28 march
শ্যানবার্গ ছিলেন সেই ৩৫ জন বিদেশী সাংবাদিকদের একজন যাকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে শনিবার সকালে বহিষ্কার করা হয়। সকালে যখন ঢাকা থেকে বের করে দেয়া হচ্ছিল তখনো অনেক জায়গায় আগুন জ্বলছিল এবং গুলির শব্দ আসছিল।
.
সামরিক ট্রাকের সুরক্ষিত বহরে এয়ারপোর্টে যেতে যেতে সাংবাদিকরা দেখতে পাচ্ছিল রাস্তার দুই পাশের দরিদ্র বাঙালিদের খড়ের ছাদে সৈন্যরা আগুন দিচ্ছিল কারণ তারা ছিল স্বাধীনতাকামী।
.
যখন বৃহস্পতিবার রাতে সামরিক একশন শুরু হল তখন সৈন্যরা বিজয় স্লোগান দিচ্ছিল। তারা স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, মেশিনগান ও গুলি ছুড়ে ঢাকার বহু অংশে আগুন দেয়।
.
যখন বিদেশী সাংবাদিকদরা পরিস্থিতি দেখার জন্য হোটেলের বাইরে যেতে চেয়েছে তখন সেনাবাহিনীর প্রহরীরা তাদের যেতে দেয়নি এবং বলেছে বের হলে তাদের গুলি করা হবে।
.
রাত ১টা ২৫ মিনিটে হোটেলের ফোন লাইন বিকল হয়ে যায়। হোটেলের বাইরের মিলিটারি গার্ড এটা বন্ধ করে দেয়। একই সময়ে টেলিগ্রাফ অফিসের আলো নিভে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এবং অন্যান্য এলাকায় ভারী স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের শব্দ শোনা যায়।
.
রাত ২ টা ১৫ মিনিটে একটি মাউন্টেড মেশিন গান সহ একটি জীপ্ হোটেলের সামনে দিয়ে ময়মনসিংহ রোডের দিকে যায় এবং পাশে একটি বাজারের সামনে থামে। বন্দুক দ্বিতীয় তলায় জানালার দিকে তাক করা ছিল। প্রায় এক ডজন সেনা রকেট পিস সহ তাদের সাথে যোগ দেয়।
.
দ্বিতীয় তলা থেকে হঠাৎ শব্দ আসে “বাঙালিরা ঐক্যবদ্ধ!” এবং সৈন্যরা তখন মেশিনগান দিয়ে নির্বিচারে ভবনের দিকে এলোমেলো গুলি চালায়। সৈন্যরা তখন একটি সরু গলি দিয়ে বাজারের মধ্যে প্রবেশ করে গুলি চালায় এবং সরু গলি গাড়ি দিয়ে ব্লক করে। সৈন্যদের ফ্ল্যাশলাইটের আলোয় সাংবাদিকরা ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের ১০ তলা থেকে এসব অবিশ্বাস্য ঘটনা দেখছিল।
.
৪ টার পর পর চিৎকার কিছুটা কমল, কিন্তু মাঝে মাঝে কামানের গুলি শোনা যেতে লাগল। দূর থেকে ট্রেচার বুলেট হোটেলের দিয়ে ছুটে আসল।
.
৪ টা ৪৫ মিনিটে আরেকটি বড় আগুন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস সদর দপ্তরে দেখা গেল।
.
৫ টা ৪৫ মিনিটে ভোরের অস্পষ্ট আলোয় দেখা গেল ছয়টি চীনের তৈরি টি-৫১ হালকা ট্যাংকে চড়ে সেনারা শহরের প্রধান রাস্তায় টহল দিচ্ছে।
.
গতকাল সকাল থেকে হেলিকপ্টার পরিদর্শন করছে এবং রেকি করছে। গত নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সময় ত্রাণ কাজের জন্য সৌদি আরব পাকিস্তানকে ৪ টি হেলিকপ্টার দিয়েছিল। জানা যায় সেগুলো এই কাজে ব্যাবহ্রিত হচ্ছে।