১০ জানুয়ারী ১৯৭২ঃ ঢাকা বিমান বন্দরে শেখ মুজিব
দুপুরে ঢাকা বিমানবন্দরে ব্রিটিশ রাজকীয় কমেট বিমান অবতরন করলে বিমানের সিড়ি সংযুক্ত হওয়ার সাথে সাথেই সাবেক ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ এমএনএ, ছাত্রনেতা ও নায়ক খসরু ও কয়েকজন বিমানের দরজায় ছুটে যান এবং শেখ মুজিবের নামার প্রাক্কালে তাকে জড়িয়ে ধরেন এবং ফুলের মালা পরিয়ে দেন। বিমান থেকে নেমে এলে তাকে গার্ড অব অনার মঞ্চে নিয়ে যান সশস্র বাহিনী প্রধান কর্নেল ওসমানী এবং সেনাবাহিনীর ঢাকা এলাকা প্রধান লেঃ কঃ শফিউল্লাহ। গার্ড অব অনার পরিচালনা করেন মেজর মইনুল। পরে শেখ মুজিবকে সশস্র বাহিনীর অপর অফিসারদের সাথে পরিচয় করে দেয়া হয়। চীফ অফ স্টাফ কর্নেল রব, উপ সশস্র বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল একে খন্দকার, সেক্টর কমান্ডারদের মধ্যে এমকে বাশার, সিআর দত্ত, লেঃকঃ নুরুজ্জামান, মীর শওকত আলী, খালেদ মোশাররফ, এমএ মঞ্জুর, উইং কমান্ডার হামিদুল্লাহ,মেজর রফিক সহকারী স্টাফ প্রধান মেজর এআর চৌধুরী,সহকারী স্টাফ প্রধান আবু ওসমান চৌধুরী, মেজর আবু সালেক চৌধুরী, মেজর জিয়াউদ্দিন, মেজর জামান, মেজর হায়দার, ক্যাপ্টেন গাফফার সহ আরও অনেকে। বিদেশী অতিথিদের মধ্যে ছিলেন ব্রিটিশ এমপি জন স্টোন হাউজ, ভারতীয় এমপি সমর গুহ, সোশালিস্ট ইন্টারন্যাশনালের হেন্স জেনিসেক, ব্রিটিশ এমপি এবং ওয়ার অন ওয়ানটস প্রধান ডোনালড চেসওয়ারথ, সোভিয়েত কন্সাল জেনারেল ভ্যালেন্টিন পোপভ, ব্রিটিশ হাই কমিশন কর্মকর্তা আর জি ব্রিটেন, মিডরফট, ফ্রান্সের কন্সাল জেনারেল পিয়েরে বারখেলে। এছাড়াও নেপাল, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, পোল্যান্ড, যুগস্লভিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পশ্চিম জার্মানি, বুলগেরিয়ার মিশন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আরও উপস্থিত ছিলেন ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরের যুগ্ন সচিব একে রায়, ভারতীয় সেনাবাহিনীর এসকে গঙ্গোপাধ্যায়, বাংলাদেশ কম্যুনিস্ট পার্টির মনি সিংহ, আব্দুস সালাম, ন্যাপের ক্যাপ্টেন হালিম, মতিয়া চৌধুরী, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মনোরঞ্জন ধর,আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নান (টাং),খালেদ মোহাম্মদ আলী এমএনএ, আব্দুর রাজ্জাক,আমির হোসেন আমু এমপিএ, ছাত্রলীগ সভাপতি নুরে আলম সিদ্দিকি, সাধারন সম্পাদক শাজাহান সিরাজ, ডাকসু ভিপি আসম আব্দুর রব, জিএস আব্দুল কুদ্দুস মাখন, শেখ মুজিবের পিতা ও ভাগ্নে শেখ মনি, শেখ মুজিবের তিন পুত্র, আওয়ামী লীগ মন্ত্রীসভার সকল সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
নোটঃ মেজর জলিল গ্রেফতার থাকায় এবং ওসমানীর সাথে বিরোধ থাকায় মৌলভীবাজারে দায়িত্ব পালনরত লেঃকঃ জিয়াউর রহমান এই দুই সেক্টর কমান্ডার/ ব্রিগেড কমান্ডার এদিনে উপস্থিত ছিলেন না।
১০ জানুয়ারী ১৯৭২ঃ রেসকোর্সে শেখ মুজিব
শহর আওয়ামী লীগ বিমানবন্দর এবং প্রধান সড়কে ভিড় না করার আগের দিন প্রচার সত্ত্বেও লাখো জনতা বিমান বন্দর এবং রাস্তা পরিপূর্ণ করে ফেলে। পুলিশ বিভাগের অনুরোধ সত্ত্বেও উন্মুক্ত রাস্তা বেদখল হয়ে যায়। ফলে রেসকোর্সে পৌছতে শেখ মুজিবের অনেক বিলম্ব হয়ে যায়। তিনি ক্লান্তির কারনে দিল্লীতে লম্বা বক্তব্য না দিয়ে তড়িঘড়ি শেষ করে দিয়েছিলেন এখানে জনজট তার ক্লান্তি আর বাড়িয়ে দিয়েছিল। রেসকোর্সের বক্তৃতায় তিনি বলেন বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে বাংলার একজন মানুষ বেচে থাকতে এ স্বাধীনতা নস্যাৎ হতে দেবনা। বাংলাকে দাবিয়ে রাখতে পারে পৃথিবীতে এমন কোন শক্তি নেই। তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে শহীদদের প্রতি সন্মান জানান। তিনি বলেন আজ আমার সাধ পুরন হয়েছে। তিনি রবীন্দ্রনাথের কবিতার একটি লাইন সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি চয়ন করে বলেন কবি গুরুর এই আক্ষেপ আমরা মোচন করেছি। বাংলার মানুষ আজ প্রমান করেছে তারা প্রান দিতে যানে আর তারা যে কাজ করেছে তার নজির পৃথিবীতে নেই। মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন তোমরা যে রক্ত দিয়েছ তা বৃথা যেতে পারে না। তিনি বলেন বাংলাদেশ ২য় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র কিন্তু ব্বাংলাদেশ কোন ধর্মীয় রাষ্ট্র হবে না। এদেশের মূলনীতি হবে গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা। তিনি জনগনের উদ্দেশে বলেন এখনি দেশ পুনর্গঠন কাজে নেমে পড়ুন। নিজেরাই রাস্তাঘাট মেরামত করুন। তিনি বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্য সকল দেশের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি ও জাতিসংঘ সদস্য পদ দেয়ার জন্য সকল মুক্ত দেশের প্রতি আহবান জানান। বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামে ইন্দিরা গান্ধীর ভুমিকার প্রশংশা করে তিনি বলেন আমি ভারতবাসী এবং ইন্দিরাগান্ধির প্রতি চির কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন অনেক ভারতীয় সৈন্য ধিরে ধীরে প্রত্যাহার করা হচ্ছে আমি যখন বলব সবাই সেদিন চলে যাবে। তিনি বলেন ২৫ মার্চ রাত্রে আমাকে ছেড়ে যাবার সময় সৈয়দ নজরুল তাজউদ্দীন কাঁদতে কাঁদতে আমার বাসভবন ত্যাগ করেছিলেন আমি বলেছিলাম আমি এখানেই মরতে চাই।
তিনি বলেন বাংলাদেশে গণহত্যার তদন্ত ও বিচার হবে। তবে আন্তজার্তিক দল তদন্ত করতে চাইলে তিনি স্বাগত জানাবেন। তিনি বলেন আমার বিরুদ্ধে মামলায় যারা সাক্ষী দিয়েছে তাদেরও বিচার করা হবে। কামালকে ৩ মাস ধরে চেষ্টা করার পরও কামাল আমার বিরুদ্ধে সাক্ষী দেয়নি।
ভুটটো সম্পর্কে তিনি বলেন আমাকে বলা হয়েছিল দু অংশের মধ্যে শিথিল একটা সম্পর্ক রাখা যায় কিনা। ভুটটো এর উদ্দেশে তিনি বলেন আপনারা সুখে থাকুন বাঙ্গালিরা আপনার সাথে স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবেই বন্ধু হতে চায়।