উথুলীর বারাদিয়ার মানুষ মামলাবাজ রাজাকার জলিল মােল্লার কূটকৌশলে বন্দী
মানিকগঞ্জ থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ ‘৭১-এর রাজাকার জলিল মােল্লা বারাদিয়া গ্রামের এক বিষফোড়া। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাক বাহিনীর এই দোসর এ গ্রামে গড়ে তুলেছিল এক সন্ত্রাসের রাজত্ব। দেশ স্বাধীন হলেও বহাল তবিয়তেই আছে ঐ রাজাকার। এখন তার কূটবুদ্ধির কাছে সাধারণ মানুষ হয়ে পড়েছে জিম্মি। প্রতিটি ব্যাপারে তার নােংরা নাকটি গলাতেই হবে। বিচার-সালিশে তার ভূমিকা গ্রামে মানেনা আপনি মােড়ল”-এর মতাে। তার মতের সাথে অমিল হলেই মামলা মােকদ্দমার ফাঁদে জড়িয়ে দেয়। যে কারণে গ্রামে তার নাম হয়েছে মামলাবাজ রাজাকার” জলিল মােল্লা। তার নাক গলানাে স্বভাব এলাকার স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, হাটবাজার, ক্লাবের উন্নয়নে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। অ্যাচিতভাবে অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার প্রবণতায় অতিষ্ঠ গ্রামবাসী গণদরখাস্ত করেছে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে। তার পরও গ্রামবাসী শান্তি ফিরে পায়নি। জলিল মােল্লা হুমকি দিচ্ছে, মামলা-মােকদ্দমা করে শশাধ নেবে। শিবালয় থানার উথুলী ইউনিয়নের বারাদিয়া গ্রামে ‘৭১ সালে এই রাজাকারের ছিল দোর্দণ্ড প্রতাপ। তার নেতৃত্বে চলেছে লুটতরাজ, মারপিট। নিয়মিত চাঁদা দিয়েও রক্ষা পায়নি অনেকে। এদের মধ্যে একজন শ্ৰীমন্ত পাল। গ্রামের প্রতিটি হিন্দু পরিবারের কাছ থেকে ঐ রাজাকারের দল নিয়মিত চাঁদা আদায় করত। একটি কিস্তি দিতে দেরি হওয়ায় দলবল নিয়ে হামলা চালায় শ্রীমন্তের বাড়িতে। পরনের কাপড় ছাড়া কিছুই ছিল না ঐ
পরিবারটির। পরে হিসাব করে দেখা গেছে, ৫ টাকা মণ ধরে প্রায় দুই লাখ টাকার পিতল, কাঁসার থালা-বাসন লুট হয়েছিল। ধান লুট হয়েছিল পঞ্চাশ মণ। শ্ৰীমন্ত পালের নাম খােদাই করা দাদির দেয়া পিতলের বদনাটি উদ্ধার করা হয়েছিল ঐ জলিল মােল্লার বাড়ি থেকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর। রেত দিয়ে নাম মােছার সময় লােকমুখে খবর পেয়ে শ্ৰীমন্ত পাল হাতেনাতে ধরে ফেলে। মাফ চেয়ে ফেরত দিয়েছে জলিল মােল্লা। এই রাজাকারের হাত থেকে নিজের মাও রক্ষা পায়নি। নিজের নামে দলিলের জমি বিক্রি করাতে ছেলের হাতে বৃদ্ধা বয়সে মার খেতে হয়েছে ঐ মহিলাকে। স্থানীয় গ্রামবাসী জানিয়েছে, ছেলের মার খেয়ে পা ভেঙ্গে গিয়েছিল বৃদ্ধার। এর পর বেশিদিন বাঁচেনি ঐ “মা”। তিনটি বিয়ে করেও এই রাজাকারের নামে রয়েছে অসংখ্য মেয়েঘটিত কেচ্ছাকাহিনী। এর জন্য প্রকাশ্যে মারপিট করা হয়েছে। মাফ চেয়ে জরিমানা দিয়েছে। তারপরও লজ্জা। হয়নি। গ্রামের মানুষকে হয়রানি করতে একের পর এক মামলা করেছে। ঐ। মামলাগুলাের বেশিরভাগই মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তার পরও থেমে থাকেনি তার শয়তানি। বাধ্য হয়ে গ্রামবাসী জোট বেঁধে গণদরখাস্ত করেছে জেলা প্রশাসকের কাছে। দরখাস্তে ঐ মামলাবাজের দায়ের করা সুনির্দিষ্ট বারােটি মামলার উল্লেখ করা হয়েছে। গ্রামবাসীর একটাই চিন্তা-এর পরও কি বাঁচা যাবে ঐ দুষ্টগ্রহের কাছ থেকে? জলিল মােল্লার বক্তব্য ‘৭১-এর দোর্দণ্ড প্রতাপশালী রাজাকার জলিল মােল্লার বর্তমান শারীরিক অবস্থা বেশ খারাপ। কুষ্ঠরােগে আক্রান্ত পা নিয়ে হাঁটাচলাই মুশকিল। হাতের আঙ্গুলগুলাে বাকা হয়ে গেছে। তার পরও তাকে বাড়ি পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেল উপজেলা কার্যালয়ে। বলল, তার দায়ের করা একটা অভিযােগের খোঁজখবর নিতে এসেছে। বেশ জোরের সাথে বলল, সে যে মামলা কিংবা অভিযােগগুলাে করেছে তার সব ক’টিই সত্য। তার বিরুদ্ধে যারা গণদরখাস্ত করেছে তারাই দোষী। ‘৭১ সালে রাজাকার হওয়ার কথা স্বীকার করলেও বলল, চাপে পড়ে রাজাকার হতে। হয়েছে। এটাও বলল সে রাজাকার ছিল বলেই নাকি বারাদিয়া গ্রামের লােকজন। অনেকটা রক্ষা পেয়েছে। হিন্দুদের বাড়ি লুটের কথাও অস্বীকার করল। তবে লুটের বদনা তার বাড়ি থেকে কিভাবে বের হলাে এ প্রশ্নে থেকেছে নিশ্রুপ।
জনকণ্ঠ ॥ ১০-০৪-২০০০
সূত্র : সেই রাজাকার – জনকন্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের সংকলন