You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.07 | সদলবলে উপ-রাজ্যপালের দক্ষিণ ত্রিপুরা সফর | ত্রিপুরা - সংগ্রামের নোটবুক

সদলবলে উপ-রাজ্যপালের দক্ষিণ ত্রিপুরা সফর
বাংলাদেশাগত শরণার্থীগণকে স্থায়ীভাবে আশ্রয় দানের প্রশ্নই ওঠে না

উদয়পুর, ২৯ জুন: বিগত ২৬ জুন ত্রিপুরার লে, গভর্নর শ্রী এ. এল, ডায়াস সস্ত্রীক আগরতলা থেকে রওয়ানা হয়ে সন্ধ্যার পর উদয়পুর বিভাগের পেরাতিয়া বন বিভাগের রেস্ট হাউসে পৌছান। সেখানে উপস্থিত আদিবাসী জনসাধারণ এবং সরকারী কর্মচারীগণ লে. গভর্নর মহােদয়কে অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করেন। পরদিন ২৭ জুন সকালে উপস্থিত আদিবাসী লােকদের মধ্যে শ্রীমতী ডায়াস চকলেট ও বিস্কুট বিতরণ করেন। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সত্ত্বেও সকাল ৭টার পর পেরাতিয়া থেকে রওয়ানা হয়ে লে. গভর্নর সকাল ৮টায় শান্তিরবাজার ডাকবাংলােতে পৌছান। রাস্তায় পতিছড়ি বনবিভাগের বাগানে রবার গাছ থেকে রস নিষ্কাষণের প্রক্রিয়া প্রত্যক্ষ করেন। শান্তিরবাজারে বিলােনিয়া বিভাগের গ্রামীণ জনপ্রতিনিধিদের সাথে পূর্ববঙ্গ থেকে আগত বিরাট উদ্বাস্তু দলের উপস্থিতিতে উদ্ভূত পরিস্থিতি ও সমস্যাদি নিয়ে আলােচনা করেন। এই আলােচনায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের সরকারি প্রবীণগণ অংশগ্রহণ করেন। আলােচনা প্রসঙ্গে লে. গভর্নর জানান যে, সরকার শরণার্থী শিবিরগুলােতে পরিশুদ্ধ পানীয়-জল সরবরাহের কথা বিবেচনা করে প্রয়ােজনীয় অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা করেছেন। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে সাময়িকভাবে যে সকল উদ্বাস্তুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে তাদেরকে দীর্ঘ নবনির্মিত শিরিবগুলােতে স্থানান্তর করে বিদ্যালয় গৃহগুলাে খালি করার জন্য লে, গভর্নর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে পরামর্শ দিয়েছেন। স্থানীয় জনসাধারণের উদ্বাস্তু ত্রাণে আগ্রহ ও সহযােগিতা লক্ষ করে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।
পূর্ববঙ্গ থেকে আগত উদ্বাস্তু সমস্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে, সরকার থেকে আশ্রয়, খাদ্য ও চিকিৎসাদির ব্যবস্থা সাময়িক, স্থায়ীভাবে উদ্বাস্তুদিগকে আশ্রয় দানের কোনাে প্রশ্নই ওঠে না। পূর্ববঙ্গের অস্বাভাবিক অবস্থার অবসান হলে তাদেরকে ফেরত পাঠাবার ব্যবস্থা করা হবে। এই আলােচনা প্রসঙ্গে স্থানীয় যােগাযােগ ও কৃষি উন্নয়ন ব্যবস্থাদি সম্বন্ধে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি সরকার থেকে সত্বর প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা যথাসম্ভব অবলম্বন করা হবে বলে প্রতিনিধিদের আশ্বাস প্রদান করেন। তারপর তিনি মন্ত্রীর বেতাগা ও বাইখােরা উদ্বাস্তু শিবিরগুলাে পরিদর্শন করেন এবং নিজে উদ্বাস্তুগুলাের নিকট থেকে তাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা শােনেন। প্রত্যেকটি শিবিরের শরণার্থীগণ সস্ত্রীক লে, গভর্নর মহােদয়কে সাদর অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করেন। শিবিরবাসী। উদ্বাস্তুগণের পক্ষ থেকে খাদ্য ও আশ্রয় দানের জন্য ভারত সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয় এবং যথাসম্ভব শীঘ্ৰ উদ্বাস্তুগণ পূর্ববঙ্গে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
তারপর তিনি বগাফা এলাকার কালা ছড়াতে বিরাট এলাকা জুড়ে সরকারি ত্রাণ শিবিরগুলাের নির্মাণ কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন এবং বর্ষা সমাগমে ত্রাণ শিবিরগুলাে যাতে অস্বাস্থ্যকর না হয় তার জন্য সচেষ্ট হতে বিভাগীয় কর্মকর্তাদের পরামর্শ দেন।
বিকাল ৩টার পর তিনি বগাফা থেকে রওয়ানা হয়ে চন্দ্রপুর গ্রামে শরণার্থী শিবিরে এসে পৌছান। রাস্তায় পতিচড়িতে বনবিভাগের রেঞ্জ অফিসে রবার গাছের নিষ্কাশিত রস থেকে রবার তৈরি করার বিভিন্ন প্রক্রিয়া আগ্রহের সাথে লক্ষ করেন। রবার তৈরির খরচ কেরলা রাজ্য থেকে কম হবে জেনে তিনি ত্রিপুরায় রবার শিল্পের উজ্জ্বল ভবিষ্যত সম্বন্ধে বিশেষভাবে আস্থা প্রকাশ করেন। চন্দ্রপুর শরণার্থী শিবিরে লে, গভর্নরকে শিবিরবাসীগণের পক্ষ থেকে বিপুলভাবে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। চন্দ্রপুর ত্রাণ শিবিরে শ্রীমতি ডায়াস আগরতলা মহিলা সমিতির সহযােগিতায় দুঃস্থ লােকদের মধ্যে কাপড় ও জামা বিতরণ করেন এবং শিবিরবাসীগণের মধ্যে চকলেট ও বিস্কুট বিতরণের ব্যবস্থা করেন। বিকাল ৫টায় তিনি আগরতলার উদ্দেশে চন্দ্রপুর ত্যাগ করেন। উপরােক্ত সফরের সময় ত্রিপুরার চিফ সেক্রেটারি, পুনর্বাসন অধিকর্তা, বনবিভাগের অধিকর্তা, জনসংযােগ ও পর্যটন অধিকর্তা, দক্ষিণাঞ্চলের জেলা শাসক, পুলিশ সুপার ও সহকারী জেলা শাসক এবং স্থানীয় বিভিন্ন বিভাগের সরকারি কর্মকর্তাগণ শ্ৰী ডায়াসের সঙ্গে ছিলেন।

সূত্র: ত্রিপুরা
৭ জুলাই, ১৯৭১
২২ আষাঢ়, ১৩৭৮