You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.03.25 | ২৫-২৬শে মার্চ পাক-আর্মি কর্তৃক ক্রাক-ডাউনের আগাম সংবাদ কি বাঙালি প্রশাসকরা জানতেন? - সংগ্রামের নোটবুক

২৫-২৬শে মার্চ পাক-আর্মি কর্তৃক ক্রাক-ডাউনের আগাম সংবাদ সরবরাহ

বলাবাহুল্য যে, এজাতীয় গােপন তথ্য বা সংবাদ সরবরাহের সঙ্গে যে আমাদের আলােচ্য সকল সিএসপি-ইপিসিএস অফিসার জড়িত ছিলেন, তা নয়। বরং সত্যি কথা বলতে ব্যাপারটা এরকম যে, যার-যখন-যেভাবে সুযােগ হয়েছিল তিনি সেটা করেছিলেন, তা মনে করা যেতে পারে।

যেমন, মেজর (অব.) মীর হাসমত উল্লাহ তদীয় মুক্তিযুদ্ধে আমি এবং আমার সময় শীর্ষক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে ক্যাপ্টেন পদে ইপিআর-এ যশাের জেলায় কর্তব্যরত ছিলেন। ২৫শে মার্চে পাকিস্তানিদের দ্বারা হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হওয়ার পূর্ব লক্ষণ স্বরূপ বাংলাদেশের বিভিন্ন সেনাক্যাম্পে কর্মরত অন্যান্য বাঙালি অফিসার ও সিপাহিদের মতাে যশাের জেলায় তারাও পাকিস্তানিদের অপতৎপরতার সংবাদ বিভিন্নসূত্রে আগেই টের পেয়েছিলেন। বিশেষ করে ২৫শে মার্চের দিবাগত রাতে যে আর্মি-ক্র্যাকডাউন হতে যাচ্ছে তা তিনি স্থানীয় সাংবাদিক (যিনি তাঁর পাশের বাসায় থাকতেন) তৌহিদুর রহমান এবং যশােরের জেলা প্রশাসক আবুল ফজল চৌধুরীর মারফত জানতে পেরেছিলেন। জনাব হাসমত উল্লাহ লিখেছেন: “এদিকে ৬ টার কিছু পরে আমাকে আমার পাশের বাসায় বসবাসরত সাংবাদিক তৌহিদুর রহমান ফোন করে আজ (২৫/৩/১৯৭১) রাতে কিছু ঘটতে পারে বলে সন্দেহ পােষণ করেন।”৭৯

একথা  তাকে (হাসমত উল্লাহ) জেলা প্রশাসকও জানান। তার ভাষায়: “কিছুক্ষণ পরে যশােহরের জেলা প্রশাসক আবুল ফজল চৌধুরী আমাকে ফোন করে আজ রাতে আর্মি ক্র্যাকডাউন করবে বলে জানালেন। আমি এর সত্যতার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি তার মামা চিফ সেক্রেটারি শফিউল আযমের কাছ থেকে সংবাদটি পেয়েছেন বলে জানান। আমি তৎক্ষণাৎ চৌধুরীকে সার্ভিসেস ক্লাবে আসতে অনুরােধ করি এবং সঙ্গে এসপি ও বিশ্বস্ত কয়েকজন অফিসারকে আনতে বলি।”৮০

এরপর দেখা যায় তাঁরা অনেকে ক্লাবে একত্র হলে আলােচনার পর জেলা প্রশাসক তাঁকে প্রয়ােজনে সিভিল ফোর্স দিয়ে সহায়তা করবারও আশায় দিয়েছিলেন।

 তাঁর কথায়: “..আমি সার্ভিসেস ক্লাবে যাই। সেখানে জেলা প্রশাসক আবুল ফজল চৌধুরী ও এসডিও মুসা সাহেবকে পাই। এসপি এনামুল হক আসেননি এবং তাঁর কোনাে প্রতিনিধিও ছিলেন না। আমি উপস্থিত অফিসারদের সাথে বিস্তারিত আলাপ করি। আমি তাদেরকে জানাই, আমার কাছে অল্প সংখ্যক ইপিআর সদস্য আছে। আর্মির সাথে মােকাবেলা করতে হলে পুলিশ, আনসার, মুজাহিদ লাগবে। ডিসি সাহেব জানালেন যশাের সদরের এমপি মশিউর রহমান এই মাত্র যশোের এসে পৌঁছেলেন। তাঁর সাথে আলাপ করে সিভিল ফোর্স দিয়ে আমাকে সাহায্য করবেন। উক্ত সভায় আমি আরও বলি, যদি পাক সেনা শহরে প্রবেশ করে সাধারণ পাবলিককে হত্যা করে, কিংবা পুলিশ, ইপিআর সদস্যদেরকে হাতিয়ার স্যারেন্ডার করতে বলে-সেই ক্ষেত্রে আমরা পাক সেনার মােকাবেলা করব। অন্যথায় আমরা নিজ নিজ অবস্থানে থাকব। এতে ডিসি এবং এসডিও একমত পােষণ করেন।”৮১

উল্লেখ্য, পরে এই জেলা প্রশাসককে সামরিক বাহিনী আটক করে। মেজর (অব.) হাসমত উল্লাহর কথায়: “রাত তখন ১২টা প্রায় এসডিও মুসা আমাকে ফোন করে জানালেন এইমাত্র সেনাবাহিনীর একদল সৈনিক ডিসি এবং এসপি সাহেবকে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে গেছে। তিনি যশােরের কোতােয়ালি থানা থেকে ফোন করেছেন বলে জানালেন। ঠিক ঐ সময় ফোন লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন। সমগ্র যশাের অন্ধকারে নিমজ্জিত। সাথে সাথে চাইনিজ রাইফেলের গুলির শব্দ। পাক সেনা ঢুকে পড়েছে।”৮২

Reference: মুক্তিযুদ্ধে সিএসপি ও ইপিসিএস অফিসারদের ভূমিকা