১১ এপ্রিল ১৯৭১ বাঙালি মেজর হত্যা দিয়েই নিয়াজির দায়িত্ব পালন শুরু
নিয়াজি ৪ তারিখ থেকে দায়িত্বভার না পেলেও বিশেষ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন। টিক্কা খানের নির্দেশে নতুন আগত অফিসাররা নতুন পোস্টিং এর আগে ১৪ ডিভিশনে সংযুক্ত থাকতেন। নিয়াজির সমসাময়িক আরও ২ জন মেজর জেনারেল ঢাকায় আসেন এরা হল শওকত রেজা এবং নজর হোসেন শাহ্। টিক্কা খান ১০ তারিখ থেকে প্রতিদিন ঢাকা সেনানিবাসে অপারেশন কক্ষে বিকালে মিটিং এর সময় দিয়েছিলেন। নতুন আগত তিন কর্মকর্তা এই সভায় থাকতেন।
১০ই এপ্রিল ১৯৭১ বিকাল ৪টার সময় ঢাকা সেনানিবাসে অপারেশন কক্ষে সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে নিয়াজি ছিলেন। বৈঠকে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সাথে কয়েকজন বাঙালি অফিসার ছিলেন। বক্তব্যের শুরুতেই উর্দুতে তিনি বললেন, এই হারামজাদা (বাঙালি)জাতির মনে রাখা উচিত তিনি কে? এক পর্যায়ে অশালীন ইঙ্গিত করে তিনি বাঙালি জাতির চেহারা বদলে দেওয়ার কথা বললেন। কিন্তু তাঁর এই কদর্য কথা সাহসী জ্যেষ্ঠ বাঙালি অফিসার মেজর আবু ইউসুফ মুশতাক আহমেদ(তখন পর্যন্ত পাক অনুগত) সহ্য করতে না পেরে নিয়াজির উদ্দেশে বললেন, এ ধরনের কথাবার্তা বলা খুবই আপত্তিকর এবং তাকে তা প্রত্যাহার করতে হবে।
পরে অফিসার মেসের তার কক্ষে তাকে মৃত অবস্হায় পাওয়া যায়। সেনাবাহিনীর সদস্যরা তার প্রানহীন নিথর দেহটি সাদা কাফনে আবৃত করে তার ঢাকার বাড়িতে তার একান্ত আপনজন পরিবারের সদস্যদের কাছে এনে বলে উনি নিজের পিস্তলের গুলিতে আত্মহত্যা করেছেন। । পরে এই বাঙালিকে সেনাকে সেনা তত্ত্বাবধানে বনানী কবরস্হানে দাফন করা হয়।
বাঙালি সেনা কর্মকর্তা হিসাবে জেনারেল নিয়াজির নৃশংসতার প্রথম শিকার হলেন বাঙালি মেজর আবু ইউসুফ মুশতাক আহমেদ
এ নিয়ে দুটি ভাষ্য আছে। খাদিম হুসেন রাজা তাঁর বইতে বলেছেন, মেজর মুশতাক বাঙালিদের সম্পর্কে নিয়াজির অপমানকর বক্তব্য সহ্য করতে না পেরে রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা-গবেষক লে. কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির লিখেছেন, মুশতাক রাতে মেসে ঘুমাতে গেলে নিয়াজি জওয়ান পাঠিয়ে তাঁকে হত্যা করিয়েছেন। এভাবেই তিনি বাঙালি কর্মকর্তার ‘ঔদ্ধত্যের’ জবাব দিয়েছেন (ইন কোয়েস্ট অফ ফ্রিডম: দ্য ওয়ার অব ১৯৭১, সম্পাদক মেজর জেনারেল আয়ান কারডোজো)।
কাজী সাজ্জাদ আরও লিখেছেন, ঢাকায় বাড়ি থাকা সত্ত্বেও এই বাঙালি মেজর অফিসার মেসে থাকতেন। সকালে কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা একটি ট্রাকে সাদা কাফনে ঢেকে মুশতাকের লাশ তাঁর বাড়িতে আনেন এবং তাঁরা পরিবারকে জানান, তিনি বাথরুমে আত্মহত্যা করেছেন। পরিবারের সদস্যরা লাশ দাফন করতে চাইলে জানানো হয়, অনুমতি নেই। শুধু দেখানোর জন্য এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। পরে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বনানী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
মুশতাকের পরিবারের দাবি, বাঙালি অফিসার হিসেবে মুশতাকের অস্ত্র বহনের কোনো সুযোগ ছিল না। তাহলে তিনি কীভাবে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে আত্মহত্যা করবেন? তিনি যে মেসে ছিলেন, তাতে ১৩ ফ্রন্টিয়ার রেজিমেন্টের কর্মকর্তারা ছিলেন। ধারণা করা হয়, ওই দিন খুব ভোরে কতিপয় সেনাসদস্য মুশতাকের কক্ষে গিয়ে গলা কেটে তাঁকে হত্যা করেন।