৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ঃ যুদ্ধ পরিস্থিতি – ভারত
আত্মসমর্পণের আহ্বান
নয়াদিল্লীতে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মানেকশ পাকবাহিনীর উদ্দেশে আকাশবাণী থেকে প্রচারিত এক বিবৃতিতে তাদের অবিলম্বে আত্মসমর্পণের আহবান জানিয়েছেন। এই বিবৃতি ইংরেজি উর্দু ও পশতু ভাষায় প্রচার করা হয়। তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন আমি খবর পেয়েছি তোমরা পালাবার উদ্দেশে নারায়ন গঞ্জ এবং বরিশালে জমায়েত হয়েছ। কিন্তু সে চেষ্টা ব্রিথা যাবে তোমাদের পালাবার কোন পথ আমরা খোলা রাখিনি। যদি অচিরেই তোমরা আত্মসমর্পণ কর তাহলে নিশ্চিত থাকতে পারো যে তোমাদের প্রতি মানবিকতা পূর্ণ শিষ্টাচার প্রদর্শন করা হবে। জেনেভা কনভেনশনের সকল সুযোগ সুবিধা তোমরা পাবে নইলে তমাদের জন্য অপেক্ষা করছে করুন মৃত্যু।
সমর সেন
ভারতের লোক সভার বিশেষ অধিবেশনে সরন সিং বলেছেন পাক ভারত যুদ্ধের ব্যাপারে জাতিসংঘে ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের ভুমিকার প্রশংসা করেছেন। আমেরিকা চীন সহ প্রতিক্রিয়াশীল দেশ সমুহ যখন বাংলাদেশের অস্তিত্ব অস্বীকার করে পাকিস্তান ও ভারতকে এক কাতারে ফেলার চেষ্টা করছে তখন ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের এই ভুমিকা সত্যিই প্রশংসনীয়। সাধারন পরিষদে রুমানিয়া ও যুগোস্লোভিয়ার যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন যুগোস্লোভিয়ার ভুমিকা বিস্ময়কর আর সম্ভবত রুমানিয়া চীনের সমর্থক হওয়ায় পক্ষে ভোট দিয়েছে।
জেএফআর জেকব
জেকব কলকাতায় বলেছেন তার বাহিনী ভুপ্রাকৃতিক বাধা সত্ত্বেও ঢাকার কাছাকাছি কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌছতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের বাহিনী এখন ইলিওটগঞ্জে যা কুমিল্লার ৩০ কিমি পশ্চিমে। এলাকাটি নারায়ণগঞ্জের ২০ কিমি পূর্বে। লাকসামের দিক আমাদের বাহিনী চাদপুরের কাছেই আছে তারা ধিরেই এগুচ্ছে। যশোর মুক্তের পর আমাদের বাহিনী সাতক্ষীরা মুক্ত করেছে আর খুলনারও কাছাকাছি অবস্থান করছে। আমাদের বাহিনী ঝিনাইদহ মুক্ত করে মাগুরায় অবস্থান করছে। আমরা বলতে পারি কয়েকটি পকেট ছাড়া যশোরের উত্তরে পদ্মা নদী পর্যন্ত মুক্ত। উত্তরে আমাদের বাহিনী পীরগঞ্জে অবস্থান করছে। হিলির উত্তরেও কিছু এলাকা মুক্ত করা হয়েছে যেমন বীরগঞ্জ, দিনাজপুরের উত্তরে কান্তানগরে তুমুল যুদ্ধ চলছে। আমাদের বিমান বাহিনী রংপুরে ৪ টি শেফি ট্যাঙ্ক ধ্বংস করেছে আর এ নিয়ে তাদের ২৬ টি ট্যাঙ্ক আমরা ধ্বংস করলাম।
রেডিও
গ্রিনিচ সময় ২ টা ৪৫ মিনিটে দিল্লীর স্থানীয় রেডিও সংবাদে বলা হয় মংলা এবং খুলনা থেকে পাকিস্তান বাহিনী পশ্চাদপসরণ করেছে। সিলেট মুক্ত করা হয়েছে। তবে পাকিস্তান বাহিনী সালুতিকর এবং খাদিম নগরেই অবরুদ্ধ আছে। মুক্তি বাহিনী রাঙ্গামাটির মরিচ্চা মুক্ত করেছে নড়াইল এবং গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপারা মুক্ত করেছে। সুনামগঞ্জ, জামালপুর, মৌলভীবাজার, রংপুরের সম্পূর্ণ উত্তরাংশ মুক্ত করেছে।(যুদ্ধ কালে প্রোপাগান্ডা নিউজ হত এটি সেরকম)