৩০ নভেম্বর, ১৯৭১ঃ যুদ্ধ পরিস্থিতি
গোয়াইনঘাট
একই সময় মুক্তিবাহিনী ও সম্মিলিত মিত্রবাহিনী গোয়াইনঘাটের দিকে অগ্রসর হয় এবং গোয়াইনঘাট নিজেদের নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হয়।
শমশের নগর ফ্রন্ট
২৯ তারিখ ভারতীয় বাহিনী ৩০ এফএফ উপর হামলার পর মৌলভীবাজার শমশের নগর রাস্তার উপর অবস্থান নেয়। অগ্রসরমান ব্যাটেলিয়নকে ২৮ তারিখে মেজর জেনারেল রাও এর বক্তব্য ফলপ্রসূ হয়েছে অনেকটাই। তারা ৩০ এফএফ কে প্রায় ঘিরে ফেলে। তাদের দেখতে এসেছিলেন ৩১৩ ব্রিগেডের কমান্ডার ইফতেখার রানা। তার জীপ একটি এম্বুশ থেকে সামান্যর জন্য বেচে যায়। ভারতীয় ব্যাটেলিয়ন ৩০ এফ এফ এর উপর হামলা শুরু করলে পাক সেনাবাহিনীর লেঃ জমির বীরত্ব প্রদর্শন করে লড়াই করে নিহত হন। তার আক্রমনে ভারতীয়রা পিছু হটলেও পরের আক্রমনে ক্যাপ্টেন খসরু নিহত হয়। ভারতীয় বাহিনী শমশের নগর দখলের প্রায় কাছাকাছি থেকে দিনটি শেষ করে।
পচাগড় ফ্রন্ট
পচাগড় শহর দখলের পর দেড় ব্যাটেলিয়ন মুক্তি বাহিনী ৭ মারাঠা রাইফেলস, ২১ রাজপুত ট্যাঙ্ক সাপোর্ট নিয়ে যৌথ বাহিনী দক্ষিনে পুটিমারি এলাকায় সমবেত হয়। ময়দান দিঘীর কাছে পাক বাহিনীর সাথে এই বাহিনীর যুদ্ধ হয়। এখানে যৌথ বাহিনীর অনেক হতাহত হয়। পরে ট্যাঙ্ক বাহিনীর আক্রমনে পাক বাহিনী ময়দান দিঘী অবস্থান ছেড়ে বোদায় অবস্থান সংহত করে। পচাগড়ে পরাজিত হলেও পাকিস্তানী বাহিনী সৈয়দপুরে তাদের ২৩ ব্রিগেড সদর দফতরে ভারতীয় সমর সরঞ্জামের প্রদর্শনী করে। পঞ্চগড়ের বোদা ক্যাম্পে আগে থেকেই দুয়েকজন বিদেশী সাংবাদিক থাকলেও এ প্রদর্শনী উপলক্ষে ঢাকা থেকে সাংবাদিকদের সেখানে নেয়া হয়।
আজমপুরঃ
৩নং সেক্টরের আখাউড়া ফ্রন্টে আখাউরার উত্তরে ভারতীয় ৩১১ ব্রিগেড এবং মুক্তিবাহিনী এর ২ বেঙ্গলের মেজর মতিনের মিশ্র দুই কোম্পানি সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনীর সাথে ১২ এফএফ দুই কোম্পানির পাকবাহিনীর প্রচন্ড লড়াই চলছে। পাক বাহিনী এখানে বিমান বাহিনীর সহায়তা নিয়ে ভারতীয় বাহিনীকে প্রতিরোধ করে যাচ্ছে।
বরিশাল
মুজিবনগর থেকে প্রাপ্ত তথ্য এর উপর টাইমস অফ ইন্ডিয়া বলেছে শেখ মুজিবের নিজ শহর গোপালগঞ্জ এবং পার্শ্ববর্তী বরিশাল জেলা সম্পূর্ণ মুক্ত।
কামালপুরঃ
জামালপুরের কামালপুরে টানা ৩ দিন আক্রমন করেও ভারতীয় বাহিনী কামালপুর দখলে নিতে পারেনি। আজ ফ্রন্টকে একটু বাড়িয়ে পূর্ব ও পশ্চিম দিক থেকে আবার হামলা করা হয়। যুদ্ধে তারা ফিল্ড গান ও মর্টার ব্যাবহার করে। সারা রাত যুদ্ধের পর সকালে যুদ্ধ ক্ষেত্রে ভারতীয় বাহিনীর অনেকের লাশ পাওয়া যায়। লাশ নেয়ার জন্য তারা আবার গোলাবর্ষণ শুরু করে কিন্তু তারা তাতে সাফল্য লাভ করেনি। একদল বিদেশী সাংবাদিক সেখানে পৌছার চেষ্টা কালে হামলার মুখে ফিরে আসেন।
ফেনী
ফেনীর পাথরনগরে যুদ্ধ হয়েছে। সেখানে ভারতীয় বাহিনীকে অগ্রসর হওয়া থেকে থামিয়ে দেয়া হয়েছে।
যশোর
যশোরের জামালপুরে ভারতীয় বাহিনী হামলা চালায়। পাক বাহিনী তাদের প্রতিরোধ করে। সেখানে ২৫ জন ভারতীয় বাহিনী নিহত হয়েছে। অমরখালি বেনাপোলেও সংঘর্ষ হয়েছে। এদিন ভারতীয় বাহিনী শহরে গোলাবর্ষণ করেনি।
কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়ার প্রাগপুরে ছোট আকারে ভারতীয় বাহিনী পাক অবস্থানে আক্রমন করেছে।
চাপাই নবাবগঞ্জ
চাপাই নবাবগঞ্জ এর শিবগঞ্জে ছোট আকারে ভারতীয় বাহিনী পাক অবস্থানে আক্রমন করেছে।
হিলি
রেডিও অস্ট্রেলিয়া বলেছে হিলিতে মুক্তিবাহিনী যুদ্ধ করছে না যুদ্ধ করছে ভারতীয় বাহিনী। পাকিস্তানী গোলন্দাজ বাহিনীকে স্তব্দ করার জন্য ভারতীয় গোলন্দাজ বাহিনীকে সীমান্ত অতিক্রম করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কলকাতায় গত সোমবার এক জনসভায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জগ জীবন রাম এ কথা বলেছেন।
বিবিসি বলেছে হিলিতে ভারতীয় বাহিনী যুদ্ধ করছে এ কথা ভারত স্বীকার করছে।
এদিনও হিলি এবং সরস্বতী পুরে ভারতীয় বাহিনী পাক অবস্থানে আক্রমন করেছে।
১৫ মাইলঃ
ভারতীয় সেনাবাহিনীকে পূর্ব পাকিস্তানের ১৫ মাইল অভ্যন্তর পর্যন্ত প্রবেশ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই আদেশ মানলে ১৯ জেলার দুই গুরুত্বপূর্ণ জেলা কুমিল্লা ও যশোর দখল করা যাবে। মহকুমা শহরের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফেনী, জয়পুরহাট, চাপাই নবাবগঞ্জ, মেহেরপুর এর আওতায় পরে।
সরকারঃ
ওয়াজিরিস্থানের মেহসুদ উপজাতির ৪০০০০ সদস্য যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।
ওয়াজিরিস্থানের টক (পূর্বে কোন পোস্টে টক এলাকার টচি স্কাউটের কথা বলা হয়েছিল ইত্তেফাকে তাদের টক বলছে তাই উচ্চারন হবে টকি স্কাউট) এলাকার মেহসুদ উপজাতির ৪০০০০ সদস্য পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধে যোগদানের তাদের ইচ্ছা পোষণ করেছে। এরা যোদ্ধা জাতি হিসাবে সুপরিচিত। এবং তাদের এলাকা স্বায়ত্তশাসিত ধরনের। এই অঞ্চল ফাটা নামে পরিচিত।
নোটঃ পাকিস্তান আজ সরকারীভাবে স্বীকার করেছে যে তাদের কিছু এলাকা হাতছাড়া হয়েছে তারা যে বিবরন দিয়েছে তার চাইতে বিশগুন বেশী জায়গা তারা হারিয়েছে।