সুরতহাল রিপাের্ট দৈনিক ভােরের কাগজ, ২৫ নভেম্বর ১৯৯৬
চার জাতীয় নেতার লাশের সুরতহাল ঃ
কাগজ প্রতিবেদক ঃ ১৯৭৫-এর নভেম্বরের রােমহর্ষক জেলহত্যা সম্পর্কে ৫ নভেম্বর তৎকালীন আইজি প্রিজনস নূরুজ্জামান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যে রিপাের্ট পাঠান তার সঙ্গে নিহত ৪ জাতীয় নেতার লাশের সুরতহাল রিপাের্ট ছিল। সম্প্রতি উদ্ধারকৃত ঐ দলিল থেকে ৪ নেতার সুরতহাল রিপাের্টের পূর্ণ বিবরণ এখানে দেওয়া হল ঃ সৈয়দ নজরুল ইসলাম আমি খন্দকার মিজানুর রহমান, প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট, ঢাকা সদর (উঃ) কেন্দ্রীয় কারাগারের ডি.আই.জি, সাহেবের ৪-১১-৭৫ ইং লিখিত ১/ডি,আই,জি/১(৪) চিঠি মূলে জানিতে পারিয়া আমি ৪-১-৭৫ ইং তাং ১৮০০টার সময় কেন্দ্রীয় কারাগারে উপস্থিত হইয়া জেলার সাহেব-এর সনাক্তমতে এবং পার্শলিখিত সাক্ষীদের উপস্থিতিতে আমি মৃত সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেবের সুরতহাল প্রস্তুত করিলাম। মৃতদেহ কেন্দ্রীয় কারাগারের নূতন জেলের পূর্ব পার্শ্বের ১নং কোঠায় বারান্দার একটি কাঠের চৌকিতে উত্তর শিয়রে শায়িত অবস্থায় দেখিতে পাইলাম। তাঁহার মৃতদেহ সাদা ডােরাকাটা চাদরে আবৃত। তাঁহার শরীর উলট-পালট করিয়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করিয়া বুকের ডান পার্শ্বে ৬টি বেয়নেটের রক্তাক্ত জখম আছে বলিয়া মনে হয়। শরীরের অন্যান্য স্থানেও বুলেটের জখম আছে বলিয়া মনে হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রতিবেদন অনুযায়ী ৩ তারিখের সকাল আনুমানিক ৪-৩০ মিঃ সময় মৃত্যু সংঘটিত হয়। মৃতদেহ পচিয়া যাইতেছে। মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য অবিলম্বে জরুরী ভিত্তিতে পর্যাপ্ত আলাের ব্যবস্থা করিয়া ময়না তদন্তের জন্য নির্দেশ দেওয়া গেল। স্বাক্ষর/মি. রহমান, ৪-১১-‘৭৫ ইং। মৃতদেহটা জনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাহেবের বলিয়া সনাক্ত করিলাম। স্বাঃ আমিনুর রহমান, ৪-১১-৭৫। আমাদের সামনে সুরতহাল করা গেল। স্বাঃ আঃ ওয়াহিদ মৃধা, সােবেদার স্বাঃ মােঃ ইছহাক মিয়া, ৪-১১-৭৫ ইং। সত্যায়িত, স্বাক্ষর অস্পষ্ট, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বিচার বিভাগ, ঢাকা।
তাজউদ্দীন আহমদ
আমি মােঃ আজমল চৌধুরী, ১ম শ্রেণীর হাকিম, ঢাকা সদর (দঃ) মহকুমা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিআইজি সাহেবের ৪/১১/৭৫ তারিখ লিখিত ১/ডি,আই,জি/১/(৪) নং চিঠি মূলে জানিতে পারিয়া অদ্য ৪/১১/৭৫ তারিখে ১৭-৪৫ মিঃ কেন্দ্রীয় কারাগারে উপস্থিত হইয়া জেলার সাহেবের সনাক্ত মতে এবং পার্শলিখিত সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জনাব তাজউদ্দীন আহমদের মৃতদেহের সুরতহাল প্রস্তুত করিলাম। মৃতদেহ কেন্দ্রীয় কারাগারের নতুন জেলের পূর্ব পার্শ্বের ১ নং কোঠার বারান্দায় একটি চৌকির উপর উত্তর শিয়রে শায়িত অবস্থায় দেখিতে পাই। তাহার মৃতদেহ একটি সাদা চাদর দিয়া আবৃত আছে। তাহার শরীর ওলটপালট করিয়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন দেখা গেল । জখমগুলি বুলেটের বলিয়া মনে হয়। কারাগার কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদন দেখিলাম । মৃত্যুর সময় ৩-১১-‘৭৫ তারিখ সকাল আনুমানিক ৪-৩০ ঘটিকার সময় বলিয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। আজ রাত ৭ ঘটিকার সময় মৃতদেহ পচিয়া যাইতেছে বলিয়া মনে হইতেছে। সেহেতু এখানেই জরুরী ভিত্তিতে পর্যাপ্ত আলাের ব্যবস্থা করিয়া কারাগারের ভেতরে ময়না তদন্তের ব্যবস্থা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া গেল। স্বাক্ষর/- মােঃ আ. চৌধুরী, ৪-১১-৭৫ ইং। মৃতদেহটা জনাব তাজউদ্দীন সাহেবের বলিয়া সনাক্ত করিলাম। স্বাঃ আমিনুর। রহমান, ৪-১১-৭৫। আমাদের সামনে সুরতহাল করা গেল। স্বাঃ আঃ ওয়াহিদ মৃধা, সােবেদার স্বাঃ মােঃ ইছহাক মিয়া, ৪-১১-৭৫ ইং। সত্যায়িত, স্বাঃ অস্পষ্ট, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বিচার বিভাগ, ঢাকা ।
এম. মনসুর আলি
আমি মােঃ আজমল চৌধুরী, ১ম শ্রেণীর হাকিম, ঢাকা সদর (দঃ) মহকুমা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডি,আই,জি, সাহেবের ৪/১১/৭৫ তারিখের লিখিত ১/ডি,আই,জি/১(৪) চিঠি মূলে জানিতে পারিয়া অদ্য ৪/১১/৭৫ তারিখে বেলা ১৮টার সময় কেন্দ্রীয় কারাগারে উপস্থিত হইয়া জেলার সাহেবের সনাক্ত মতে এবং পার্শলিখিত সাক্ষীদের উপস্থিতিতে আমি মৃত মনসুর আলির মৃতদেহের সুরতহাল প্রস্তুত করিলাম। মৃতদেহ কেন্দ্রীয় কারাগারের নূতন জেলের পূর্ব পার্শ্বের ১নং কোঠার বারান্দার একটি চৌকিতে উত্তর শিয়রে শায়িত অবস্থায় একটি কাল চাদর দ্বারা আবৃত অবস্থায় পাইলাম। শরীর ওলট-পালট করিয়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন দেখা যায়। জখম বুলেটের বলিয়া মনে হয়। বাম পায়ের উরুতে বুকে বড় রকমের জখম পরিলক্ষিত হয়। জেল কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদন দেখিলাম। মৃত্যুর সময় ৪-১১-৭৫ তারিখে আনুমানিক ভাের ৪-৩০ ঘটিকার সময় বলিয়া বলা হইয়াছে। মৃতদেহ পচিয়া যাইতেছে। মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য অবিলম্বে জরুরী ভিত্তিতে পর্যাপ্ত আলাের ব্যবস্থা করিয়া কারাগারের ভেতরে ময়না তদন্তের জন্য নির্দেশ দেওয়া হল। স্বাক্ষর/- মােঃ আ. চৌধুরী ৪-১১-৭৫ ইং। মৃতদেহটি জনাব মনসুর আলির বলিয়া সনাক্ত করিলাম। স্বাঃ আমিনুর রহমান ৪-১১-৭৫ ইং। আমাদের সামনে সুরতহাল করা গেল। স্বাঃ আঃ ওয়াহিদ মৃধা, সােবেদার ৪১১-৭৫ ইং। স্বাঃ মােঃ ইছহাক মিয়া, ৪-১১-৭৫ ইং। সত্যায়িত, স্বাঃ অস্পষ্ট, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বিচার বিভাগ, ঢাকা ।
এ. এইচ. এম. কামরুজ্জামান
আমি মােঃ আজমল চৌধুরী, ১ম শ্রেণীর হাকিম, ঢাকা সদর (দঃ) মহকুমা কেন্দ্রীয় কারাগারে ডিআইজি সাহেবের ৪/১১/৭৫ তারিখের লিখিত ১/ডি,আই,জি/১(৪) চিঠির মূলে জানিতে পারিয়া অদ্য ইং ৪/১১/৭৫ তারিখ ১৭-৪৫ মিঃ কেন্দ্রীয় কারাগারে উপস্থিত হইয়া জেলার সাহেবের সনাক্ত মতে এবং পার্শলিখিত সাক্ষীদের উপস্থিতিতে আমি মৃত কামরুজ্জামান সাহেবের মৃতদেহের সুরতহাল প্রস্তুত করিলাম। মৃতদেহ কেন্দ্রীয় কারাগারের নুতন জেলের পূর্ব পার্শ্বের ১নং কোঠার বারান্দ য় একটি চৌকিতে উত্তর শিয়রে একটি সাদা চাদরে আবৃত অবস্থায় ছিল। তাহার শরীর ওলট-পালট করিয়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন দেখা গেল। বিশেষ করিয়া ডান দিকের পাঁজরের এবং ডান হাতের কনুইতে বড় ক্ষত চিহ্ন পরিলক্ষিত হইল। কারাগার কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদন দেখিলাম। মৃত্যুর সময় ৩-১১-৭৫ তারিখের সকাল আনুমানিক ৪-৩০ মিঃ সময় বলিয়া উল্লেখ আছে। মৃতদেহ পচিয়া যাইতেছে। মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য অবিলম্বে জরুরী ভিত্তিতে পর্যাপ্ত আলাের ব্যবস্থা করিয়া ময়না তদন্তের জন্য নির্দেশ দেওয়া গেল। স্বাক্ষর/- মােঃ আ. চৌধুরী, ৪-১১-৭৫ ইং। মৃতদেহ জনাব এ. এইচ. এম. কামরুজ্জামান সাহেবের বলিয়া সনাক্ত করিলাম। স্বাঃ আমিনুর রহমান, ৪-১১-৭৫ইং আমাদের সামনে সুরতহাল করা গেল। স্বাঃ আঃ ওয়াহিদ মৃধা। সােবেদার ৪১১-৭৫ ইং। স্বাঃ মােঃ ইছহাক মিয়া, ৪-১১-৭৫ইং। সত্যায়িত, স্বাঃ অস্পষ্ট, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বিচার বিভাগ, ঢাকা।
সূত্র : আমার ছোটবেলা ১৯৭১ এবং বাবা তাজউদ্দীন আহমেদ – সিমিন হোসেন রিমি