০৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ঃ সর্বাত্মক যুদ্ধের প্রথম দিন-
বিমান যুদ্ধ
পাকিস্তানী বাহিনী ৩ তারিখ সন্ধায় ভারতের পশ্চিমাংশে আকস্মিকভাবে আকাশ-পথে ভারতের পশ্চিমাঞ্চল আক্রমন করার ফলে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়। ঢাকার আকাশে বিমানের ৫ বার ডগফাইট হয়েছে। পাকিস্তানের পত্রিকা গুলো জানায় পাকিস্তান বিমান বাহিনী দুটি ভারতীয় বিমান ধ্বংস করেছে এবং তিনটি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। পাকিস্তান সরকারের মুখপাত্রের বরাতে এপিপি জানায় পাক বিমান বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে ৭ টি ভারতীয় জঙ্গি বিমান ধ্বংস করেছে যার দুটি বিমান বিধ্বংসী কামানের গোলায়।
ভারতীয় হামলায় তেজগাও এবং কুর্মিটোলা বিমানবন্দর প্রায় অকেজো হয়ে গেছে। ভারতীয় বাহিনী আকাশে পাচটি, ভুমিতে তিনটি বিমান ধ্বংসের দাবী করে। পাকিস্তান দুটি সেবর জেট হারানোর কথা স্বীকার করেছে।
প্রথম বড় আত্মসমর্পণ
কুমিল্লা শহরে পাক বাহিনীর মোতায়েন ছিল ৩০ পাঞ্জাব। দক্ষিনে লাকসামের প্রবেশ মুখে ছিল ২৩ পাঞ্জাব। মাঝ খানে বিরাট গ্যাপ। এই গ্যাপ ধরে পশ্চিমে লালমাই পাহাড় ধরে দাউদকান্দি পর্যন্ত বিন্যস্ত ছিল ২৫ এফএফ। ধলাই যুদ্ধে চরম মার খাওয়া ভারতীয় ৬১ ব্রিগেডকে কমলগঞ্জ সীমান্ত থেকে প্রত্যাহার করে সগত সিং কুমিল্লা আক্রমনে নিয়োজিত করেছিলেন। ধলাই যুদ্ধের সময়েই এই ব্রিগেড এবং এর একটি ব্যাটেলিয়ন অধিনায়ক পরিবর্তন করা হয়েছিল। ব্রিগেড অধিনায়ক ব্রিগঃ টম পাণ্ডে কুমিল্লা শহর আক্রমন না করে দক্ষিনের এই ফাকা জায়গা ধরে বিনা বাধায় ২৫ এফএফ কে ঘিরে ফেলে। অনন্যোপায় হয়ে প্রায় পুরা ব্যাটেলিয়ন আত্মসমর্পণ করে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী হতাহত
এদিন যুদ্ধে দুইজন লেঃ কঃ তিন জন মেজর দুইজন ক্যাপ্টেন সহ কয়েকশত পাক সৈন্য নিহত হয়। লেঃ কঃ দুজন হলেন ওসমান হামেদ জাফরি ১৭ এফএফ ও মোহাম্মদ নওয়াজ ২২ পিআর। মেজর গন হলেন আসাদ আলী খান এসএসজি সদর, রফিক আহমেদ ২৭ একে, জাভেদ আহমেদ ১৩ একে। ক্যাপ্টেন গন হলেন মুজিব ফাকরুল্লাহ খান ২৫ এফএফ, আহমেদ জান খান এসএসজি সদর ক্যাপ্টেন খালিক আহমেদ ২৮৬ মর্টার ব্যাটারি, ক্যাপ্টেন খুসরো ফরিদ ৩০ এফএফ। এদের তিন জন সিতারা ই জুরাত পদক লাভ করেন তারা হলেন লেঃ কঃ দুজন হলেন ওসমান হামেদ জাফরি, মেজর রফিক আহমেদ, ক্যাপ্টেন মুজিব ফাকরুল্লাহ খান।
শমশের নগর ফ্রন্টে মুন্সীর বাজার দখল প্রস্তুতি
শমশের নগর দখলের পর বন্দীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানায় মৌলভীবাজারের পথে তাদের শক্ত অবস্থান মুন্সীর বাজারে। শেরপুরের পথে প্রধান ডিফেন্স মৌলভীবাজার। মুনশির বাজার দখলের দায়িত্ব দেয়া হয় ৮১ ব্রিগেডের ৩ পাঞ্জাবকে। মুন্সীর বাজারে ৩৩ এফ এফ নিয়মিত বাহিনীর সাথে রয়েছে এপকাফ। সন্ধার দিকে ৩ পাঞ্জাব মুন্সীর বাজার আক্রমনের জন্য রওানা হয়। তারা গ্রাম্য পথে উত্তরপূর্ব দিক থেকে আক্রমনের জন্য ৫ তারিখ ভোরে গোবিন্দপুরে অবস্থান গ্রহন করে।
সীমান্ত অতিক্রমের অনুমতি
পাকিস্তান সরকার তার সেনাবাহিনীকে ভারতীয় বাহিনীর আক্রমনের জবাব দেয়ার জন্য সীমান্ত অতিক্রমের অনুমতি দিয়েছে।
এয়ার ভাইস মার্শাল এ রহিম
পাকিস্তানের বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এ রহিম বিমান বাহিনীর সদস্যদেরকে শত্রুদের এমন শিক্ষা দিতে বলেন যাতে একশ’ বছরেও ভুলতে না পারে।
প্রাক্তন সামরিক বাহিনী সদস্যদের তাদের সাবেক ইউনিট সমুহে যোগদানের জন্য আবারো আহবান জানানো হয়।