৪৩. জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ইতিহাসের পাতা হতে বিস্মৃতির অতলে ঠেলে দেবার চক্রান্ত, জারী হলাে সামরিক ফরমান। বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট আবু সাদাত মােহাম্মদ সায়েম রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে রাজনৈতিক দলবিধি জারীর প্রাক্বালে বৈঠক করেন। বৈঠকে জিয়াউর রহমান উপস্থিত ছিলেন। তিনি আওয়ামীলীগের নেতাদের সঙ্গে আলােচনা কালে বলেন, আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি। আমি তাে আওয়ামীলীগেরই। আপনারা কাজ চালিয়ে যান। কিন্তু লক্ষ্যণীয় বিষয় হলাে এইযে, গঠনতন্ত্র ও মেনিফেস্টো জমা দেবার কিছুদিনের মধ্যে এক সামরিক ফরমান জারী করা হয়। সামরিক ফরমানে ঘােষণা দেওয়া হয় যে, “জীবিত বা মৃত কোন ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে কোন পারসােনালিটি ‘কাল্ট’ প্রচার ও প্রকাশ করা যাবে না।” পিপিআর-এ প্রথমে এ শর্ত ছিলােনা।
৪৫. বলাবাহুল্য আওয়ামীলীগের গঠনতন্ত্র ও দলিলাদিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নাম উল্লেখিত ছিলাে। জিয়ার সামরিক সরকার সামরিক ফরমান জারী করে নাম-এর উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করে। এই মর্মে আওয়ামীলীগের দলিলাদি সরকারী তরফ হতে ফেরত পাঠানাে হয়। কার্যনির্বাহী কমিটিতে ‘বঙ্গবন্ধু’ নাম থাকা না থাকার উপর আলােচনা হয়। আলােচনায় গঠনতন্ত্রে ও ঘােষণাপত্রে নাম রাখা না রাখা নিয়ে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। বিতর্কে যে সব নেতৃবৃন্দ ‘বঙ্গবন্ধু’র নাম রাখার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেন তাদের কিছুদিনের মধ্যে গ্রেফতার করা হয়। এ সম্পর্কে প্রামাণ্য দলিল বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরীর লিখিত একটি পুস্তক। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এ-চক্রান্ত সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া যায়।১৭
ক্ষমতায় টিকে থাকা ও ব্যক্তি উচ্চাভিলাস চরিতার্য করার নিমিত্তে জিয়াউর রহমান ১৯৭৬ সনের প্রথমার্ধেই ৬২,০০০ (বাষট্টি) হাজার রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের কারাগারে আটক রাখে, যার মধ্যে অধিকাংশই ছিলাে আওয়ামীলীগ যুবলীগ ছাত্রলীগ শ্রমিক লীগের নেতা ও কর্মীবৃন্দ।১৮
৪৬. জিয়াউর রহমান আওয়ামীলীগে যােগদানের এবং বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের নিকট ইচ্ছা প্রকাশ করেন।১৯ যা ছিলাে সম্পূর্ণ প্রতারণাপূর্ণ এবং ক্ষমতা সংহত করার জন্য সময় ক্ষেপনের কৌশল।
Reference: জেনারেল জিয়ার রাজত্ব – অধ্যাপক আবু সাঈদ