৫ জানুয়ারী ১৯৭২ঃ ছাত্রলীগের মুজিব দিবস পালন
মুজিব দিবসের কর্মসূচীর অংশ হিসেবে পল্টন ময়দানে ছাত্রলীগ এক সমাবেশের আয়োজন করে। সভায় সভাপতিত্ব করেন ছাত্রলীগ সভাপতি নুরে আলম সিদ্দিকি, সভায় ভাষণ দেন দলের সাধারন সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ, ডাকসু সহ সভাপতি আসম রব, ডাকসু জিএস আব্দুল কুদ্দুস মাখন। সভায় বক্তারা অবিলম্বে পাকিস্তানে আটক শেখ মুজিবের মুক্তি দাবি করেন অন্যথায় সারা পৃথিবীতে শান্তি বিঘ্নিত হবে। বক্তারা পাকিস্তান আর্মির নিয়াজি, রাও ফরমান আলী সহ শীর্ষ রাজনীতিক ফরিদ আহমেদ, ডাঃ মালিক, নুরুল আমিনের ফাঁসী দাবী করেন। নুরে আলম সিদ্দিকি তার বক্তৃতায় বলেন বহু রক্তদান, বহু মায়ের কান্না, বহু মায়ের লাঞ্ছনা বহু কান্নার বিনিময়ে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় সাধিত হয়েছে কিন্তু মুজিব ভাইকে ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ শেষ হবে না। তিনি বলেন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এখনো চক্রান্ত করছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন মার্কিন দুতাবাসের মাধ্যমে কূটনীতি করছে। পাকিস্তান রক্ষার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন বাংলায় যখন ১০ লাখ লোক নিহত হয়েছে তারা কিছু বলেনি এখন তাদের অবাঙ্গালীদের জন্য দরদ উছলে পড়েছে। তিনি বলেন পাকিস্তানের যুদ্ধবন্দীদের মধ্যে যারা যুদ্ধ অপরাধী তাদের উপর জেনেভা কনভেনশন প্রযোজ্য নয়। তিনি সামরিক ও বেসামরিক যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড দাবী করেন। আসম রব তার বক্তৃতায় বলেন বঙ্গবন্ধু একটি দেশের রাষ্ট্র প্রধান। একটি দেশের রাষ্ট্র প্রধানকে আরেকটি দেশ আটকে রাখতে পারেনা। আব্দুল কুদ্দুস মাখন তার বক্তৃতায় বলেন গণহত্যায় জড়িত কাউকে ক্ষমা করা হবে না। তিনি বলেন যারা স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতা করেছে তারা নতুন চক্রান্তে মেতে উঠেছে।
জন সভা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেন এ কে এম হারুনুর রশিদ, আতিকুর রহমান, ফরহাদ রহমান, আসমত আলী চৌধুরী, মিজানুর রহমান, সালেহ উদ্দিন, দিলওয়ার জাহান, মহিউদ্দিন, কামাল হোসেন, আব্দুল লতিফ, রেহেনা আখতার, খুশনাজ বেগম, মাহবুবা হায়দার, হোশনে আরা, বেবি, সেলিম, হাসনা বানু, খোদেজা কাজী।
সভায় কয়েকটি প্রস্তাব গ্রহন করা হয়
শোক প্রস্তাবঃ মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে সকল অংশগ্রহনকারী নিহতদের প্রতি শোক প্রস্তাব গ্রহন করা হয় এবং যে কোন মূল্যে শহীদানের আদর্শ প্রতিষ্ঠার শপথ গ্রহন করা হয়।
রাজনৈতিক প্রস্তাবঃ ১)স্বাধীন বাংলাদেশে নির্ভেজাল গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, নিরপেক্ষ পররাষ্ট্র নীতি, ধর্মনিরপেক্ষতা অনুসরণ এক কথায় মুজিববাদ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে শপথ গৃহীত ২) সমাজের সর্বস্তরে শোষণ বন্ধ এবং কৃষক শ্রমিকের রাজত্ব প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শপথ গ্রহন ৩) স্বাধীনতা সংগ্রামে সাহায্যকারী দেশ ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়ন, পোল্যান্ড, ভুটানের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয় ৪) স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় সাম্রাজ্যবাদী চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি চরম ঘৃণা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয় ৫) সকল বিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা প্রদান
অন্যান্য প্রস্তাব ঃ ১) কারাগারে আটক সকল মুক্তিযোদ্ধার মুক্তি ২) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমুহ থেকে ভারতীয় বাহিনী অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা ৩) মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত সকল ব্যক্তির পুনর্বাসন ৪) আহত নিহত সকল মুক্তিযোদ্ধার জন্য মাসিক ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা।