১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ঃ চট্টগ্রাম মুক্ত
মুক্তিবাহিনী আজ মুক্ত চট্টগ্রামে প্রবেশ করে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৮৩ পার্বত্য ব্রিগেড ১৫ তারিখে কুমিরায় আনন্দ স্বরূপের কিলো কোর্সের সাথে যুক্ত হয়ে আজ চট্টগ্রামে প্রবেশ করেছে। এর আগে ব্রিগেডটি লাকসামে ছিল। এ ব্রিগেডে মুক্তিবাহিনীর ৯ বেঙ্গল সংযুক্ত ছিল। ১৫ তারিখ সন্ধ্যায় তারা পাহাড়ের দিকদিয়ে যাত্রা করে দক্ষিন দিক দিয়ে সড়কে উঠে ফৌজদারহাট ও ভাটিয়ারীর পাক সৈন্যদের চট্টগ্রাম ও ক্যান্টনমেন্ট সৈন্যদের পৃথক করে ফেলার পর পাক বাহিনী আর প্রতিরোধ করতে এগিয়ে আসেনি। ১৬ ডিসেম্বর ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী ভাটিয়ারীতে অবস্থান করতে থাকে কারন স্রখানে ছোট একটি ব্রিজ পাকিস্তানীরা ধ্বংস করেছিল। তার বিকল্প পথ তৈরি করতে ১৬ ডিসেম্বর পার হয়ে যায়। । চট্টগ্রামে ১৬১ অফিসার ৩০৫ জেসিও ৮৬১৮ জন সৈনিক আত্মসমর্পণ করে। এখানে পাকিস্তানী সৈন্যদের ৮০% আধাসামরিক। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে পতাকা উড়ানো হয়। পতাকাটি ছিল মেজর রফিকের সংগ্রহের। চট্টগ্রামে আত্মসমর্পণের পর বিভিন্ন দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করার জন্য ব্রিগেডিয়ার সান্ধু কয়েক জুনিয়র আর্মি অফিসার কাজে লাগিয়েছিলেন। এতে ভাল ফল পাওয়া গিয়েছিল।
পাকিস্তান কমান্ডারের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামের সকল পাক সেনা ইউনিট গুলোকে মাঝরাতেই গুটিয়ে ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে ১৭ ডিসেম্বর সকাল ৬টায় অস্র সংবরণের জন্য জড়ো হতে আদেশ দেয়া হয়। চট্টগ্রামে এদিনে সারেন্ডার করতে যাচ্ছেন ৯১ ব্রিগেডের ব্রিগেডিয়ার মিয়া তাস্কিন উদ্দিন আর তা গ্রহন করতে যাচ্ছেন ৮৩ ব্রিগেডের ব্রিগেডিয়ার হরিন্দর সিং সান্ধু। ৯১ ব্রিগেডে ছিল ২ কোম্পানি ২৪ এফএফ, ১১ ও ১৪ এপকাফ, ১ ব্যাটেলিয়ন রেঞ্জারস, ১ ব্যাটেলিয়ন মুজাহিদ, মিজো বাহিনী, চাকমা রাজাকার। ভারতীয় ৮৩ ব্রিগেডে ছিল ২ রাজপুত, ৩ ডগরা, ৮ বিহার, ৯ বেঙ্গল। চট্টগ্রাম অভিযানে কিলো ফোরস (৩১ জাঠ, ৩২ মাহার , ১০ বেঙ্গল, ++) থাকলেও অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার আনন্দ স্বরূপ এই অনুষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। ভারত বিভাগ পূর্ব সেনাবাহিনীতে তাস্কিনের প্রশিক্ষক ছিলেন সান্ধু। ১৭ তারিখ সকালেই তাস্কিন মেজর আরশাদ আলি খানকে ভারতীয় কম্যান্ডারের খোজে পাঠান। আরশাদ সাদা পতাকা লাগিয়ে ১ জন ক্যাপ্টেন নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন কমান্ডারের খোজে। তার যাত্রাপথে একটি ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত থাকায় সরাসরি শহরে যাওয়ার উপায় ছিল না। তিনি সেখানে পৌছলে এক ভারতীয় প্লাটুনের মুখোমুখি হন।
প্লাটুনের শিখ কম্যান্ডার তাদের শহরে যেতে মানা করলে তারা ক্যাম্পে ফিরে আসেন। পরে তাদের আরেক দায়িত্ব দিয়ে আবার পাঠান তাস্কিন। সৈন্য পরিবহণের জন্য যে গাড়ীগুলি তারা এনেছিল তাদের ড্রাইভাররা পালিয়ে গিয়েছিল। সৈন্য পরিবহণের জন্য তাদের আরও গাড়ী আনার প্রয়োজন ছিল। তারা আবার সেখানে গেলেন। এর মধ্যেই সেই ব্রিজের কাছে ব্রিগেডিয়ার সান্ধু চলে আসেন। তার গাড়ী সেই নালা অতিক্রম করার চেষ্টা কালে গাড়ী সেখানে আটকে যায়। সান্ধু পায়ে হেটে এপারে আসেন সেখানে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ভাল গাড়ী রাখা ছিল। সান্ধু সে গাড়ীতে না চড়ে পাক জীপে তাদের ক্যাম্পে আসেন। সেখানে তাস্কিনের সাথে আত্মসমর্পণ আলোচনা করেন। যাওয়ার সময় তিনি পাক মেজর আরশাদের সাথে বিভিন্ন বিষয় আলোচনা সেরে নেন। আরশাদ সান্ধুকে বিহারীদের রক্ষার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন। সান্ধু ক্যাম্প থেকেই সেখানে তার ৮ বিহার ব্যাটেলিয়ন নিয়োজিত করেন। সান্ধু কমিশনার অফিসে তার সদর দপ্তর করবেন এবং মেজর আরশাদের সাহায্য চান। তিনি মেজর আরশাদকে সেখানে নিয়ে যান। সেখানে গেলে এক ঘটনার জের ধরে এক বালক /মুক্তিযোদ্ধা আরশাদকে হত্যার চেষ্টা করে। ভারতীয় সৈন্যরা তাকে উদ্ধার করে। সান্ধু পরে সারা শহর ঘুরে দেখেন বিহারীদের স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা নেন তারপর তিনি হোটেল আগ্রাবাদে যান। সেখানে এক কাপ চা পান করেন। এখানে একটা বিষয় অনেকে জানে না সেটা হল চট্টগ্রাম ১ নং সেক্টরের হলেও সেখানে ২ নং সেক্টরের ৯ এবং ১০ নং বেঙ্গল শেষের অপারেশনে যুক্ত ছিলেন এবং আত্মসমর্পণ পরবর্তী সেখানেই নিয়োজিত ছিলেন।