You dont have javascript enabled! Please enable it!

নুরুল কাদের খান ওরফে মােহাম্মদ নুরুল কাদের (সিএসপি ১৯৬১)

মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিমূলক তৎপরতায় এঁর দুঃসাহসী ভূমিকা সম্বন্ধে পাবনা জেলায় মুক্তিযুদ্ধ সংগঠকদের অন্যতম মুক্তিযােদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক ওরফে মুকুল মিয়ার আত্মকথন (১৮/১১/১৯৭৩ তারিখে গ্রন্থিত) সূত্রে জানা যায় যে, ২৫শে মার্চে পাকিস্তান সেনাবাহিনী জেলার নিরীহ জনসাধারণের ওপর আক্রমণ চালানাের আগে থেকে (প্রত্যক্ষত ১০ই মার্চ থেকে) স্থানীয়রা শত্রুদের যে কোনাে আক্রমণ প্রাথমিকভাবে প্রতিরােধের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। পরে পাকবাহিনী যখন পাবনা শহরে প্রবেশ করে তখন জেলা প্রশাসক (এম, এন, কাদের খান) এবং পুলিশপ্রধানের সঙ্গে তারা আলােচনাক্রমে কিছু প্রাথমিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন।

আব্দুর রাজ্জাকের কথায়: “২৪শে মার্চ পাক-বাহিনী নগরবাড়ী হয়ে পাবনা শহরে প্রবশে করে। তাদের ভারী হাতিয়ারের সামনে টিকতে পারবে না বলে আমাদের বাহিনী বাধা সৃষ্টি করেনি। পাক-বাহিনী পাবনা শহরে প্রতিটি অফিস আদালতে বাংলাদেশের পতাকা দেখে শহরে কার্টু দিয়ে কয়েক রাউণ্ড গুলি ছুঁড়ে এবং রাতের বেলা অনেক মহিলার উপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। এদিকে আমরা কয়েকটি দল যােগাযােগ করে একত্রিত হই এবং ডিসি ও এসপি সাহেবের সাথে যােগাযােগ করে পাক সেনাদের আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুতি নিই। আমরা শহরের আশেপাশের গ্রামগুলােতে জানিয়ে দিই যে আগামী কাল আমরা পাক বাহিনীকে আক্রমণ করবাে এবং তারা যেন তাদের যা কিছু আছে তা নিয়ে আমাদের সাথে যােগ দেয়। ঘােষণা দেয়ার সাথে সাথে হাজার হাজার জনতা ঢাল, শুরকী (শরকি), ফালা, তীর ধনুক, রামদা, বর্শা, ইত্যাদি নিয়ে ঢোল থালা পিটিয়ে ‘জয়বাংলা’ শ্লোগান দিতে দিতে চর আশুতােষপুরে এসে জমায়েত হয়।/ ২৪শে মার্চ ভাের রাত ৪টার সময় পাক-বাহিনী পুলিশ লাইন আক্রমণ করে। পলিশ বাহিনী পূর্ব হতেই ডিফেন্সে ছিল। পাক-বাহিনী আক্রমণ করার সাথে সাথে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।/ ২৫শে মার্চ সকাল ৭টার সময় আমরা বকুলের নেতৃত্বে হাজার হাজার জনতাকে নিয়ে “জয়বাংলা” শ্লোগান দিতে দিতে শহরে ঢুকে পড়ি এবং পাক-বাহিনীকে আক্রমণ করি।”২৬

মক্তিযুদ্ধে এম. এন, কাদের খান ওরফে মােহাম্মদ নুরুল কাদেরের যােগদান সম্পর্কে সা’দত হুসাইন লিখেছেন: “স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালে নুরুল কাদের খান ছিলেন পাবনার জেলা প্রশাসক (পরবর্তীতে দেশের একজন সফল শিল্পোদ্যক্তা ও রপ্তানিমুখী তৈরিপােষাক শিল্পের পথিকৃৎ)। এ বয়সেই পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের এক অতি খ্যাতিমান এবং আকর্ষণীয় রাজপুত্রে পরিণত হয়েছিলেন। আমাদের মতাে তরুণ সিএসপিদের কাছে তিনি ছিলেন যেন স্বপ্নের নায়ক। তাঁকে এক নজর দেখা কিংবা তার সাথে কথা বলা যেন ছিল বিরাট একটা ব্যাপার।../ তারপর স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে নুরুল কাদের খান পাবনা জেলায় যুদ্ধের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। জেলা প্রশাসক হিসাবে খুব সহজেই এ নেতৃত্ব তার হাতে চলে আসে। এক সময় তিনি বিমানবাহিনীতে কাজ করেছিলেন। যুদ্ধ সম্পর্কে তার মােটামুটি ধারণা ছিল। সেসব ধারণা এবং চৌকষ ব্যক্তিত্ব ত(তার নেতৃত্বকে সুদৃঢ় করে। বেশ কয়েকদিন পাবনা শত্রুমুক্ত স্বাধীন এলাকা হিসাবেই থাকে।/ তাঁরপর (তারপর) আস্তে আস্তে অন্য অনেক শহরের মত পাবনার পতনও সমাসন্ন হয়ে আসলে জনাব নুরুল কাদের খান একটি জীপ গাড়ি নিয়ে পাবনা থেকে কুষ্টিয়া জেলার সীমান্তে পাড়ি জমান। সঙ্গে জেলা প্রশাসকের জীপ গাড়ি এবং পাবনা ট্রেজারির অর্থ নিয়ে আসেন। সে জীপ গাড়ি তিনি কলকাতা শহরেও নিয়ে এসেছিলেন। কলকাতা এসেই তিনি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সহায়তায়, বিশেষ করে স্বাধীন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের সহায়তায় মুজিবনগর সরকারের সচিবালয় (৮ থিয়েটার রােড, কলকাতা) প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁকে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এ পদকে বলা হত সেক্রেটারি এস এন্ড জিএ (সার্ভিসেস এন্ড জেনারেল এডমিনিস্ট্রেশন)। একই ধাঁচে তিনি নিজের পদবী সাজিয়ে নিয়েছিলেন, সেক্রেটারি, জেনারেল এডমিনিস্ট্রেশন হিসাবে।”২৭

তার এজাতীয় পদবিগ্রহণ অর্থাৎ ‘সেক্রেটারি জেনারেল’ পদবি ভারতীয় সমপর্যায়ের আধিকারিকদের সঙ্গে যােগাযােগে বিশেষ সহায়ক হয়েছিল । জনাব হুসাইন জানাচ্ছেন: “ওয়ালি ভাই (সিএসপি ওয়ালিউল ইসলাম) বলেছেন যে, জনাব খান (নুরুল কাদের খান) তাকে এই পদবীর মধ্যে কোনাে কমা ব্যবহার করতে নিষেধ করেছিলেন। ফলত তিনি প্রায়ই নিজেকে সেক্রেটারি জেনারেল হিসাবে পরিচয় দিতেন এবং ভারতীয়দের নিকট থেকে সে মতে সুযােগ সুবিধা, প্রটোকল গ্রহণ করতেন। তাঁর কথাবার্তা, চলাফেরা, আবাসন, সবই খুব শানদার ছিল। সুতরাং সরকারের সর্বোচ্চ পদ সেক্রেটারি জেনারেল তার জন্য বেমানান ছিল না। তাকে প্রকৃতই সেক্রেটারি জেনারেল মনে হত। তার চলন-বলন এবং নেতৃত্ব আমরাও বেশ উপভােগ করতাম। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে এ ধরনের ব্যক্তিদের প্রয়ােজন রয়েছে বলে মনে হত, যদিও তাঁর সম্বন্ধে নানা মুখরােচক কাহিনী বাজারে চালু ছিল। এতদসত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধের সেই প্রাথমিক পর্যায়ে, সেই দুঃসময়ে মুজিবনগর সরকারের সচিবালয় গড়ে তুলতে তিনি যে অসাধারণ অবদান রেখেছিলেন তাকে কোনাে রকমেই খাটো করে দেখার অবকাশ নাই।”২৮

সৈয়দ আব্দুস সামাদ তার সম্বন্ধে লিখেছেন: “মােহাম্মদ নুরুল কাদের (ঝিলু) ইমামের ব্যাচের সি.এস.পি. অফিসার এবং আপেক্ষিক জ্যেষ্ঠতায় তার পরে অবস্থিত। তিনি সাধারণ প্রশাসনের দায়িত্বে নিযুক্ত সচিব। পাবনা জেলা প্রশাসক থাকাকালীন দুর্ধর্ষ (দুর্ধর্ষ) সংগ্রাম পরিচালনা করেছিলেন। প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র, গােলাবারুদ এবং অন্যান্য সম্পদ আর বিশাল এক গণবাহিনী নিয়ে তিনি মুজিবনগরে আসেন। তার ‘ক্লাশ’ এবং স্টাইল’ অত্যন্ত উচ্চমানের। সুদর্শন কাদেরকে অনেকটা ফিদেল ক্যাস্ট্রোর মতাে দেখাতাে। তিনি কিছুটা অস্থির প্রকৃতির, ধৈর্যও আসাদুজ্জামান এবং ইমামের চেয়ে অনেক কম। তার পছন্দ অপছন্দও চূড়ান্ত পর্যায়ের। তিনি নিজের কাজ অবশ্যই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতেন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনের সাথে তার বিশেষ একটা সমীকরণ ছিলাে এবং তিনি তার পূর্ণ আস্থাভাজন ছিলেন। যে কোনাে কারণেই হােক তিনি প্রথম থেকেই আমাকে অপছন্দ করেন। এটা আমার জন্য পরবর্তিতে শাপে বর হওয়ার সমতুল্য ছিলাে। কাদের গুণি(ণী) এবং বহুমুখি প্রতিভায় দীপ্ত ছিলেন, যদিও তার বর্ণাঢ্য অভিজ্ঞান সমৃদ্ধ জীবনের প্রথমার্ধে আমার বিবেচনায় এগুলাে বেশ স্পষ্ট করে দৃশ্যমান হয়নি। তবে তার দেশপ্রেম আর কষ্ট সহিষ্ণুতা অসাধারণ পর্যায়ের। তিনি মুজিবনগর সচিবালয়ের সবচেয়ে আলােচিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন সেসময়। সাচিবিক দায়িত্ব ছাড়াও তিনি কমান্ডােদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিতেন।”২৯

এও জানা যায়, পাক হানাদার বাহিনীর অধিনায়ক পূর্বপাকিস্তানের সামরিক গভর্নর টিক্কা খান তুখােড় ব্যুরােক্রেট-মুক্তিযােদ্ধা নুরুল কাদের খানের মাথা বা কল্লার জন্য এক লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘােষণা করেছিল।৩০

বিমান বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা আহমেদ রেজা লিখেছেন: “শুনেছিলাম যে, নুরুল কাদের খান বাংলাদেশ সরকারের সচিব পদে নিয়োজিত হয়েছেন, দীর্ঘকালের বন্ধু তিনি, তার সাথে দেখা করার আগ্রহ ছিল আমার। যুদ্ধের শুরুতেই পাবনা জেলার ডেপুটি কমিশনার নুরুল কাদেরের অসীম সাহসিক তৎপরতা পাক সেনাদের জন্য নিঃসন্দেহে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছি। ( উইন কমান্ডার ) বাশারকে সাথে নিয়ে নুরুল কাদেরের দফতরে এলাম। এত বিপদ -আপদের পর ওর দেখা পেয়ে খুব আনন্দ হলাে। সেও তার স্বভাবগত উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলাে আমাকে জড়িয়ে ধরে। বাশারের সাথে পরিচয় হলাে। দীর্ঘ দাড়ি গোঁফে ঢাকা নুরুল কাদেরের মুখ, জলপাই সবুজ রঙের জামা ও প্যান্ট পরা ওকে দেখতে বেশ ভালােই লাগলাে। আমরা তিনজনে যখন নিজেদের দুর্যোগময় সব অভিজ্ঞতা বর্ণনা ব্যস্ত,   এমন সময় সেই কামরায় একটা হৈ চৈ শুরু হলাে। বাশার ও আমি কিছু বােঝার আগেই কামরার মধ্যে পরিচ্ছন্ন চেহারার এক ভদ্রলােকের সাথে নুরুল কাদেরের প্রচণ্ড বাক-বিতণ্ডা শুরু হয়ে গেলাে। এক পর্যায়ে দু’জনের মধ্যে হাতাহাতির উপক্রম হলাে। আমরা দু’জন ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে পড়েছিলাম, কিন্তু হাতাহাতির উপক্রম দেখে আমরা ওদের দুজনের মাঝখানে ঝাপিয়ে পড়লাম। বাধাপ্রাপ্ত হয়ে অপর ভদ্রলােকটি প্রচণ্ড ক্রোধের সাথে কক্ষ ত্যাগ করলেন। অবশ্য কক্ষ ত্যাগের আগে ‘সি-এস-পি’দের সম্বন্ধে অতি শ্ৰতিকটু কিছু মন্তব্য করলেন এবং সেই সাথে ঘােষণা করলেন যে, বিতর্কিত ব্যাপারটির নিষ্পত্তির জন্য এখনই তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার করবেন। এমন উপভােগ্য ঘটনা নিজ চোখে দেখার জন্য ইতিমধ্যেই বহু কৌতুহলী মানুষ। জড়াে হয়েছে কামরাটির দরজা-জানালায়। নুরুল কাদেরকে প্রশ্ন করে জানতে পারলাম যে, অপর, ব্যক্তিটি প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক বিষয়ক সহকারী, প্রাদেশিক সংসদে নির্বাচিত সদস্য ব্যারিস্টার রহমত আলি। রহমত আলি অবশ্য তার ছদ্মনাম (প্রকৃতপ্রস্তাবে ইনি হলেন ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম)। যুদ্ধকালে  কয়েকজন এমন ছদ্মনামই ব্যবহার করতেন। বিতর্কের বিষয়বস্তু ছিলাে বাংলাদেশ থেকে আনীত কয়েকটি ট্রাক ও জিপ গাড়ি, যা নুরুল কাদের অধিগ্রহণ করে শরণার্থীদের ত্রাণকাজে ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছিলাে। শুনলাম যে, গাড়ি সম্বন্ধে এই বিতর্কিত ব্যবস্থা প্রধানমন্ত্রীর অনুমােদনক্রমেই সচিব নুরুল কাদের নিজের কাঁধে নিয়েছিলাে। অথচ প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সহকারী সেই কার্যক্রমের বিরােধিতা করছেন !”৩১

আব্দুল খালেকের পূর্বোক্ত আত্মজবানি থেকে জানা যায়, “১৭ই এপ্রিলের ঘােষণার পরিপ্রেক্ষিতে মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। কিন্তু সরকারের কোন জানা যায়: প্রশাসনিক সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। শুধু কর্নেল ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত করা হয়েছিল। মুজিবনগর সরকারের খসড়া প্রশাসনিক কাঠমো  গড়ে তােলার ভার আমাদেরকে দেয়া হয়। পাবনার ডেপুটি কমিশনার নুরুল কাদের খান এককালে বিমান বাহিনীর অফিসার হিসেবে কাজ করেছেন। তাছাড়া পাবনায় তিনি পাক-বাহিনীর সঙ্গে মুখােমুখি যুদ্ধ করেছেন। প্রশাসনিক খসড়া তৈরীতে নুরুল কাদেরের অবদান ছিল সবচেয়ে বেশী। আসাদুজ্জামান, নুরুল কাদের ও আমি অফিসার্স ইনচার্জ পদবীতে প্রশাসনের দায়িত্বভার গ্রহণ করি। আমাদের কোন সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিং ছিল না। কয়েকটি চেয়ার টেবিলেই আমরা সকলে মিলেমিশে বসে কাজ করেছি। আর আমাদের সঙ্গে যারা কাজ করেছেন তারাও একই সঙ্গে বসেছেন। কয়েকমাস পর যখন অন্যান্য অফিসার এসে যােগ দেন তখন আমরা সচিব, উপসচিব ইত্যাদি পদের সৃষ্টি করি। আমি স্বরাষ্ট্র সচিব এবং উপরন্তু আই জি পুলিশের দায়িত্বে ছিলাম । নুরুল কাদের খান পাবনা ট্রেজারির যে কয়েক কোটি টাকা সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন সেই টাকাই ছিল মূলতঃ মুজিবনগর সরকারের আর্থিক সম্বল ।.. আসাদুজ্জামান অর্থ সচিব, নুরুল কাদের খান সংস্থাপন সচিবের কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে নুরুল কাদের খান অভাবনীয় প্রতিভার পরিচয় দেন। সেক্টর, সাব-সেক্টর ইত্যাদি বেসামরিক ও সামরিক প্রতিষ্ঠান মুখ্যতঃ তারই ধ্যান ধারণা। ১৭০০ মাইল বর্ডারে এই সব প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলার কাজ কিরূপ কঠিন হতে পারে তা হয়ত অনেকের ধারণায় আসবে না।”৩২

১৭ই এপ্রিল মুজিবনগরে বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠাকালে স্বাধীনতার ঘােষণাপত্র পাঠকারী অধ্যাপক মােহাম্মদ ইউসুফ আলী তার এক আত্মজবানিতে (নভেম্বর ১৯৮৪) উল্লেখ করেছেন: ‘..যুব অভ্যর্থনা শিবির ছাড়াও তৎকালীন সশস্ত্র বাহিনী, ই,পি,আর, আনসার মুজাহিদ যারা প্রথম থেকে সরাসরি যুদ্ধে জড়িত ছিলেন (কারণ তাঁরা ছিলেন শিক্ষাপ্রাপ্ত, এবং প্রশিক্ষণের প্রয়ােজন ছিল না। তাদের শিবিরগুলির দায়িত্বও আমাদের মন্ত্রিকে (মন্ত্রীকে) নিতে হয়েছে;.. এসব যুব শিবির সরাসরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এগুলােতে প্রশিক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও মেজর পর্যায়ের অফিসারবৃন্দ। এগুলির পরিচালনা ও নিয়ােগ-এর জন্য গঠন করা হয় “Board of Control Youth Camps”। আমাকে এর চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। সদস্য ছিলেন (১) ডঃ মফিজ চৌধুরী, (২) ক্যাপ্টেন করীম, (৩) শ্রী গৌর চন্দ্র বালা। সচিব ছিলেন তৎকালীন সি, এস, পি, জনাব নুরুল কাদের খান।”৩৩

প্রসঙ্গত স্বয়ং মােহাম্মদ নুরুল কাদের রচিত একাত্তর আমার গ্রন্থপাঠ থেকেও অবগত হওয়া যায় মুক্তিযুদ্ধে তার অংশ গ্রহণের প্রেক্ষাপট এবং প্রবাসী মুজিবনগর সরকারে যােগ দিয়ে সংস্থাপন সচিবের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব নির্বাহকালীন বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা।

Reference: মুক্তিযুদ্ধে সিএসপি ও ইপিসিএস অফিসারদের ভূমিকা

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!