বাঙলাদেশের স্বীকৃতি উপলক্ষ্যে এপার ও ওপার বাঙলার শিল্পী-সাহিত্যিকদের যুক্ত উৎসব সভা
(স্টাফ রিপাের্টার)
কলকাতা, ১১ ডিসেম্বর-ভারত সরকার কর্তৃক গণ-প্রজাতন্ত্রী বাঙলাদেশকে স্বীকৃতিদান উপলক্ষ্যে আজ বাঙলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের শিল্প-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীদের যুক্ত উদ্যোগে শহীদ মিনার ময়দানে আয়ােজিত এক মহতী উৎসব-সভায় অধ্যাপক গােপল হালদার ওপার বাঙলার অসামান্য রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রামের প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে আবেগপ্রবণ কণ্ঠে বলেন, “এই অনবদ্য আত্মত্যাগের মধ্যেই পৃথিবীতে বাঙালী নিজেকে মানুষ বলে পরিচয় দেওয়ার যােগ্যতা অর্জন করেছে।” তিনি ওপার বাঙলায় ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন, সেই বাঙলাতেই চোখ বােজার অভিলাষ ব্যক্ত করেন।
বাঙলাদেশ বুদ্ধিজীবী মুক্তিসংগ্রাম পরিষদের পক্ষে বাঙলাদেশের প্রখ্যাত চিত্র শিল্পী কামরুল হাসান বলেন, “এখন আমরা আর কেউ পৃথকভাবে শিল্পী নই, সবাই মুক্তিকামী সৈনিক।” সমগ্র ভারতবর্ষ আমাদের লড়াইয়ে সামিল, সে কারণে আমরা আপনাদের কাছে চির কৃতজ্ঞ” নকশিকাঁথার, জামদানীর, আলপনার বাঙলার-‘আমার বাঙলার স্মৃতিমন্থন করে তিনি জানান, “মুক্তির পর আমাদের সামনে পর্বতপ্রমাণ দায়িত্ব পড়ে আছে।”
ওপার বাঙলার বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক শওকত উসমান বলেন, “ভারত ও সােভিয়েত ইউনিয়নের কাছে আমাদের ঋণ কোনদিন শােধ করা যাবে না। আমাদের সাফল্যের পর আপনাদের কাছে ওদেশে যাবার আমন্ত্রণ রইল : সমগ্র পশ্চিমবঙ্গকে আমরা আলিঙ্গন করতে উনুখ।”
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান : গান, আবৃত্তি
রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড: রুমা চৌধুরীর পৌরহিত্যে অনুষ্ঠিত এই উৎসব সভায় সুচিত্রা মিত্র, অশােকতরু বন্দ্যোপাধ্যায়, সবিতাব্রত দত্ত সময়ােপযােগী রবীন্দ্র সঙ্গীত ও দেশপ্রেমিক গান পরিবেশন করেন। রুমা গুহ ঠাকুরতা ও তা ক্যালকাটা ইয়ুথ কয়ার বাঙলাদেশের উপর প্রেমধাওয়ান রচিত একটি গান এবং গণসঙ্গীত গেয়ে শােনান। বাঙলাদেশের শিল্পীরাও গান শুনিয়ে সকলের মনােরঞ্জন করেন। শম্ভু মিত্র রবীন্দ্রনাথের ‘প্রশ্ন’, তৃপ্তি মিত্র সুকান্তের এই সংগ্রাম চলবেই’ কবিতা আবৃত্তি করেন।
এ সভায় আহ্বায়ক ছিল বাঙলাদেশ বুদ্ধিজীবী মুক্তিসংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ সহায়ক শিল্পীসাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী সমিতি এবং পশ্চিমবঙ্গ লেখক সমিতি। পশ্চিমবঙ্গ লেখক সমিতির আহ্বায়ক সন্তোষ কুমার ঘােষ সভার প্রস্তাব পেশ করে বলেন, “আমাদের চোখের সামনে ইতিহাস রচিত হচ্ছে। প্রস্তাব সমর্থন করতে উঠে বাঙলাদেশ সহায়ক শিল্পী-সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী সমিতির সম্পাদক দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বাঙলাদেশকে স্বীকৃতিদানের পটভূমিতে বলেন, “আমরা জীবিতকালে আর কখনই ভারতবাসী হিসেবে নিজেকে এত গৌরবান্বিত বােধ করিনি।” বাঙালাদেশের সুসাহিত্যিক অধ্যাপক মযহারুল ইসলাম, মনােজ বসু ও নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীও সভায় ভাষণ দেন।
সূত্র: কালান্তর, ১২.১২.১৯৭১