You dont have javascript enabled! Please enable it!

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে গুরুতর অনিয়ম | জিয়া সহ রাষ্ট্রপতি পদপ্রর্থী ১০ জন

৩৮. রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য তিনি আর্মি এ্যাক্ট পর্যন্ত সংশােধন করেছেন (হাসানুজ্জামান পৃ. ৪৪/৪৫)। জিয়াউর রহমানের মনােনয়নপত্র বাছাই কালে এম, , জি, ওসমানীর মনােননের অন্যতম সমর্থক ও অন্যতম প্রস্তাবক ফেরদৌস আহমদ কোরেশী রিটার্নিং অফিসারের কাছে একটি আপত্তি পেশ করেন। এতে বলা হয় যে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অধ্যাদেশের ৫ (২) খ ধারা অনুযায়ী এবং সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের (২) দফার (ছ) উপদফা অনুযায়ী এবং সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ও সেনাবাহিনীর রেগুলেশন বা সেনা আইনের ২৯৩ ও ২৯৬ বিধিদ্বয় অনুসারে সেনাবাহিনীর চাকুরী করা কালে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া যাবে না। এই আপত্তি বাতিল হয়ে যায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের ২৮/৪/১৯৭৮ তারিখের রুল ৫/১/৭৮/২৪১ নম্বর আদেশ ” লে সংশােধিত আকারে ২৯৩-ক বিধি অনুযায়ী প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক বা রাষ্ট্রপতি পদে আসীন এমন কোনাে অফিসারের ক্ষেত্রে উপরােক্ত নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য নয়।৩০ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ হতেও আপত্তি উথাপিত করা হয়।

 

৩৯. আওয়ামী লীগ ও গণতান্ত্রিক ঐক্যজোটের পক্ষ হতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে সেনাপতি পদ হতে জেনারেল জিয়ার পদত্যাগ, নির্বাচনের আগে ৬ মাস সময় প্রদান, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকরে পদ হতে প্রেসিডেন্ট জিয়ার পদত্যাগ, পি,পি,আর বাতিল, সামরিক আইনে সাজাপ্রাপ্ত সকল মামলা উচ্চতর আদালতে আপীল করার সুযােগ, সামরিক আইন প্রত্যাহার, ‘৭২ পার্লামেন্টারী সরকার পদ্ধতি এবং চতুর্থ সংশােধনী বাতিল, ‘৭২ সনের সংবিধান পুনরুজ্জীবিত করার দাবী জানানাে হয়।

৪০, জিয়াউর রহমান এর কিছুই মানলেন না। দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২রা মে আওয়ামী লীগ, পিপলস্ লীগ , ন্যাপ (মােজাফফর) সি,পি,বি, গণআজাদী : লীগ, জাতীয় জনতা পার্টি সমন্বয়ে গঠিত হয় গণতান্ত্রিক ঐক্যজোট-গজ। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গজের প্রার্থী হলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল (অবঃ) আতাউল গনি ওসমানী। নির্বাচনে জেনারেল ওসমানী বললেন, আমার এক দফা। আমি সংসদীয় গণতন্ত্র চাই।৩১

৪১. ৭ দলীয় ঐক্য জোট আওয়ামী লীগের দাবীর প্রায় হুবহ দাবী উত্থাপন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হতে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখলেও নির্বাচনের ১ সপ্তাহ পূর্বে আতাউর রহমান খান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আওয়ামী-বাকশালীদের প্রতিহত করতে হবে। দেশ থাকলে গণতন্ত্র আসবে। আওয়ামী-বাকশালীদের প্রতিহত করুন।৩২

৪২. সামাজবাদী দলের ফাস্ট সেক্রেটারী সিদ্দিকুর রহমান সাংবাদিক সম্মেলনে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে অর্থহীন এবং ইহাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে থাকার জন্য একটি ন্যাক্কারজনক নিম্নশ্রেণীর রাজনীতির খেলার চাকুরী মাত্র।৩৩

ভােট জালিয়াতির বিশ্বরেকর্ড

৪৩. ৭৮ সালের নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি পদপ্রর্থীর সংখ্যা ছিল ১০ জন। এরা হলেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, জেনারেল এম,,জি, ওসমানী, জনাব আজিজুল ইসলাম, জনাব আবুল বাশার, প্রিন্সিপাল আবদুল হামিদ, হাকিম মাওলা খবির উদ্দিন আহমদ, জনাব আবদুস সামাদ, জনাব গােলাম মােরশেদ, শেখ আবু বকর সিদ্দিক, ও সৈয়দ সিরাজুল হুদা। সর্বমােট ৩ কোটি ৮৪ লাখ ৮৬ হাজার ২৪৭ জন ভােটারের মধ্যে ২ কোটি ৮৮ লাখ ৮৫ হাজার ৮৯৪ টি ভােট পরে। এর মধ্যে জিয়াউর রহমান ১কোটি ৫৭ লাখ ৩৩ হাজার ৮০৭টি, জেনারেল (অবঃ) ওসমানী ৪৪ লাখ ৫৫ হাজার ২ শভােট, আজিজুল ইসলাম ৪৯ হাজার ৬৪, আবুল বাশার ৫১ হাজার ৯৩৬, প্রিন্সিপাল আবুল হামিদ ২৩ হাজার ৯৬৪, হাকিম মাওলা খবির উদ্দিন ৮ হাজার ৪২৫, আবদুস সামাদ ৩৭ হাজার ২৭৩, গােলাম মােরশেদ ৩৮ হাজার ১৯৩. শেখ আবু বকর সিদ্দিক ২৫ হাজার ৭৭ এবং সৈয়দ সিরাজুল হুদা ৩৫ হাজার ৬১৮টি ভােট পেয়েছিলেন। শতকরা ৫৪% লােক ভােট দিয়েছিল। ৪৪. সুধি পাঠকদের একটু স্মরণ করিয়ে দেয়া প্রয়ােজন যে, ১৯৭৭ সনে মেজর জেনারেল জিয়া হাঁ/না ভােট করেছিলেন। তখন ভােটের সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৩৬ হাজার ৮৫৮ জন। এর মধ্যে বৈধ ভােট পড়েছে ৩ কোটি ৩৭ লক্ষ ৭০ হাজার ৭৬৮ টি। এর মধ্যে জিয়াউর রহমান হা সূচক ভােট পেয়েছিলেন ৩ কোটি ৩৪ লক্ষ ৮৭০টি। প্রদত্ত ভােটের ৯৮,৮৮% ভাগ- যা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে। ১৯৭৭ সনের ৩০শে মে এবং ১৯৭৮ সনের ৩রা জুন- এই ৩৬৯ দিনের মধ্যে জিয়ার ভােট কমেছে ১ কোটি ৭৬ লক্ষ ৬৭ হাজার ৩৬ টি। এবং ভােটারদের উপস্থিতি কমেছে ১, ৪৮, ৯৩, ৮৭৪টি। ১৯৭৭ সনের ৩০শে মে-র নির্বাচনে প্রকৃত প্রস্তাবে ভােটারদের উপস্থিতির হার ছিল নগণ্য। কিন্তু প্রেসিডেন্ট, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক, প্রধান সেনাপতি ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের তুলনাহীন জনপ্রিয়তা দেখাতে নির্দেশিত জেলা-থানা প্রশাসকগণ বিপুল পরিমাণ ভােট জালিয়াতি করেছে। যা ছিলাে বিশ্বরেকর্ড। নির্বাচন কমিশন-এর নিরপেক্ষতা বলতে কিছুই ছিলােনা। সামরিক শাসনের অধীনে স্বয়ং সামরিক প্রধান যেখানে প্রার্থী সেখানে সকল আইনানুগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছিলাে। 

৪৫. জিয়াউর রহমান প্রধান সেনাপতির উর্দি পরে সশস্ত্র বাহিনীর স্যালুট নিচ্ছেন। নির্বাচনে তার পক্ষে কাজ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। সেনাবাহিনীর সদস্যগণ প্রকাশ্যভাবে ড্রেস পরে গ্রামে গিয়ে জিয়ার পক্ষে ভােট চাইছেন- জিয়াকে ভােট না দিলে জনগণের ভােগান্তি হবে বলে হুমকি দিচ্ছেন। সামরিক অফিসারদের জেলায় জেলায় নির্বাচন তদারকীর নাম করে জেলা প্রশাসনকে কবজা করে নেবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে; এমনি অবস্থায় নিরীহ জনগণ জানমালের নিরাপত্তা বিধানে জিয়াউর রহমানকেই ভােট দিয়েছেন। কেননা ৭১ সনে সামরিক বাহিনীর নির্মম নিষ্ঠুরতা তাদের চেতনায় তখনও জ্বল জ্বল করে জ্বলছিল। এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় রাত দশটার পর কার্য্য এই পরিবেশে ৭৮-এর প্রহসন মূলক প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সমগ্র নির্বাচন কাঠামাে ও ব্যবস্থাকেই দুর্নীতিগ্রস্ত করে তুলেছিলাে। নির্বাচনের পর ২৯ শে মে জুন ৭৮ সনে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ২৮ সদস্যের একটি মন্ত্রী পরিষদ ও দু জন প্রতি মন্ত্রী নিয়ােগ করেন।৩৫ 

৪৬. ১৯৭৭ এর গণভােট ও বিগত ৩রা জুন -এ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন যেমন দেশের ভবিষৎ শাসনতন্ত্র ও সরকারের কাঠামাে সম্পর্কে দেশবাসীকে সুস্পষ্টভাবে জ্ঞাত করানাে হয়নি, ‘৭৮ ডিসেম্বরের পার্লামেন্ট নির্বাচনেও তেমনি শাসনতান্তিক কাঠামাে ও সরকারের পদ্ধতি সম্পর্কে নীরবতা ও অস্পষ্টতা বিদ্যমান।

৪৭. ১৯৭৭ সালের এপ্রিল মাসে প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন পদ দখলের পর বেতার ও টেলিভিশন ভাষণে মে মাসে তার প্রতি আস্থা সূচক গণভােট অনুষ্ঠানের কথা এবং ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে পার্লামেন্ট নির্বাচনের কথা ঘােষণা করেন। এ ঘােষণাতেও সংসদীয় গণতন্ত্রের ওয়াদা অপরিবর্তিত থাকে। তৎসত্বেও জনগণ মনে করছিলাে যে, মধ্যবর্তী দেড় বছরের জন্য জেনারেল জিয়া রাজত্ব করবেন তার জন্য তিনি গণভােটের দ্বারা ম্যান্ডেট নিয়েছেন। 

৪৮, কিন্তু প্রশ্ন উঠলাে ১৯৭৮ সালেন ডিসেম্বর মাসে পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তিনি কি সংসদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন? ব্যারাকে ফিরে যাবেন? নাকি তিনি প্রধান সেনাপতি পদ ছাড়বেন?

Source: জেনারেল জিয়ার রাজত্ব -অধ্যাপক আবু সাইয়িদ

video link

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!