেষে এবং ৭৮ এর প্রথমে ইউরােপীয় পত্র পত্রিকায় বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘন সম্পর্কে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশিত হতে থাকে। বলা হয়, বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠত না হলে বৈদেশিক সাহায্য কমে যাবে। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক দলগুলাে এতদিন বিভিন্ন ইস্যুর ভিত্তিতে আওয়ামী বাকশাল রুখার জন্য মেজর জেনারেল জিয়াকে অব্যাহত ও অকুণ্ঠ সমর্থন দিচ্ছিল তারাও নির্বাচন ও প্রকাশ্য রাজনীতির দাবী উত্থাপন করে। এই সমস্ত অব্যাহত দাবী ও ঘটনার পরিপেক্ষিতে ১৯৭৭ সালেন ১৫ই ডিসেম্বর রাতে রেডিও ও টেলিভিশনে ভাষণে জিয়াউর রহমান একটি ব্যাপক ভিত্তিক রাজনৈতিক ফ্রন্ট’ গঠনের আহবান জানান, তখনও পার্লামেন্টটারী সরকারের ওয়াদা হতে জিয়াউর রহমান পিছিয়ে যাননি। তখনও ৪র্থ সংশােধনী রেখে আওয়ামী-বাকশালীদের বিরুদ্ধে প্রচন্ডভাবে সরকারী অপপ্রচার চলতে থাকে। প্রচারে প্রতীয়মান হলাে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর ৪র্থ সংশােধনী বাতিল হবে। দেশে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি সরকার গঠিত হলে ‘সার্বভৌম পার্লামেন্টের ক্ষমতা কি হবে বলা হলােনা। প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও প্রেসিডেন্ট জিয়া নীরব থাকলেন। একাধারে প্রেসিডেন্ট, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক, প্রধান সেনাপতি পদ আকড়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট হয়ে শসনতন্ত্র সংরক্ষণ ও হেফাজত এর শপথ গ্রহণ করলেন। কিন্তু কয় বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট হলেন তাও গােপন করা হলাে।
৫০. নির্বাচন উত্তর সাংবাদিক সম্মেলনে কত দিনের জন্য প্রেসিডেন্ট হলেন এই প্রশ্নের উত্তরে জিয়া পাল্টা সাংবাদিককে প্রশ্ন করেন, আপনি কত দিনের মনে করেন? রাজনীতিতে এলে সেনাবাহিনী কি ছাড়বেন? এই সম্পর্কে বলা হলাে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এখন আর সেনাবাহিনীর প্রধান নন, এখন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান নন, তিনি সশস্ত্র বাহিনী সমূহের সুপ্রীম কমান্ডার। জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর পােশাকেই বলতে থাকেন পার্লামেন্ট হবে ‘সার্বভৌম‘। কেমন ‘সার্বভৌম?” সরকার পদ্ধতির রূপরেখা নির্ধারণ করতে পারবে কি? যদি আগমী ‘৭৯-এর নির্বাচন সংখ্যাগুরু এমপিরা জাতীয় সংসদে সংসদীয় সরকারের স্বপক্ষে প্রস্তাব পাশ করে তাহলে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জিয়ার অবস্থা কি দাঁড়াবে? তিনি কি পার্লামেন্টারী সরকারের অধীনে শাসনতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট হবেন? ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন?
এই প্রহসনের অর্থ কি?
৫১. জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাক্কালে জনগণের কাছে ওয়াদা করেছিলেন যে, দেশ থেকে সামরিক আইন তুলে নেবেন রাজনৈতিক দলবিধি প্রত্যাহার করা হবে এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম সর্বপ্রকার নিয়ন্ত্রন মুক্ত হবে। এখন স্পষ্টতঃ মার্শাল ল উঠছে না,প্রেসিডেন্ট জিয়া নির্বাচনী ওয়াদা ভংগ করে চলেছেন। বাংলাদেশকে ‘পুলিশী স্টেট‘-এ পরিণত হযেছে। বাক, স্বাধীনতা, নিয়মতান্ত্রিক বিরােধীতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা সহ মৌলিক অধিকার হরণ করে জিয়াউর রহমান গণতন্ত্র ধ্বংস করে দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগিয়ে চলছেন।
পার্লামেন্ট নির্বাচন ও কালো টাকা আর ষড়যন্ত্র:
৫২. জিয়াউর রহমানের নিকট, জীবন মরণ সমস্যা ছিলাে জাতীয় সংসদ নির্বাচন।১৯৭৮ সনের ৮ই নভেম্বর জিয়াউর রহমান টেলিভিশন রেডিওতে ঘােষণা দিলেন ১৯৭৯ সনের ২৭শে জানুয়ারী দেশে পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। টিভি বেতার ঘােষণায় তিনি আরাে বললেন, পার্লামেন্ট হবে ‘সার্বভৌম‘ এবং পার্লামেন্ট নির্বাচনের পরপরই মার্শাল ‘ল উঠিয়ে নেয়া হবে। নির্বাচন হবে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ। তিনি প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশ গ্রহণে অনুরােধ জানান। পার্লামেন্ট নির্বাচন ঘােষণার পর বিরােধী দল হতে প্রতিক্রিয়া জানানাে হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১১ দফা দাবী উত্থাপন করে। দাবীগুলাের মধ্যে ছিল নির্বাচনের পূর্বেই সামরিক আইন প্রত্যাহার, সামরিক বাহিনী হতে জিয়াউর রহমানের পদত্যাগ, রাজবন্দীদের মুক্তি, সামরিক আইনে সাজাপ্রাপ্ত সকল বন্দীদের উচ্চতর আদালতে আপিলের সুযােগ প্রদান, ৪র্থ সংশােধনী বাতিল করে ১৯৭২ সালের শাসনতন্ত্রের পুনরুজ্জীবন, বিশেষ ক্ষমতা আইন সহ সকল কালাকানুন বাতিল ছিলাে অন্যতম। বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, জাতীয় জনতা পার্টি, জাসদ, গণআজাদী লীগ, ডি, এল, ন্যাপ (নাসের) জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট, ইউ পি পি দলগুলাে নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসেবে প্রায় একই রকম দাবী উথাপন করে। আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে ১০ দল নির্বাচন সংক্রান্ত দাবীর সঙ্গে নির্বাচন পিছানাের দাবীও জুড়ে দেয়। মুসলিম লীগ এসব দাবীর সঙ্গে পৃথক নির্বাচনের দফাও নির্বাচনে অংশ গ্রহণের পূর্বশর্ত হিসেবে জুড়ে দেয়। মুসলিম লীগ নেতারা বায়তুল মােকাররমে জনসভা করে ঘােষণা করে ১৬ই ডিসেম্বরের মধ্যে এসব দাবী মানা না হলে উদ্ভূত গুরুতর পরিস্থিতির জন্য মুসলিম লীগ দায়ী থাকবে না।৩৭ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মুসলিম লীগের হুশিয়ারীতে কর্ণপাত না করে মুসলিমলীগ প্রধান খান, আবদুস সুবুর খান এর সঙ্গে গােপনে পরামর্শ করলেন। সবুর খানের মুসলিম লীগ নির্বাচনে যাওয়ার ঘােষণা দিলাে। সিপিবি, দীর্ঘ কয়েকদিন নির্বাচনে অংশগ্রহণ সম্পর্কে আলােচনা করে এবং কোনরূপ শর্ত ছাড়াই নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অবশ্য পূর্ব কথা ছিলাে আওয়ামী লীগের সাথে কথাবার্তা বলে নির্বাচন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু তা না করে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে গােপনে সলাপরামর্শ করে তারা শর্তহীনভাবে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঘােষণা করে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরপরই ন্যাপ প্রধান অধ্যাপক মােজাফফর আহমদ জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা সমর্থন করেন। সে জন্য ন্যাপের পক্ষে শর্তহীনভাবে নির্বাচন যাওয়াই স্বাভাবিক।
গণ রায়ের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতাঃ
৫৩. ‘৭৮-এর ৩রা জুন নির্বাচনের পর মেজর জেনারেল জিয়া প্রেসিডেন্ট পদে শক্ত। হয়ে বসলেন। ৭৬-৭৭ সন পর্যন্ত কয়েকটি সামরিক অভ্যুথান নির্মমহাতে দমন করেছেন। এখন তিনি ‘সৈনিক’ হতে ‘রাজনৈতিক‘ হওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে এলেন। চীনপন্থী গ্রুপ, স্বাধীনতা বিরােধী দল, ব্যক্তি, সামরিক-বেসামরিক আমলাদের নিয়ে গঠিত জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টকে একটি রাজনৈতিক দলে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে জিয়াউর রহমান অগ্রসর হলেন। জুন মাস হতেই জিয়া ও তার সঙ্গীরা নতুন একটি দল গঠনের প্রকাশ্য তৎপরতা চালাতে লাগলেন। সামরিক বাহিনীর পৃষ্ঠপােষকতায় নতুন দল গঠনের প্রক্রিয়া দেশব্যাপী চালু হল। দল গঠনে প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমান বললেন “জাতীয় ঐক্যের অভাব, বিশেষতঃ দেশপ্রেমিক শক্তি ও গােষ্ঠীর মধ্যে সমঝােতা ও মৌলিক ঐক্যবােধের অভাব বাংলাদেশের মত আপাতঃ দারিদ্র অথচ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রকে সহজেই বৈদেশিক আধিপত্যবাদ ও আভ্যন্তরীণ বিধ্বংসী প্রক্রিয়ার শিকারে পরিণত করতে পারে।”৩৯ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠনের কথা ঘােষণা করেন এবং দলের আহবায়ক হন। ২৬শে সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের মুসলিম ইনস্টিটিউটের এক জনসভায় প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অবঃ) জিয়াউর রহমান বলেন, “আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মাধ্যমে বৃহত্তর ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছি এবং এ কারণে আমি জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট ভেঙে দেবার কথা ঘােষণা করছি।‘ তিনি বলেন, “আমি আশা করি ফ্রন্টের অঙ্গদলগুলাে এই ঘােষণা মেনে নেবে।” জিয়াউর রহমান জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টকে শুধু সঙ্গীণবিদ্ধ করেই ক্ষান্ত হলেন না, বরং ফ্রন্টের মাধ্যমে জনগণকে দেয়া নির্বাচনী ওয়াদাকে বুটের তলায় চেপে ধরলেন। জিয়ার ঘােষণা ছিল অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী; জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট জিয়ার ব্যক্তিগত দল বা সম্পত্তি ছিলাে না। ৬টি দল নিয়ে গঠিত ১২ সদস্যের স্টিয়ারিং কমিটি দ্বারা ঐক্যের খাতিরে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে দলনিরপেক্ষ লােক হিসেবে ফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও প্রেসিডেন্ট পদে মনােনয়ন দিয়েছিলাে। ফ্রন্ট থাকা না থাকার ব্যাপারে তার একক সিদ্ধান্ত নেয়ার কোন অধিকারই ছিলাে না। স্বৈরাচারী ডিক্টেটর হিসেবে জিয়া ফ্রন্ট বিলুপ্ত করে নতুন দল গঠন করার ঘােষণা দেন। জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের প্রার্থী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভের পর, প্রেসিডেন্ট জিয়ার নিকট ৭৭ সনের হাঁ/না ভােটে দেয়। সেখানে ১৯ দফার অস্তিত্ব থাকার কথা ছিলাে, কিন্তু প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য ১৯ দফাকে বলি দিয়ে তিনি ফ্রন্ট করেন ১৩ দফার ভিত্তিতে। ১৩ দফার ৪ নম্বর দফার অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল সরকার পদ্ধতি, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি ইত্যাদি পরবর্তী পার্লামেন্ট নির্ধারণ করবে। কিন্তু জাগদল, ন্যাপ (মশিউর) ও মুসলিম লীগ নিয়ে গঠন করলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি।
৫৪. ১৯৭৮ সনের আগস্টে দলের পক্ষে ডাঃ এ. কিউ. এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী প্রকাশিত “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ঘােষণাপত্র শীর্ষক পুস্তিকার ৭ নম্বর দফায় বলা হলাে “জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখার জন্য, সামাজিক অনাচার ও অসমতা দূর করার জন্য, দ্রুত সার্বিক জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থক প্রয়াস চালানাের জন্য যে স্থিতিশীল ও নির্ঘন্ধ জাতীয় নেতৃত্বের প্রয়ােজন তা দেবার ক্ষমতা রয়েছে কেবল এমন এক প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির সরকারের, যেখানে রাষ্ট্রপতি নিজে সকল প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের প্রত্যক্ষ ভােটে নির্বাচিত। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দল, জনগণ সমর্থিত, অবিসংবাদিত, স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক নেতৃত্বে বিশ্বাস করে। সেই জন্য আমাদের দল একাধিক রাজনৈতিক দলীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে জনগণ নির্বাচিত এবং সক্রিয়ভাবে গণসমর্থিত প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির সরকারে বিশ্বাস করে।” অর্থাৎ পার্লামেন্টকে সরকার পদ্ধতি ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের যে পদ্ধতি নির্ধারণের ক্ষমতা জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে দেয়া হয়েছিল, তা সরাসরি অস্বীকার করা হলাে। জিয়াউর রহমানের নিকট এসব দফার কোন মূল্যই ছিল না। তার একমাত্র লক্ষ্য ছিল ক্ষমতা দখল, ক্ষমতার পথ নিষ্কন্টক করা এবং ক্ষমতায় টিকে থাকা। সেজন্য ১৯৭৭ সনে হাঁ/না ভােটের সময় জনগণের রায় চেয়েছিলেন ১৯ দফা দিয়ে। ৭৮ সনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ১৯ দফা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন ১৩ দফা দিয়ে। ১৩ দফায় জনগণকে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের পরপরই তা ছুঁড়ে ফেলা হলাে। পুনরায় ঘােষিত হলাে ১৯ দফা। আবার সেই ১৯ দফার পেট থেকে শিল্প বিপ্লব ঘটানাের জন্য দেয়া হলাে ৪৩ দফা।
Source: জেনারেল জিয়ার রাজত্ব -অধ্যাপক আবু সাইয়িদ
জিয়ার সংবাদ সম্মেলন | বিএনপি কবে কিভাবে গঠনের ঘোষণা আসে?
জিয়ার সংবাদ সম্মেলন | বিএনপি কবে কিভাবে গঠনের ঘোষণা আসে?(জিয়ার রাজত্ব | ধারাবাহিক পোস্ট)৪৯.সময়ও এগিয়ে চললাে ৩০শে সেপ্টেম্বর ও ২রা অক্টোবর বগুড়া ও ঢাকায় ব্যর্থ সামরিক অভ্যুথান হলো। অভ্যুথানের দু'তিন দিন পর প্রেসিডেন্ট দেশী ও বিদেশী এক সাংবাদিক সম্মেলনে ঘােষণা করলেন যে, ভারত হতে যে সমস্ত সশস্ত্র দুস্কৃতিকারী এসেছে, যারা সীমান্তে হামলা ও ফারাক্কায় ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহার বিষয়ে টু শব্দ উচ্চারণ করে না তাদের উস্কানীতেই ব্যর্থ অভ্যুথান ঘটে। শুরু হলাে ধামকি, হুংকার। কিন্তু তদন্তে প্রমাণিত হলাে চক্রান্ত ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ জড়িত নেই। ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক বলয়ে প্রেসিডেন্ট কার্টার বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সােচ্ছার হলেন। ১৯৭৭ এর শেষে এবং ৭৮ এর প্রথমে ইউরােপীয় পত্র পত্রিকায় বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘন সম্পর্কে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশিত হতে থাকে। বলা হয়, বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠত না হলে বৈদেশিক সাহায্য কমে যাবে। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক দলগুলাে এতদিন বিভিন্ন ইস্যুর ভিত্তিতে আওয়ামী বাকশাল রুখার জন্য মেজর জেনারেল জিয়াকে অব্যাহত ও অকুণ্ঠ সমর্থন দিচ্ছিল তারাও নির্বাচন ও প্রকাশ্য রাজনীতির দাবী উত্থাপন করে। এই সমস্ত অব্যাহত দাবী ও ঘটনার পরিপেক্ষিতে ১৯৭৭ সালেন ১৫ই ডিসেম্বর রাতে রেডিও ও টেলিভিশনে ভাষণে জিয়াউর রহমান একটি ব্যাপক ভিত্তিক রাজনৈতিক ফ্রন্ট’ গঠনের আহবান জানান, তখনও পার্লামেন্টটারী সরকারের ওয়াদা হতে জিয়াউর রহমান পিছিয়ে যাননি। তখনও ৪র্থ সংশােধনী রেখে আওয়ামী-বাকশালীদের বিরুদ্ধে প্রচন্ডভাবে সরকারী অপপ্রচার চলতে থাকে। প্রচারে প্রতীয়মান হলাে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর ৪র্থ সংশােধনী বাতিল হবে। দেশে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি সরকার গঠিত হলে ‘সার্বভৌম পার্লামেন্টের ক্ষমতা কি হবে বলা হলােনা। প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও প্রেসিডেন্ট জিয়া নীরব থাকলেন। একাধারে প্রেসিডেন্ট, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক, প্রধান সেনাপতি পদ আকড়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট হয়ে শসনতন্ত্র সংরক্ষণ ও হেফাজত এর শপথ গ্রহণ করলেন। কিন্তু কয় বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট হলেন তাও গােপন করা হলাে।৫০. নির্বাচন উত্তর সাংবাদিক সম্মেলনে কত দিনের জন্য প্রেসিডেন্ট হলেন এই প্রশ্নের উত্তরে জিয়া পাল্টা সাংবাদিককে প্রশ্ন করেন, আপনি কত দিনের মনে করেন? রাজনীতিতে এলে সেনাবাহিনী কি ছাড়বেন? এই সম্পর্কে বলা হলাে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এখন আর সেনাবাহিনীর প্রধান নন, এখন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান নন, তিনি সশস্ত্র বাহিনী সমূহের সুপ্রীম কমান্ডার। জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর পােশাকেই বলতে থাকেন পার্লামেন্ট হবে ‘সার্বভৌম'। কেমন ‘সার্বভৌম?” সরকার পদ্ধতির রূপরেখা নির্ধারণ করতে পারবে কি? যদি আগমী '৭৯-এর নির্বাচন সংখ্যাগুরু এমপিরা জাতীয় সংসদে সংসদীয় সরকারের স্বপক্ষে প্রস্তাব পাশ করে তাহলে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জিয়ার অবস্থা কি দাঁড়াবে? তিনি কি পার্লামেন্টারী সরকারের অধীনে শাসনতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট হবেন? ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন?এই প্রহসনের অর্থ কি? ৫১. জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাক্কালে জনগণের কাছে ওয়াদা করেছিলেন যে, দেশ থেকে সামরিক আইন তুলে নেবেন রাজনৈতিক দলবিধি প্রত্যাহার করা হবে এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম সর্বপ্রকার নিয়ন্ত্রন মুক্ত হবে। এখন স্পষ্টতঃ মার্শাল ল উঠছে না,প্রেসিডেন্ট জিয়া নির্বাচনী ওয়াদা ভংগ করে চলেছেন। বাংলাদেশকে ‘পুলিশী স্টেট'-এ পরিণত হযেছে। বাক, স্বাধীনতা, নিয়মতান্ত্রিক বিরােধীতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা সহ মৌলিক অধিকার হরণ করে জিয়াউর রহমান গণতন্ত্র ধ্বংস করে দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগিয়ে চলছেন।পার্লামেন্ট নির্বাচন ও কালো টাকা আর ষড়যন্ত্র: ৫২. জিয়াউর রহমানের নিকট, জীবন মরণ সমস্যা ছিলাে জাতীয় সংসদ নির্বাচন।১৯৭৮ সনের ৮ই নভেম্বর জিয়াউর রহমান টেলিভিশন রেডিওতে ঘােষণা দিলেন ১৯৭৯ সনের ২৭শে জানুয়ারী দেশে পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। টিভি বেতার ঘােষণায় তিনি আরাে বললেন, পার্লামেন্ট হবে ‘সার্বভৌম' এবং পার্লামেন্ট নির্বাচনের পরপরই মার্শাল 'ল উঠিয়ে নেয়া হবে। নির্বাচন হবে অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ। তিনি প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশ গ্রহণে অনুরােধ জানান। পার্লামেন্ট নির্বাচন ঘােষণার পর বিরােধী দল হতে প্রতিক্রিয়া জানানাে হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১১ দফা দাবী উত্থাপন করে। দাবীগুলাের মধ্যে ছিল নির্বাচনের পূর্বেই সামরিক আইন প্রত্যাহার, সামরিক বাহিনী হতে জিয়াউর রহমানের পদত্যাগ, রাজবন্দীদের মুক্তি, সামরিক আইনে সাজাপ্রাপ্ত সকল বন্দীদের উচ্চতর আদালতে আপিলের সুযােগ প্রদান, ৪র্থ সংশােধনী বাতিল করে ১৯৭২ সালের শাসনতন্ত্রের পুনরুজ্জীবন, বিশেষ ক্ষমতা আইন সহ সকল কালাকানুন বাতিল ছিলাে অন্যতম। বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, জাতীয় জনতা পার্টি, জাসদ, গণআজাদী লীগ, ডি, এল, ন্যাপ (নাসের) জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট, ইউ পি পি দলগুলাে নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসেবে প্রায় একই রকম দাবী উথাপন করে। আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে ১০ দল নির্বাচন সংক্রান্ত দাবীর সঙ্গে নির্বাচন পিছানাের দাবীও জুড়ে দেয়। মুসলিম লীগ এসব দাবীর সঙ্গে পৃথক নির্বাচনের দফাও নির্বাচনে অংশ গ্রহণের পূর্বশর্ত হিসেবে জুড়ে দেয়। মুসলিম লীগ নেতারা বায়তুল মােকাররমে জনসভা করে ঘােষণা করে ১৬ই ডিসেম্বরের মধ্যে এসব দাবী মানা না হলে উদ্ভূত গুরুতর পরিস্থিতির জন্য মুসলিম লীগ দায়ী থাকবে না।৩৭ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মুসলিম লীগের হুশিয়ারীতে কর্ণপাত না করে মুসলিমলীগ প্রধান খান, আবদুস সুবুর খান এর সঙ্গে গােপনে পরামর্শ করলেন। সবুর খানের মুসলিম লীগ নির্বাচনে যাওয়ার ঘােষণা দিলাে। সিপিবি, দীর্ঘ কয়েকদিন নির্বাচনে অংশগ্রহণ সম্পর্কে আলােচনা করে এবং কোনরূপ শর্ত ছাড়াই নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অবশ্য পূর্ব কথা ছিলাে আওয়ামী লীগের সাথে কথাবার্তা বলে নির্বাচন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু তা না করে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে গােপনে সলাপরামর্শ করে তারা শর্তহীনভাবে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঘােষণা করে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরপরই ন্যাপ প্রধান অধ্যাপক মােজাফফর আহমদ জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা সমর্থন করেন। সে জন্য ন্যাপের পক্ষে শর্তহীনভাবে নির্বাচন যাওয়াই স্বাভাবিক।গণ রায়ের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতাঃ৫৩. '৭৮-এর ৩রা জুন নির্বাচনের পর মেজর জেনারেল জিয়া প্রেসিডেন্ট পদে শক্ত। হয়ে বসলেন। ৭৬-৭৭ সন পর্যন্ত কয়েকটি সামরিক অভ্যুথান নির্মমহাতে দমন করেছেন। এখন তিনি ‘সৈনিক’ হতে ‘রাজনৈতিক' হওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে এলেন। চীনপন্থী গ্রুপ, স্বাধীনতা বিরােধী দল, ব্যক্তি, সামরিক-বেসামরিক আমলাদের নিয়ে গঠিত জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টকে একটি রাজনৈতিক দলে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে জিয়াউর রহমান অগ্রসর হলেন। জুন মাস হতেই জিয়া ও তার সঙ্গীরা নতুন একটি দল গঠনের প্রকাশ্য তৎপরতা চালাতে লাগলেন। সামরিক বাহিনীর পৃষ্ঠপােষকতায় নতুন দল গঠনের প্রক্রিয়া দেশব্যাপী চালু হল। দল গঠনে প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমান বললেন “জাতীয় ঐক্যের অভাব, বিশেষতঃ দেশপ্রেমিক শক্তি ও গােষ্ঠীর মধ্যে সমঝােতা ও মৌলিক ঐক্যবােধের অভাব বাংলাদেশের মত আপাতঃ দারিদ্র অথচ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রকে সহজেই বৈদেশিক আধিপত্যবাদ ও আভ্যন্তরীণ বিধ্বংসী প্রক্রিয়ার শিকারে পরিণত করতে পারে।"৩৯ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠনের কথা ঘােষণা করেন এবং দলের আহবায়ক হন। ২৬শে সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের মুসলিম ইনস্টিটিউটের এক জনসভায় প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অবঃ) জিয়াউর রহমান বলেন, “আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মাধ্যমে বৃহত্তর ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছি এবং এ কারণে আমি জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট ভেঙে দেবার কথা ঘােষণা করছি।' তিনি বলেন, “আমি আশা করি ফ্রন্টের অঙ্গদলগুলাে এই ঘােষণা মেনে নেবে।" জিয়াউর রহমান জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টকে শুধু সঙ্গীণবিদ্ধ করেই ক্ষান্ত হলেন না, বরং ফ্রন্টের মাধ্যমে জনগণকে দেয়া নির্বাচনী ওয়াদাকে বুটের তলায় চেপে ধরলেন। জিয়ার ঘােষণা ছিল অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী; জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট জিয়ার ব্যক্তিগত দল বা সম্পত্তি ছিলাে না। ৬টি দল নিয়ে গঠিত ১২ সদস্যের স্টিয়ারিং কমিটি দ্বারা ঐক্যের খাতিরে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে দলনিরপেক্ষ লােক হিসেবে ফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও প্রেসিডেন্ট পদে মনােনয়ন দিয়েছিলাে। ফ্রন্ট থাকা না থাকার ব্যাপারে তার একক সিদ্ধান্ত নেয়ার কোন অধিকারই ছিলাে না। স্বৈরাচারী ডিক্টেটর হিসেবে জিয়া ফ্রন্ট বিলুপ্ত করে নতুন দল গঠন করার ঘােষণা দেন। জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের প্রার্থী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভের পর, প্রেসিডেন্ট জিয়ার নিকট ৭৭ সনের হাঁ/না ভােটে দেয়। সেখানে ১৯ দফার অস্তিত্ব থাকার কথা ছিলাে, কিন্তু প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য ১৯ দফাকে বলি দিয়ে তিনি ফ্রন্ট করেন ১৩ দফার ভিত্তিতে। ১৩ দফার ৪ নম্বর দফার অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল সরকার পদ্ধতি, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি ইত্যাদি পরবর্তী পার্লামেন্ট নির্ধারণ করবে। কিন্তু জাগদল, ন্যাপ (মশিউর) ও মুসলিম লীগ নিয়ে গঠন করলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। ৫৪. ১৯৭৮ সনের আগস্টে দলের পক্ষে ডাঃ এ. কিউ. এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী প্রকাশিত “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ঘােষণাপত্র শীর্ষক পুস্তিকার ৭ নম্বর দফায় বলা হলাে “জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখার জন্য, সামাজিক অনাচার ও অসমতা দূর করার জন্য, দ্রুত সার্বিক জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থক প্রয়াস চালানাের জন্য যে স্থিতিশীল ও নির্ঘন্ধ জাতীয় নেতৃত্বের প্রয়ােজন তা দেবার ক্ষমতা রয়েছে কেবল এমন এক প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির সরকারের, যেখানে রাষ্ট্রপতি নিজে সকল প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের প্রত্যক্ষ ভােটে নির্বাচিত। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দল, জনগণ সমর্থিত, অবিসংবাদিত, স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক নেতৃত্বে বিশ্বাস করে। সেই জন্য আমাদের দল একাধিক রাজনৈতিক দলীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে জনগণ নির্বাচিত এবং সক্রিয়ভাবে গণসমর্থিত প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির সরকারে বিশ্বাস করে।” অর্থাৎ পার্লামেন্টকে সরকার পদ্ধতি ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের যে পদ্ধতি নির্ধারণের ক্ষমতা জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে দেয়া হয়েছিল, তা সরাসরি অস্বীকার করা হলাে। জিয়াউর রহমানের নিকট এসব দফার কোন মূল্যই ছিল না। তার একমাত্র লক্ষ্য ছিল ক্ষমতা দখল, ক্ষমতার পথ নিষ্কন্টক করা এবং ক্ষমতায় টিকে থাকা। সেজন্য ১৯৭৭ সনে হাঁ/না ভােটের সময় জনগণের রায় চেয়েছিলেন ১৯ দফা দিয়ে। ৭৮ সনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ১৯ দফা ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন ১৩ দফা দিয়ে। ১৩ দফায় জনগণকে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনের পরপরই তা ছুঁড়ে ফেলা হলাে। পুনরায় ঘােষিত হলাে ১৯ দফা। আবার সেই ১৯ দফার পেট থেকে শিল্প বিপ্লব ঘটানাের জন্য দেয়া হলাে ৪৩ দফা।Source: জেনারেল জিয়ার রাজত্ব -অধ্যাপক আবু সাইয়িদ
Posted by সংগ্রামের নোটবুক on Thursday, January 16, 2020