You dont have javascript enabled! Please enable it!
বঙ্গবন্ধুর ভিন্নধর্মী শাসন-প্রক্রিয়া – (৩৫-দফা নির্দেশাবলি)
১নং নির্দেশ : সরকারি সংস্থাসমূহ কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সেক্রেটারিয়েটসমূহ, সরকারি ও বেসরকারি অফিস সমূহ, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানসমূহ, হাইকোর্ট এবং বাংলাদেশস্থ সকল কোর্ট হরতাল। পালন করবে এবং নিমে বর্ণিত বিশেষ নির্দেশাবলি এবং বিভিন্ন সময়ে যেসব ছাড়ব্যাখ্যা দেওয়া হবে তা সবই মেনে চলবে।
২নং নির্দেশ : শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ সমগ্র বাংলাদেশে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
৩নং নির্দেশ : আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষা (ক) ডেপুটি কমিশনারগণ ও মহকুমা অফিসারগণ তাদের কোনাে দপ্তর না খুলে সংশ্লিষ্ট এলাকার আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবেন এবং উন্নয়ন কাজ ও প্রয়ােজন। হলে এই সকল নির্দেশ কার্যকরী বা প্রয়ােগ করার দায়িত্ব পালন করবেন।। ডেপুটি কমিশনারগণ ও মহকুমা অফিসারগণ তাদের এইসব দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে আওয়ামী লীগ সংগ্রাম পরিষদের সাথে ঘনিষ্ঠ যােগাযােগ ও নিবিড় সহযােগিতা বজায় রাখবেন। (খ) পুলিশ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবেন এবং প্রয়ােজন বােধে আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সাথে যােগ দেবেন। (গ) আনসার বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন করবেন।
৪নং নির্দেশ : বন্দর (অভ্যন্তরীণ বন্দরসহ) বন্দর কর্তৃপক্ষ পাইলটেজসহ সকল কাজ করে যাবে। বন্দর কর্তৃপক্ষের কেবল সেইসব অফিস খােলা থাকবে যেগুলাে জাহাজসমূহের সহজ ও সুষ্ঠু আসা-যাওয়ার জন্য বিশেষভাবে প্রয়ােজনীয়। কিন্তু সৈন্য চলাচলে কিংবা সমরাস্ত্র আনানাের ও বাংলাদেশের মানুষকে নির্যাতনের জন্য সৈন্য ও সমরাস্ত্র আনা-নেওয়ার কাজে কোনােভাবেই সহযােগিতা বা সাহায্য করা যাবে না। জাহাজসমূহের বিশেষ করে বাংলাদেশের মানুষের জন্য খাদ্যবাহী জাহাজসমূহের মাল খালাস ত্বরান্বিত করার সম্ভাব্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দর-শুল্ক (পাের্ট ডিউজ) ও মাল খালাসের কর বা শুল্ক আদায় করবেন। অভ্যন্তরীণ বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দর শুল্ক ও অন্যান্য শুল্ক আদায় করবেন।
৫নং নির্দেশ : আমদানী আমদানীকৃত সকল মাল দ্রুত খালাস করতে হবে। শুল্ক বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখাসমূহ। কাজ করে যাবে এবং ধার্যকৃত শুল্ক সম্পূর্ণরূপে পরিশােধের পর মাল খালাসের অনুমতি দেবে। এই কাজ সমাধানের জন্যে ইস্টার্ন ব্যাংকিং কর্পোরেশন লিমিটেডে ও ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেডে বিশেষ অ্যাকাউন্ট খােলা হবে। কাস্টমস কালেক্টরগণ এই বিশেষ অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করবেন। আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময়ে যেসব নির্দেশ ইস্যু করবে, কাস্টমস কালেক্টরগণ তদানুযায়ী অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করবেন। যে শুল্ক আদায় করা হবে তা কোনােমতেই কেন্দ্রীয় সরকারের নামে জমা হবে না।
৬নং নির্দেশ : রেলওয়ে রেলওয়ে চালু থাকবে। তবে রেল কর্তৃপক্ষের কেবলমাত্র সেই অফিসই খােলা থ কিবে যেগুলাে রেল-চলাচলের জন্য প্রয়ােজনীয়। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের ওপর নির্যাতন চালানাের জন্যে সৈন্যদের আনা-নেওয়া বা সমরাস্ত্র পরিবহণের কোনাে কাজে কোনােভাবেই সাহায্য বা সহযােগিতা করা যাবে না। বন্দর থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্য পরিবহণের জন্য রেলওয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রেল-ওয়াগনের ব্যবস্থা করবে।
৭নং নির্দেশ : সড়ক পরিবহণ । সারা বাংলাদেশে ইপিআরটিসি চালু থাকবে।
৮নং নির্দেশ : অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলাের কাজ চালু রাখার জন্য ইপিএসসি অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ ও আইডব্লিউটিএ’র প্রয়ােজনীয় কিছু সংখ্যক কর্মচারী কাজ চালিয়ে যাবেন। গণনির্যাতনের জন্য সৈন্য বা রণসম্ভার আনা-নেওয়ার ব্যাপারে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা কোনাে সহযােগিতা করতে পারবেন না।
৯নং নির্দেশ : বাংলাদেশের মধ্যে শুধু চিঠিপত্র, টেলিগ্রাম ও মনি-অর্ডার পৌছানাের জন্য ডাক ও তার বিভাগ কাজ করে যাবে। সরাসরি বিদেশে চিঠিপত্র ও টেলিগ্রাম প্রেরণ করা যাবে। ব্যাংকের বিভিন্ন নির্দেশ নেওয়ার ও দেওয়ার জন্য সােম, মঙ্গল, বুধ ও বৃহঃস্পতিবার শুধু অপরাহ ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত এই এক ঘন্টা আন্তঃআঞ্চলিক টেলিপ্রিন্টার যােগাযােগ চালু থাকবে। ২৫নং নির্দেশে এই অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আন্তঃআঞ্চলিক প্রেস টেলিগ্রাম চালু থাকবে। পােস্টাল সেভিংস ও বীমা কোম্পানি। কার্যরত থাকবে।
১০নং নির্দেশ : বাংলাদেশের মধ্যে কেবলমাত্র স্থানীয় আন্তঃজেলা ট্রাংক টেলিফোন যােগাযােগ অব্যাহত থাকবে। টেলিফোন মেরামত ও সংরক্ষণের জন্য প্রয়ােজনীয় বিভাগগুলি কাজ করে যাবে।
১১নং নির্দেশ : বেতার, টেলিভিশন ও সংবাদপত্রগুলি কাজ চালিয়ে যাবে। তারা গণআন্দোলন সম্পর্কিত সকল বক্তব্য, বিবৃতি, সংবাদ ইত্যাদি প্রচার করবে। যদি না করে তবে এই সব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিরা সহযােগিতা করবেন না।
১২নং নির্দেশ : জেলা হাসপাতাল, টিবি ক্লিনিক, কলেরা ইনস্টিটিউটসহ সকল হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন সার্ভিসগুলাে যথারীতি কাজ করে যাবে। সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর্স কাজ করে যাবে এবং সকল হাসপাতাল ও হেলথ সেন্টারে প্রয়ােজনীয় ওষুধপত্র ও অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করবে। ১৩নং নির্দেশ : বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজের সাথে ও এই কাজের সংরক্ষণ ও মেরামত কাজের সাথে জড়িত ইপিওয়াপদা’র বিভাগগুলাে কাজ করে যাবে।
১৪নং নির্দেশ : গ্যাস ও পানি সরবরাহ অব্যাহত থাকবে। এসবের সংরক্ষণ ও মেরামতের কাজও চালু থাকবে। ১৫নং নির্দেশ : ব্রিক ফিল্ড ও অন্যান্য প্রয়ােজনীয় কাজের জন্য কয়লা সরবরাহ অব্যাহত থাকবে।
১৬নং নির্দেশ : আমাদানী, বণ্টন, গুদামজাতকরণ ও খাদ্যশস্যের চলাচল জরুরি ভিত্তিতে কার্যকরী থাকবে। এ সবের প্রয়ােজনে ওয়াগন, বার্জ, ট্রাক ও অন্যান্য সকল প্রকার পরিবহণ ব্যবস্থা জরুরি ভিত্তিতে চালু থাকবে।
১৭নং নির্দেশ : (ক) ধান ও পাটবীজ, সার ও কীটনাশক ক্রয়, চলাচল ও বণ্টন অব্যাহত থাকবে। কৃষি খামার ও চাল গবেষণা ইনস্টিটিউট ও এর সকল প্রকল্পগুলাে যথারীতি কাজ করবে। পাওয়ার-পাম্প ও অন্যান্য কারিগরি যন্ত্রপাতির চলাচল, বণ্টন, মাঠে চালু রাখা ইত্যাদি অব্যাহত থাকবে। তা ছাড়া তেল, জ্বালানি, যন্ত্রপাতি ও এসবের সংরক্ষণ ও মেরামতের জন্যে প্রয়ােজনীয় বিভাগ খােলা থাকবে। নলকূপ খনন, খাল খনন ও এই জাতীয় পানি-সেচ সম্পর্কিত সকল কাজ চালু থ কিবে। পূর্ব পাকিস্তান সমবায় ব্যাংক, কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক ও তার অঙ্গ সংস্থাগুলাে থানা সমবায় সমিতি এবং অন্যান্য সমবায় সংস্থাগুলােকে কৃষি-ঋণ দেওয়া অব্যাহত থ কিবে। যে বিষয়গুলাে উল্লেখ করা হলাে তার কাজ সুচারুরূপে পরিচালনার জন্যে পূর্ব পাকিস্তান কৃষি উন্নয়ন সংস্থার প্রয়ােজনীয় শাখাগুলাে খােলা থাকবে। (চ) কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংকগুলাে থেকে ঘূর্ণিদুর্গতদের জন্যে সুদবিহীন ঋণ ও কৃষকদের প্রয়ােজনীয় ঋণ দেওয়া বলবৎ থাকবে। (ছ) আলু কিনে গুদামজাত করার জন্যে কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের তহবিল মওজুদ রাখতে হবে।
১৮নং নির্দেশ : বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও শহর-সংরক্ষণ বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাজ, শহর-সংরক্ষণ এবং নদী খনন ও যন্ত্রপাতি স্থাপনসহ ওয়াপদার পানি উন্নয়ন কাজ, মালপত্র খালাস ও আনা-নেওয়া এবং এই ধরনের অন্যান্য জরুরি। কাজ সূচারুরূপে চালিয়ে যাওয়া হবে। সরকারি এজেন্সি কিংবা সংশ্লিষ্ট স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা কন্ট্রাক্টরদের পাওনা মিটিয়ে দেওয়ার প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা করবে।
 
১৯নং নির্দেশ : উন্নয়ন ও নির্মাণ কার্য বৈদেশিক সাহায্যে তৈরি রাস্তা ও পুল প্রকল্পগুলােসহ সকল প্রকার সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার উন্নয়ন ও নির্মাণ কাজ অব্যাহত থাকবে। সরকারি এজেন্সি ও সংশ্লিষ্ট স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা থেকে ঠিকাদারদের পাওনা যথারীতি মিটিয়ে দেওয়া হবে। উক্ত সংস্থাগুলাে থেকে যদি মালমসলা সরবরাহের চুক্তি থাকে তাহলে সেই চুক্তি মােতাবেক যথারীতি সরবরাহ করা হবে।
২০নং নির্দেশ : সাহায্য ও পুনর্বাসন ঘুর্ণিদুর্গত এলাকার বাঁধ তৈরি ও উন্নয়নমূলক কাজসহ সকল প্রকার সাহায্য, পুনর্বাসন ও পুনর্নির্মাণ কাজ অব্যাহত থাকবে। সরকারি এজেন্সি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলাে। ঠিকাদারদের পাওনা মিটিয়ে দিবে।
২১নং নির্দেশ : ইপিআইডিসি, ইপসিক ফ্যাক্টরি ও ইস্টার্ন রিফাইনারি ইপিআইডিসি ও ইপসিকের সকল কারখানায় কাজ চলবে এবং যতদূর সম্ভব উৎপাদন বাড়ানাের চেষ্টা করতে হবে। এই সকল কারখানা চালু রাখার জন্যে প্রয়ােজনীয় অর্থ সরবরাহের ব্যাপারে ইপিআইডিসি ও ইপসিকের যে সকল শাখা খােলা রাখা প্রয়ােজন হবে তা খুলে রাখতে হবে। ইস্টার্ন রিফাইনারির কাজ যথারীতি চালিয়ে যেতে হবে।
২২নং নির্দেশ : বেতন দান। সরকারি ও আধা-সরকারি সংস্থার কর্মচারী ও প্রাইমারী শিক্ষকদের বেতন যাদের রােজ, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক কিংবা মাসিক হিসাবে দেওয়া হয়ে থাকে, তাদের সেভাবে দিতে হবে। যাদের বন্যা সাহায্য মঞ্জুর করা হয়েছে এবং বাকি-বেতন দেওয়ার কথা তা দিয়ে দিতে হবে। বেতন-বিল তৈরির জন্য সরকারি আধা-সরকারি বিভাগের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলাে খােলা রাখতে হবে।
২৩নং নির্দেশ : পেনসন। সামরিক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীসহ অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের পেনসন নির্দিষ্ট তারিখে পরিশােধ করতে হবে।
২৪নং নির্দেশ : এ.জি.(ইপি) ও ট্রেজারি এই নির্দেশে যে সকল কাজ চালিয়ে যাবার জন্যে হুকুম দেওয়া হয়েছে তাদের টাকাপয়সা দেওয়া-নেওয়া ও সরকারি কর্মচারীদের বিল তৈরি করার জন্যে সামান্য সংখ্যক কর্মচারী দ্বারা এ.জি.(ইপি) অফিসের কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
২৫নং নির্দেশ : ব্যাংক (ক) ব্যাংকিং কার্য পরিচালনার জন্যে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এবং প্রশাসনিক প্রয়ােজনে ৪টা পর্যন্ত সকল ব্যাংক খােলা থাকবে (অবশ্য মাঝে টিফিনের ছুটি থাকবে), কিন্তু শুক্রবারে ও শনিবারে ব্যাংকিং কাজের জন্যে সকাল ৯টা থেকে ১১-৩০ মিনিট পর্যন্ত এবং প্রশাসনিক কাজের জন্য ১২ ৩০মিঃ পর্যন্ত খােলা থাকবে। অনুমােদিত লেনদেনের ক্ষেত্রে বুক-ব্যালান্সসহ অন্যান্য কার্যাবলি নিয়মিতভাবে চলবে। (খ) কয়েকটি বিধি-নিষেধ ছাড়া ব্যাংকগুলাে যে কোনাে পরিমাণ জমা গ্রহণ, বাংলাদেশের ভিতর যে কোনাে পরিমাণ আন্তঃব্যাংক ক্লিয়ারেন্স, বাংলাদেশের ভিতর আন্তঃব্যাংক ট্রান্সফার এবং পশ্চিম পাকিস্তান থেকে টিটি বা মেইল ট্রান্সফার ব্যবস্থার মাধ্যমে অর্থ ড্র করাসহ তাদের কাজকর্ম চালিয়ে যাবে। যেসব বিধিনিষেধ মানতে হবে সেগুলাে হচ্ছে : ১. যদি চেকের মধ্যে সংশ্লিষ্ট শ্রমিক সংস্থার প্রতিনিধির বা বেতন রেজিস্ট্রারের সার্টিফিকেট থাকে তাহলে বেতন ও মজুরি পরিশােধ করা। ২. সপ্তাহে এক হাজার টাকা পর্যন্ত বােনাফাইড ব্যক্তিগত ড্রইংস। ৩. চিনিকলের জন্য আখ ও পাটকলের জন্যে পাটসহ শিল্পের কাঁচামাল কেনার জন্যে অর্থ দান। ৪. বাংলাদেশের ক্রেতাদের প্রয়ােজনীয় জিনিসপত্র ক্রয়সহ যে কোনাে বাণিজ্যিক খাতে সপ্তাহে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত পেমেন্ট। ঐ অংক ক্যাশ অথবা ক্যাশ ড্রাফট মারফত উঠানাে যাবে। কিন্তু উপরে উল্লিখিত ৩ ও ৪ নম্বর শর্তে কোনাে অর্থ দেওয়ার পূর্বে অতীত রেকর্ড দেখে ব্যাংককে সন্তুষ্ট হতে হবে যে, অর্থ গ্রহণকারী একজন বােনাফাইড শিল্প অথবা বাণিজ্যিক সংস্থা অথবা ব্যবসায়ী এবং সে যে অর্থ উঠাচ্ছে তা তার এক বছরে সাপ্তাহিক গড় অর্থ উঠানাের। চাইতে বেশি না হয়। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে নিযুক্ত তালিকাভুক্ত কন্ট্রাক্টরদের অর্থদান। তবে যে কর্তৃপক্ষের অধীনে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে তার কাছ থেকে চেকে একটি সার্টিফিকেট আনতে হবে যে, যে টাকাটা উঠাতে চাওয়া হচ্ছে তা উল্লিখিত
কাজের জন্যে প্রয়ােজনীয়। (গ) বাংলাদেশের অভ্যন্তরের যে কোনাে অ্যাকাউন্টে ক্রস চেক ও ডিম্যান্ড ড্রাফট
প্রদান করা ও জমা নেওয়া যাবে। (ঘ) স্টেট ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক, ঢাকা থেকে অর্থ প্রদানের ভিত্তিতে
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে টিটি পাঠানাে যাবে। যে সমস্ত ব্যাংক-এর সদর দপ্তর পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত সেগুলাে ঢাকাস্থ স্টেট ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকের
মাধ্যমে প্রয়ােজনীয় পাওনা গ্রহণ করতে পারবে। (ঙ) অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে নিম্নলিখিত বিষয়ের জন্যে সােমবার, মঙ্গলবার, বুধবার
ও বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা আন্তঃশাখা টেলিপ্রিন্টার সার্ভিস চালু থাকবে। ১. প্রত্যেকটি বাণিজ্যিক ব্যাংককে সােমবার ও বুধবার বিকেল ৩টা থেকে ৪টার
মধ্যে অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে একটি খবর পাঠাতে পারে। ২. প্রত্যেক ব্যাংক অর্থ পাঠানাের ব্যাপারে মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা
 
থেকে ৪টার মধ্যে একটি খবর পেতে পারে। (চ) বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিল সংগ্রহের অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু ক্রস চেক
| বা ক্রস গ্রান্টের মাধ্যমে অর্থ প্রদান করতে হবে। (ছ) অনুমােদিত ডিলারের সাহায্যে ফরেন ট্রাভেলার্স চেক ভাঙানাে যাবে। (জ) কূটনীতিকগণ অবাধে তাদের অ্যাকাউন্টের কাজ পরিচালনা করতে পারবেন
এবং বিদেশি নাগরিকগণ বৈদেশিক মুদ্রা অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতে পারবেন।
এবং বৈদেশিক মুদ্রা গ্রহণ করতে পারবেন। (ঝ) লকার্স পরিচালনার কাজ বন্ধ থাকবে। (ঞ) স্টেট ব্যাংক বা অন্য কোনাে কিছুর মাধ্যমে বাংলাদেশের বাইরে টাকা
পাঠানাে যাবে না। (ট) বিদেশি রাষ্ট্র থেকে লাইসেন্সের মাধ্যমে দ্রব্যাদি আমদানির জন্যে লেটার অব
ক্রেডিট খােলা যাবে। (ঠ) পণ্য বিনিময়ের চুক্তি (যে সমস্ত দ্রব্য ইতিমধ্যে পাঠানাে হয়েছে) মােতাবেক
প্রেরিত দ্রব্যের ছাড় করতে হবে। (ড) ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড ও ইস্টার্ন ব্যাংকিং কর্পোরেশন লিমিটেডের
মারফত বকেয়া রপ্তানী বিল সংগ্রহ করতে হবে এবং এ ব্যাপারে ব্যাংকগুলাের
প্রতি নির্দেশ মােতাবেক কাজ পরিচালিত হবে। 
২৬নং নির্দেশ : স্টেট ব্যাংকও অন্যান্য ব্যাংকের মতাে কাজ করবে এবং সে একই অফিস সময়ে চলবে এবং বাংলাদেশের ব্যাংকিং পদ্ধতি কাজ করার জন্যে ও প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে অনুরূপভাবে খােলা থাকবে। উল্লিখিত কাঠামাে ও বিধি নিষেধ এ ক্ষেত্রে প্রযােজ্য হবে। পি’ ফর্ম বরাদ্দ করা যেতে পারে এবং বিদেশে অবস্থানরত ছাত্র ও অন্যান্য অনুমােদিত প্রাপকের জন্যে বিদেশে প্রেরণের টাকাও গৃহীত হতে পারবে।
২৭নং নির্দেশ : বাংলাদেশের জন্যে আমদানী লাইসেন্স ইস্যুকরণ ও আমদানীকৃত দ্রব্যাদি চলাচলের বিধি-ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্যে আমদানি রপ্তানি কন্ট্রোলারের অফিস নিয়মিতভাবে চলবে।
২৮নং নির্দেশ : সকল ট্রাভেল এজেন্ট অফিস ও বিদেশি বিমান পরিবহণ অফিস চালু হতে পারে। কিন্তু তাদের বিক্রয়লব্ধ অর্থ বাংলাদেশের ব্যাংকে জমা রাখতে হবে। ২৯নং নির্দেশ : বাংলাদেশে সকল অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা চালু থাকবে। ৩০নং নির্দেশ : পৌরসভার ময়লাবাহী ট্রাক, রাস্তায় বাতি জ্বালানাে, সুইপার সার্ভিস এবং জনস্বাস্থ্য বিভাগীয় অন্যান্য ব্যবস্থা চালু থাকবে।
৩১নং নির্দেশ : কোনাে খাজনা কর আদায় করা যাবে না। (ক) পুনঃনির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত-(১) সকল ভূমি-রাজস্ব আদায় বন্ধ থাকবে,
(২) বাংলাদেশের কোথাও কোনাে লবণ কর আদায় করা যাবে না, (৩) বাংলাদেশের কোথাও কোনাে তামাক কর আদায় করা যাবে না, (৪) তাঁতীরা। আবগারী শুল্ক দান ব্যতিরেকেই বাংলার সুতা কিনবেন। মিল মালিক ও ডিলাররা তাদের কাছ থেকে কোনাে আবগারী শুল্ক আদায় করতে পারবেন।
। (খ) এছাড়া সকল প্রাদেশিক সরকারের কর-যেমন প্রমােদ কর, হাট, বাজার, পুল।
ও পুকুরের উপর ধার্যকৃত কর আদায় করা যাবে এবং বাংলাদেশের সরকারের।
অ্যাকাউন্টে জমা দিতে হবে। (গ) অকট্রয়সহ স্থানীয় কর আদায় করা যাবে। (ঘ) কেন্দ্রীয় সরকারের পরােক্ষ কর-যেমন আবগারী কর, বিক্রয় কর এখন।
থেকে আদায়কারী প্রতিষ্ঠান দ্বারা আদায় হবে, তবে তা কেন্দ্রীয় খাতে জমা । করা যাবে না অথবা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে হস্তান্তর করা যাবে না। এসব। আদায়কৃত কর ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক অথবা ইস্টার্ন ব্যাংকিং কর্পোরেশনে । বিশেষ অ্যাকাউন্ট খুলে জমা রাখতে হবে এবং ব্যাংক দুটিও তাদের প্রতি প্রদত্ত নির্দেশ অনুযায়ী এগুলাে গ্রহণ করবে। সকল আদায়কারী প্রতিষ্ঠানকে এ ।
নির্দেশ ও বিভিন্ন সময়ে তাদের প্রতি যে নির্দেশ দেওয়া হবে, তা মানতে হবে। (ঙ) কেন্দ্রীয় সরকারের সকল প্রত্যক্ষ কর, যেমন আয়কর আদায় ইত্যাদি পরবর্তী।
নির্দেশ জারি হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
৩২নং নির্দেশ : পাকিস্তান কর্পোরেশন চালু থাকবে এবং পােস্টাল লাইফ ইন্দুরেন্সসহ  সকল বীমা কোম্পানি কাজ করবে।
৩৩নং নির্দেশ : সকল ব্যবসা শিল্প প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট নিয়মিতভাবেই চলবে। ৩৪নং নির্দেশ : সকল বাড়ির শীর্ষে কালাে পতাকা উত্তোলিত হবে।
৩৫নং নির্দেশ : সংগ্রাম পরিষদগুলাে সর্বস্তরে কাজ চালু রাখবে এবং এ সকল নির্দেশ। যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করে যাবে।

সূত্র : বাংলাদেশ সরকার ১৯৭১-৭৫ এইচ টি ইমাম

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!