জয় বাঙলা
সীমান্তের ওপারে বাঙলাদেশের হৃদয় হতে যে রক্ত ঝরছে তা আমাদেরই রক্ত। যে আবেগে তারা কম্পিত হচ্ছে সে আমাদেরই আবেগ। তাদের ক্রোধ আমাদের চোখের অগ্নি। তাদের সংকল্পে আমাদের পেশী আবদ্ধ। পূর্ব বাঙলার ভাইরা, আমরা তােমাদের সহােদর। রাষ্ট্রের কৃত্রিম প্রাচীরে দ্বিধা হৃদয় আমাদের একই সুরে বাজছে। ভাই, আমরা আছি, তােমাদের পাশে। জয় আমাদের হবেই।
আমরা তােমাদের দিকে সবিস্ময়ে তাকিয়ে আছি। কী আশ্চর্য শক্তি তােমাদের এক-পাথুরে ঐক্যের। স্বৈরাচারীর জগদ্দল রথকে তােমরা অচল করে দিয়েছ। তাদের কামান বন্দুক ট্যাঙ্কের সামনে অকুতােভয় তােমরা নির্দ্বিধায় বুক পেতে দিয়েছ। অকাতরে যারা প্রাণদান করতে পারে তাদের কী কখনও ক্ষয় আছে।
তােমরা রক্তপাত চাওনি, তােমরা চেয়েছিলে বাঙালি জাতির স্বাধিকার। তােমরা সেই স্বাধিকারকে প্রতিষ্ঠা করেছিলে শান্তিপূর্ণ উপায়ে। কিন্তু নির্বাচনের রায়কে উপেক্ষা করে স্বৈরাচারী নরপশুরা তােমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তােমরা দেয়ালে পিঠ দিয়ে দাঁতে দাঁত দিয়ে সেই পশু শক্তির মােকাবিলা করছ। তােমরা বাঙালি জাতির মুখ ইজ্জ্বল করেছ। তােমাদের গৌরবে এপার বাঙলার আমরা গৌরবান্নিত। জয় তােমাদের হবেই।
মাদের নেতা মুজিবুর আমাদেরও নেতা। বাঙালি জাতির আত্মপ্রতিষ্ঠার সংকল্পের তিনি প্রতীক। তার নামের অমৃতমন্ত্র এপার বাঙলার বাঙালিদেরও ঐক্যবদ্ধ করুক নিষ্ফল আত্মদ্বন্দ্বের অবসান ঘটাক । বাঙালি আবার জগতসভায় যােগ্য আসন লাভ করুক। তােমাদের সংগ্রাম, তােমাদের আত্মদান আমাদেরও মহান করুক। জয় বাঙলা।
সূত্র: সপ্তাহ, ২ এপ্রিল ১৯৭১