You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.14 | বুদ্ধিজীবী হত্যা - সংগ্রামের নোটবুক

১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ঃ বুদ্ধিজীবী হত্যা

ভিজনিউজ/ রয়টার জানায় বিগত কয়েকদিন যাবৎ বিশেষ করে ১৩ ও ১৪ তারিখে শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে অপহৃত বুদ্ধিজীবীদের ১২৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ডাক্তার, শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক আছেন। নিহতরা স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করে থাকতে পারেন। তাদের লাশ বেশীরভাগই পচে বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। এদের প্রায় সকলের হাত পা বাধা ছিল এবং এদের বেয়নেট দ্বারা খুচিয়ে হত্যা করা হয়। দুজন রাজাকার গ্রেফতার হওয়ার পর তাদের নির্যাতন করার সময় তার এসব হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে এবং সম্ভাব্য লাশ ফেলার স্থানের কথা জানায়। বেশিরভাগ লাশের পচন ৪ দিনের পুরনো এবং কতক পাকিস্তান বিরোধী বুদ্ধিজীবীকে আটক করা হয়েছিল তাদের পতনের আগ মুহূর্তে।

পরে বিভিন্ন সময়ে বুদ্ধিজীবীদের দুটি স্থানে লাশ পাওয়া যায় একটি রায়ের বাজার অপরটি মিরপুরে। মিরপুরে একাধিক স্থানে পরে লাশ পাওয়া যায়। মিরপুর হরিরামপুর কবরস্থানের পাশে দুটি গর্তে পাওয়া যায় ডঃ সিরাজুল হক খান, ডঃ ফয়জুল মহী, সন্তোষ ভট্টাচার্য, ডাঃ মুর্তজা আলীর অপর গর্তে তিনজনের লাশ সনাক্ত করা যায়নি তাদের আনোয়ার পাশা, রশিদুল হাসান, ডাঃ আবুল খায়ের বলে সন্দেহ করা হয়। সকল লাশের চোখ বাধা ছিল। ইপিআরটিসির এক ড্রাইভার মফিজুদ্দিন বিবেকের তাগিদে ১৮ তারিখ রমনা থানায় সকাল ১০ টায় সাধারণ ডায়েরী করে জানায় তিনি এবং অপর তিনি ড্রাইভারকে আলবদররা বিভিন্ন আবাসিক কোয়াটার থেকে শিক্ষকদের তুলে আনার কাজে অস্রের মুখে বাধ্য করেছিল। কাজ শেষে আল বদর রা তার সে তিন ড্রাইভার সহকর্মীকেও হত্যা করে। যার নির্দেশে তিনি কাজ করেছেন সে বেক্তি এ সাতজনকে হরিরামপুরের সে স্থানে গুলী করে হত্যা করে। মফিজ যে সাত খুনির নাম প্রকাশ করে খালেক মজুমদার গ্রেফতারের সময় জবানবন্দীতে একই সাত জনের নাম প্রকাশ করেছিল। পুলিশের গাফিলতিতে সাত বুদ্ধিজীবীর লাশ ২১ দিন পরে বিকৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

পরবর্তীকালে বাংলাদেশের পত্রিকা মারফত জানা যায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী যখন জানতে পারে পরাজয় আসন্ন তখন এ মহাপরিকল্পনা নেয়া হয় প্রথম এ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হয় ব্রাহ্মনবাড়িয়ায়। সেখানে ৪৫ জন বুদ্ধিজীবী হত্তা করা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পতনের আগে।সে ঘটনার জন্য দায়ী করা হয় ২৭ ব্রিগেড অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার সাদউল্লাহকে।পূর্বদেশ পত্রিকায় এ বিষয়ে কিছু লেখালেখি হয়। পরবর্তীতে গভর্নর হাউজ বা বঙ্গভবন তল্লাসি করে ভূগর্ভস্থ কুঠরিতে রাও ফরমান আলীর কিছু কাগজ পাওয়া গেলে নিশ্চিত হয় রাও ফরমান আলী এদের মুল নেতা ছিলেন। পরিকল্পনা মাফিক ডাক্তারদের একটি সম্মেলন আহবান করা হয়েছিল। সে সম্মেলনে আগত সকল ডাক্তারকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল কিন্তু ডাক্তাররা স্বাধীনতা অত্তাসন্ন দেখে সে সম্মেলনে অংশ নেয়নি ফলে তারা বেচে যায়। বুদ্ধিজীবী ছাড়াও তারা কিছু মুক্তিযোদ্ধা অবস্থানে অবরোধ করে কতক মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে এভাবে হত্যা করে একই অবস্থানে ফেলে রাখে।