You dont have javascript enabled! Please enable it!

১৫ জানুয়ারী ১৯৭২ঃ শেখ মুজিব

সাবেক প্রেসিডেন্ট হাউজ বরাদ্ধ সত্ত্বেও শেখ মুজিব তার ধানমণ্ডি বাসায় থাকার সিদ্ধান্ত নিয়াছেন। ধ্বংস প্রাপ্ত বাড়ি মেরামত শেষ হলে তিনি সেখানে উঠবেন। বিকেলে দলীয় কার্যালয়ে কর্মীদের উদ্দেশে শেখ মুজিব বলেন, বহু কষ্টে অর্জিত স্বাধীনতা যারা নষ্ট করতে চায় তাদের হুশিয়ার করে দিচ্ছি তবে তারা যদি তা করতে চায় তবে তারা সাড়ে সাত কোটি মানুষের মৃতদেহের উপর করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী সবাইকে সাবধান করে দিয়ে বলেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এখনও ষড়যন্ত্র চলছে। তবে শত্রু যতই শক্তিশালী হোক না কেন তারা কিছুতেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা নষ্ট করতে পারবে না। তিনি বলেন বাংলার মানুষ এখন রক্ত দিতে শিখেছে। তিনি বলেন বাংলার মানুষ নাকি যুদ্ধ করতে জানে না এবার তা তারা করে দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে যুদ্ধ করতে হয়। নিজের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন আমি কখনও প্রধানমন্ত্রী হতে চাইনি আমি চেয়েছিলাম বাংলার স্বাধীনতা। তিনি বলেন এখন পুনর্গঠনের সময় তাই আওয়ামী লীগের কর্মীদেরই এ দায়িত্ব পালন করতে হবে। দেশে এমন কোন সম্পদ নেই যা দিয়ে দেশ পুনর্গঠন করা যাবে তাই আমাকে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বের হতে হচ্ছে। তিনি বলেন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আমার বিশেষ যত্ন নিতে হবে। যারা আহত হয়েছে তাদের চিকিৎসা করাতে হবে। আমাদের দেখতে হবে তাদের সন্তানেরা শিক্ষার সব সুযোগ সুবিধা পায়। তিনি আওয়ামী লীগ কর্মীদের প্রতিশোধ থেকে নিজেদের বিরত থাকতে অনু্রোধ করেন। তিনি তাদের আশ্বস্ত করে বলেন কোন দোষী মাফ পাবে না। তারা যেখানে লুকায়ে থাকুক না কেন তাদের খুজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা হবে। তিনি সকল কে আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার আহবান জানান।
ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান সন্ধায় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে ভাষণ দেয়ার সময় ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা শহীদ হয়েছে তাদের স্মৃতির উদ্দেশে রেসকোর্সে একটি স্মৃতিসৌধ হবে। তিনি দলীয় কর্মীদের সকল শহীদদের তালিকা সংগ্রহ করে তা জমা দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন যতদিন পর্যন্ত এই সভ্যতা এবং পৃথিবী বেচে থাকবে ততদিন আমরা স্মরণ করে দিতে চাই যে গণহত্যা কত পাশবিক এবং নির্মম হতে পারে এবং সে জন্যই আমরা একটি স্মৃতি সৌধ গড়ে তুলতে ইচ্ছুক।

মুজিব বাহিনীর প্রশিক্ষক এবং অঘোষিত প্রধান জেনারেল সুজন সিং উবান ধানমণ্ডির অস্থায়ী বাসভবনে শেখ মুজিবের সাথে দেখা করেছেন। রামকৃষ্ণ মিশনের একটি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবনে (সাবেক প্রেসিডেন্ট হাউজ) শেখ মুজিবের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। আকাশবানীর বাংলা সংবাদ পাঠক দেবদুলাল বন্দোপাধ্যায় এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের চরমপত্র খ্যাত এম আর আখতার মুকুল শেখ মুজিবের সাথে দেখা করেন। ঢাকার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও বিউটি সিনেমা হলের মালিক বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবের সাথে তার সরকারী বাসভবনে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি মোহাম্মদপুর ও মিরপুরের ক্ষয়ক্ষতির একটি তালিকা তার কাছে হস্তান্তর করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান বাসসকে জানান অবিলম্বে দেশে ফেরার অনুরোধ জানিয়ে তিনি দিল্লীতে অবস্থানরত মওলানা ভাসানির কাছে ক্যাবল পাঠিয়েছেন। প্রশ্নকারী একজনকে তিনি বলেন মওলানা অতি শীঘ্রই দেশে ফিরে আসছেন। তিনি বলেন মওলানা আমার আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছিল তাই তার ফিরে আসার ব্যাপারে আশঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। মওলানা ভবিষ্যতেও আমাকে সমর্থন করবেন। শেখ মুজিবুর রহমান সাবেক ছাত্রনেতা ও বর্তমান এমএনএ তোফায়েল আহমেদ কে তার সহকারী নিযুক্ত করেছেন। শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের দলীয় পতাকা পরিবর্তন করেছেন সাদা সবুজের পরিবর্তে পতাকার রঙ হয়েছে লাল সবুজ। ঢাকায় জাতিসংঘ সাহায্য প্রধান (আনরড/আনরব) টনি হেগেন শেখ মুজিবের সাথে দেখা করেছেন। পূর্ব জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রী উইঞ্জার শেখ মুজিবের সাথে দেখা করেছেন।

 

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!