১৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ঃ টাঙ্গাইল কড়চা
কাদের সিদ্দিকি ভারতীয় বাহিনীকে জানিয়েছিলেন টাঙ্গাইলের এবং দক্ষিনে ৩০ মেইল পর্যন্ত এলাকা মুক্ত। সে হিসেবে প্যারা ড্রপের জন্য টাঙ্গাইল পছন্দ করা হয়। প্যারা ড্রপের পর তাকে সেখানে পাওয়া যায়নি বা প্যারাদের সাথে তিনি সংযোগ স্থাপন করতে পারেননি। তিনি পরে ভারতীয় বাহিনীকে জানিয়েছিলেন প্যারা নামার সময়ে তার বাহিনী মর্টার শেলিং বন্ধ রেখে তাদের জানান দিয়েছিল যে তারা পাশেই আছে। যা হোক ভারতীয়রা কাদেরিয়া বাহিনী ছাড়াই স্থানীয় জনগণকে নিয়ে তাদের রসদ একত্রিত করে এবং তারা একত্র হয়। প্যারা ড্রপের সময়কালীন বাতাসের গতি ছিল বেশী ফলে তারা বিক্ষিপ্ত ভাবে পড়েছিল। এবং একটি দল পলায়নমুখী পাক সৈন্য এর উপর পড়ে সেখানে কিছু ভারতীয় পেরা হতাহত হয়।
ড্রপের সময় একটি দুর্ঘটনা ঘটে সদ্য চাকুরীতে দুই সপ্তাহ কমিশন পাওয়া এক সেকেন্ড লেঃ এসজিএস গিল যে কোন দিন প্যারা ট্রেনিং নেয়নি তার জীবনের প্রথম প্যারা জাম্প দেন। তিনি সাফল্য এর সহিত নেমেছিলেন। আরেক প্যারা মাহাদিও কুরাও সে প্যারা ড্রপের সময় বিমানের লেজে আটকিয়ে ছিল ২০ মিনিট পরে মুক্ত হয়ে সে যখন নীচে নামে তখন সে পাকিস্তানীদের গুলীতে আহত হয়। সে ২ ইঞ্চি মর্টার এবং স্টেন গান বহন করছিলো। সে নামার পর পাকিস্তানীদের কবল থেকে কোনমতে নিজেকে রক্ষা করে আহত অবস্থায় ১০ মাইল পায়ে হেটে এগুতে থাকে। তারপর সে এক গ্রামবাসীর আশ্রয়ে থাকে ৩ দিন তারপর সে স্থানীয় মুক্তিবাহিনীর (কাদেরিয়া বাহিনী নয়) সাথে মিলিত হয়। সে মুক্তিবাহিনীর সাথে রাজাকারদের বিরুদ্ধে তিনটি অপারেশনে অংশ নেয়। পরে সে এলাকায় তার প্যারাসুট ও অন্যান্য জিনিষপত্র উদ্ধার করে। তার দুর্ভোগের শেষ হয় যখন সে ১৬৫ ব্রিগেডের তার ব্যাটেলিয়নের সাথে মিলিত হয়।
পাকিস্তানী ৯৩ ব্রিগেড ময়মনসিংহ থেকে কালিয়াকৈরে আসা এবং সেখানে গ্রেফতারের আগে পাকিস্তানী ব্রিগেডিয়ারকে কাছে থেকে দেখেছেন এমন এক প্রতেক্ষদর্শী বলেছেন তিনি তাদের অনেকদিনের সেভ ছাড়া গোসল ছাড়া, জুতা ছাড়া, পায়ের গোড়ালিতে চামড়া ছুলে যাওয়া, নিদ্রাহীন, ক্লান্ত অবস্থায় দেখেছেন। সিদ্দিক সালিক লিখেছেন তারা অনেকদিন অভুক্ত ছিলেন কারন কোন দোকানী নাকি তাদের কাছে খাদ্য বিক্রি করতে রাজি হয়নি যদিও এটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। এ রুটে এসেছিলেন এফজে সেক্টরের ব্রিগেডিয়ার সন্ত সিংহ বাবাজি। বাবা নামটা নাকি মুক্তিযোদ্ধাদের দেয়া। জেনারেল উবানের পর তিনিই শীর্ষ কর্মকর্তা যিনি মুক্তিযোদ্ধাদের খুব আপন হয়ে উঠেছিলেন। অবশ্য ব্রিগেডিয়ার সাবেক সিংহও খুব জনপ্রিয় ছিলেন। সন্ত সিংহ ১১ নং সেক্টর এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষক ছিলেন। ময়মনসিংহ দখলের পর মুক্তিযোদ্ধারা এবং ময়মনসিংহের গুণীজনেরা তাকে সংবর্ধনা দিতেই যুদ্ধের একটি দিন নষ্ট করে ফেলেন। পরবর্তীতে দেখা গেছে কোন বাংলাদেশী তার সাথে দেখা করতে গেলে তিনি অনেক আবেগপ্রবন হয়ে যেতেন।
এ রুটের আরেক ব্রিগেডিয়ার হরদেভ সিং ক্লের। শের পুরে মাইন বিস্ফোরণে আহত জি এস গিলের সাথে তিনিও আহত হন। আহতের মাত্রা বেশী ছিল না। যুদ্ধক্ষেত্র তিনি ছাড়েননি। ঢাকায় তাকে সকল পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দীদের দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয়। তাকে এসময় যুদ্ধবন্দীদের সাথে খোশমেজাজে গল্প করতে দেখা গেছে। সাধারন সৈনিকের মতই তিনি কাজ করে গেছেন। তার সম্পর্কে একজন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ এবং সাবেক ভিসি একটি মিথ্যা গল্প লিখেছিলেন যে তিনি মারাত্মক আঘাত পেয়েছিলেন এই আঘাতের পরিনামে তিনি ৩৮ বছর পর মারা যান।