You dont have javascript enabled! Please enable it! দেশে প্রথম রাজাকার বাহিনী গঠনকারী মাওলানা ইউসুফ - সংগ্রামের নোটবুক

খুলনা

দেশে প্রথম রাজাকার বাহিনী। গঠনকারী মাওলানা ইউসুফ

জনকণ্ঠ রিপাের্ট ॥ একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকি সামরিক জান্তার সরাসরি মদদে যিনি খুলনায় প্রথম তথাকথিত শান্তি কমিটি এবং রাজাকার বাহিনী গঠন করেছিলেন তিনি আজকের জামায়াতের অন্যতম কর্ণধার মাওলানা একেএম ইউসুফ। পাকিস্তানের সেবাদাস এই ঘৃণিত বাহিনী দিয়ে তিনি বৃহত্তর খুলনার (খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা) শহর, বন্দর, গ্রামে লুটতরাজ, হত্যাযজ্ঞ, নারী ধর্ষণ, অগ্নিসংযােগসহ নানাভাবে নারকীয় তাণ্ডব চালিয়ে মুক্তিকামী বাঙালীর স্বাধীনতা সংগ্রামকে স্তব্ধ করার অপচেষ্টা চালান। বাঙালী জাতি যখন গােলামির জিঞ্জির থেকে দেশমাতৃকার মুক্তি ছিনিয়ে আনার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত তখন পাকি হানাদার বাহিনীকে প্রত্যক্ষ সহযােগিতার জন্য খুলনা শহরের টুটপাড়া কবরখানার পাশে অবস্থিত আনসার ক্যাম্পে (ভূতের বাড়ি) মাওলানা ইউসুফের নেতৃত্বে শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। জানা যায়, রাজাকার নামকরণটি মাওলানা ইউসুফের এবং যুদ্ধকালে দেশের মধ্যে সর্বপ্রথম খুলনায় রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। আনসার ক্যাম্পের ভিতরের পুরনাে ভবনটি ছিল খুলনার রাজাকারদের প্রধান ঘাঁটি। এই ঘাটির কাছেই দিলখােলা রােডে মাওলানা ইউসুফের বাড়ি। ঐ ক্যাম্পে তার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে রাজাকারদের ট্রেনিং দেয়া হতাে এবং ট্রেনিং শেষে তাদের সশস্ত্র অবস্থায়। পাঠানাে হতাে বৃহত্তর খুলনার বিভিন্ন থানা সদর ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে। কপিলমুণিতে বিনােদ সাধু প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালেও রাজাকাররা ঘাঁটি গেড়েছিল।

নারী ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযােগ, মানুষ ধরে এনে জবাই করে হত্যা প্রভৃতি পবিত্র কর্তব্য। (!) এই রাজাকার ক্যাম্প থেকে পরিচালিত হতাে। রাজাকারদের সহযােগিতায় পাকি হানাদাররা গল্লামারী, খুলনা শহরের ফরেস্টঘাট, কাস্টমসঘাট, নতুন বাজার এলাকাসহ  খুলনার বিভিন্ন স্থানে নর হত্যা চালায়। গ্রামকে গ্রাম পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের চরম বিরােধী ও পাকি সামরিক জান্তার বিশ্বস্ত সেবাদাস হিসাবে মাওলানা ইউসুফ তার কর্মের (!) স্বীকৃতিস্বরূপ যুদ্ধাকালীন দালাল মন্ত্রিসভায় মন্ত্রিত্বও লাভ করেন। মুক্তিযােদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সূত্রে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকি হানাদার। ও রাজাকার বাহিনী খুলনায় যে অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে তা অবর্ণনীয়। লুটতরাজ, অগণিত বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া, বাধ্যতামূলকভাবে হিন্দুদের ধর্মান্তরিত করা, অগণিত মানুষকে গুলি করে কিংবা পশুর মতাে জবাই করে হত্যা করা, অসংখ্য মা-বােনের ইজ্জত হরণসহ বহু নারকীয় ঘটনা ঘটেছে। এর সব কিছুরই মূলে ছিলেন মাওলানা ইউসুফ। দেশ স্বাধীনের পর অপরাপর নরঘাতক ও যুদ্ধাপরাধীদের মতাে মাওলানা ইউসুফও।  দীর্ঘদিন আত্মগােপন করে থাকেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রকাশ্যে আসেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধবিরােধী ঘৃণিত ভূমিকার জন্য তাঁকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়নি। একাত্তুরের গণধিকৃত পৈশাচিক কাজের জন্য তাঁর কোন অনুশােচনাও নেই। বর্তমানে তিনি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির। নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যবসাবাণিজ্য করে তিনি প্রচুর বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন।

জনকণ্ঠ ॥ ২০-১২-২০০০

সূত্র : সেই রাজাকার – জনকন্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের সংকলন