৩০ মার্চ ১৯৭১
চট্টগ্রাম শহরে শেষ লড়াই
এই দিনে দুপুরের মধ্যে পাকসেনারা পোর্টের দিক থেকে বরফকল সড়ক হয়ে এখানে পৌছে যায় এবং সদরঘাট, রেলওয়ে ষ্টেশন এবং স্টেডিয়ামের দিকে তারা অগ্রসর হতে থাকে। ছোট একটি দল কোর্ট হিলের দিকেও পা বাড়ায়। কিন্তু হিলে অবস্থানরত ইপিআর সৈনিকদের বুলেট বৃষ্টিতে পাকিস্তানীদের পিছু হটে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে হয়।
একই দিনে হালিশহরেও সকাল ৮টা থেকে সংঘর্ষ চলতে থাকে। পাকিস্তানীরা মরিয়া হয়ে কামান দেগে চলছিল। নৌবাহিনীর সবগুলি কামানই তখন সক্রিয় ছিল। ক্রমাগত ৬ ঘন্টা যাবত তারা হালিশহরের উপর গোলাবর্ষণ করে। কামানের ছত্রছায়ায় শত্রুরা হালিশহরের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা চালায়। কিন্তু ইপিআর সেনাদের পাল্টা আক্রমণের মুখে অগ্রগতি লাভে ব্যর্থ হয়ে শত্রুরা বিমান বাহিনীর সাহায্য প্রার্থনা করে। আধ ঘন্টার মধ্যে দুটি বিমান চলে আসে। এবং বেলা সাড়ে বারোটা থেকে ইপিআর অবস্থানের উপর ক্রমাগত বিমান হামলা চলতে থাকে।বিমান হামলায় চট্টগ্রাম কালুরঘাট ট্রান্সমিটারটি বিধ্বস্ত হয়। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের বীর শব্দ সৈনিকগণ মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় একটি ক্ষুদ্র এক কিলোওয়াট ট্রান্সমিটার নিয়ে রামগড় হয়ে আগরতলা চলে যান।
বিকালের মধ্যে শত্রুরা হালিশহর দখল করে নিল। হালিশহর পতনের পর শত্রুদের পুরো দৃষ্টি পড়লো কোর্ট হিলের উপর। এটাই ছিল শহরে সর্বশেষ ঘাটি, সর্বশেষ আশা। বিভিন্ন দিক থেকে অবস্থানটির উপর কয়েকবারই হামলা হল। কিন্তু প্রতিবারই ইপিআর সৈন্যরা তা প্রতিহত করে! এরপর এল ট্যাংক বহর। অগ্রবর্তী ট্যাংকটি পাকা রাস্তা বেয়ে উপরের দিকে উঠতেই আমাদের সৈন্যদের ট্যাংক বিধ্বংসী শেলের আঘাতে তা অকেজো হয়ে পড়লো। ট্যাংকটি অকেজো হয়ে থেমে পড়লে পেছনে অন্যান্য ট্যাংক এবং পদাতিক সৈন্যরা কিছুটা থমকে দাঁড়ালো। পরবর্তীতে তারা জোরালো আক্রমন করলে ইপিআর বাহিনি পশ্চাদপসরণ করে। এদিকে চট্টগ্রাম থেকে এম আর সিদ্দিকী, জহুর আহমেদ চৌধুরী, আতাউর রহমান খান এবং আব্দুল্লাহ আল হারুন সাব্রুম সীমানত দিয়ে আগরতলা পৌঁছান। আগরতলা শচীন সেনগুপ্তের কাছে আওয়ামীলীগ নেতাগণ অস্ত্রশস্ত্রের সহায়তার আবেদন জানান।