You dont have javascript enabled! Please enable it! অসংখ্য মানুষের ঘাতক আফছার জল্লাদ এখন চায়ের দোকান চালায় - সংগ্রামের নোটবুক

অসংখ্য মানুষের ঘাতক আফছার জল্লাদ এখন চায়ের দোকান চালায়

ফখরে আলম ॥ একাত্তরের ঘাতক বকলম আফছার জল্লাদকে এলাকার দশ গ্রামের মানুষ চেনে। স্বঘােষিত ‘মেজর’ নামের এই রাজাকারের বাড়ি যশাের সদর থানার নরেন্দ্রপুর গ্রামে। সে বীর মুক্তিযােদ্ধা মাহফুজুল হককে খুন করেছে। রূপদিয়া এলাকার বধ্যভূমি তার হাতেই সৃষ্টি। এখন আফছার জল্লাদ গ্রামে চায়ের দোকান খুলেছে। চা বানিয়ে বিক্রি করে। এক সময়ের কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত আফছার আলী ১৯৭১ সালে লুৎফ মৌলভী ও  আবদুল খালেক নামের দুই মােলবাদীর প্ররােচনায় রাজাকারে নাম লেখায়। তারপর সাত দিনের প্রশিক্ষণ শেষে আফছার কাঁধে রাইফেল ঝুলিয়ে রূপদিয়া, কচুয়া, নরেন্দ্রপুর, চাউলিয়া এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। প্রায় সাত ফুট লম্বা ফর্সা গাট্টাগােট্টা শরীর স্বাস্থ্যের কারণে অন্য রাজাকার সঙ্গীরা তাকে মেজর বলে ডাকত। বাঙালীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানাের কারণে আফছার আলীর নাম মুখে মুখে। আফছার জল্লাদ’ বলে উচ্চারিত হতে থাকে। সেই নাম তার আজও আছে। আফছার সম্পর্কে সরেজমিনে খবর নিয়ে জানা যায় তার তিন স্ত্রী। রূপদিয়া বাজারে ১৯৭১ সালে রােস্তম ডাক্তারের বাড়ির ক্যাম্পে রাজাকাররা বাঙালীদের ওপর যে নির্যাতন চালাত তার জল্লাদ ছিল আফছার।

রূপদিয়া বাজারের রাজমিস্ত্রি মােশারফ, ভ্যান চালক দলিলুর রহমান প্রাক্তন সেনা সদস্য জিরাটের ফজলুর রহমান ছাড়াও অনেকের সঙ্গে কথা বলে  জানা যায়, আফছার জল্লাদ খালেক, গােলাম, মােজাহের, লুৎফর, ওয়াজেদ এদের সঙ্গে [এক হয়ে মােস্তফা মেীলভী, গফুর মৃধা, সান্যাল, গহর আলী, আব্দুল জলিল, স্বর্ণকার, [মুক্তিযােদ্ধা মাহফুজুল হককে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। লুটতরাজ, নারী ধর্ষণেরও বিস্তর অভিযােগের কথা এই জল্লাদ সম্পর্কে শােনা যায়। কচুয়া গ্রাম থেকে ধরে এনে মাহফুজকে যে ভাবে হত্যা করা হয় তা শুনে আজও অনেকের প্রাণ কেঁপে ওঠে। স্বাধীনতার পর আফছার গা ঢাকা দেয়। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করে মুক্তিযােদ্ধারা  তাকে রূপদিয়ায় ধরে আনে। এখানে অন্য রাজাকারদের সঙ্গে তাকেও মারপিট করে পুলিশে দেয়া হয়। বছরখানেক জেল খেটে সে গ্রামে ফিরে আসে। রূপদিয়া বাজারে নৈশ প্রহরীর চাকরি নেয়। এখন আফছার নরেন্দ্রপুর গ্রামে চায়ের দোকান খুলেছে। সম্প্রতি ঐ গ্রামে গিয়ে চায়ের দোকানে কথা হয় রাজাকার আফছারের সঙ্গে তার শরীর ভেঙ্গে পড়েছে। কথা বলতে কষ্ট হয়। আফছার বলল, যা করেছি ভুল করেছি। সেই পাপের ফল এখন ভােগ করছি ওষুধেও রােগ সারছে না। এর চেয়ে মৃত্যু ভাল  একদিকে জল্লাদ অভিধা-অন্যদিকে অসুখ আমাকে গিলে খাচ্ছে।

জনকণ্ঠ ॥ ১৪-১২-২০০০

সূত্র : সেই রাজাকার – জনকন্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের সংকলন