১৫ আগস্ট ১৯৭৫ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন হবার কথা। সংশ্লিষ্ট সবাই এনিয়ে খুবই ব্যস্ত ছিলো। যেহেতু চ্যান্সেলর ও প্রেসিডেন্ট সেটি উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন। এবং ছাত্রদের মাঝে সার্টিফিকেট বিতরণ করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন উৎসবমুখর পরিবেশ। সেই পরিবেশের ভেতর ১৪ আগস্ট ১৯৭৫ তারিখে ক্যাম্পাস এরিয়ার ভেতরে কিছু বিস্ফোরণ হল। বিশেষ করে মঞ্চের একদম কাছে যেখান থেকে পরদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্বোধনী ভাষণ দেবার কথা এবং ছাত্রছাত্রীদের মাঝে সার্টিফিকেট দেবার কথা। শোনা যায় যে, জাসদ এই প্রোগ্রাম উপলক্ষে ক্যাম্পাসে অনেকে জড়ো হয়েছে এবং একটি বিধ্বংসী মনোভাব নিয়েছে। গুজব আসে যে তারা প্রেসিডেন্টকে হত্যা করার পদক্ষেপ নিতে পারে যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। জাসদের আর্মড উইং এই ভয়ানক কাজটির জন্য সন্দেহ তালিকার শীর্ষে।
যখন সব আয়োজন চলছিল তখন হঠাৎ করে ১৪ আগস্ট ‘৭৫ একটি ঘটনা ঘটে। পার্বত্য চট্টগ্রামে আমাদের অপারেশনের জন্য ব্যবহৃত একটি ভারতীয় হেলিকপ্টার ফেনীতে বিধ্বস্ত হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা সড়ক যোগাযোগের জন্য সব সময় উপযোগী নয়। তাই মাঝে মাঝে আমাদের হেলি-লিফটিং ক্যাপাসিটির দরকার। সেটা সে সময় আমাদের ছিলো না। আমাদের সরকারের অনুরোধে ভারত সরকার আমাদের একটি হেলিকপ্টার (Russian MI-4) দেয়। সাথে ক্রুদের ছোট্ট একটা গ্রুপ এবং পাইলট আমাদের জন্য দেয়া হয়। আমি অপারেশনের জন্য এটাকে পার্বত্য চট্টগ্রাম গ্যারিসনে রাখি। সার্ভিসিং এবং মেইন্টেনেন্স এর জন্য প্রতি মাসে এটাকে কোলকাতা পাঠাতে হয়। ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস। এই দিনকে সামনে রেখে ভারতীয় অফিসার ও সদস্যরা হেলিকপ্টারটির সার্ভিসিং ও মেইন্টেনেন্সের জন্য কোলকাতায় যাবার দিন সাজিয়ে নেয়।
সেই অনুযায়ী এই হেলিকপ্টারটি মাসিক মেইন্টেনেন্সের জন্য কোলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। সংগৃহীত তথ্য মতে, যখন হেলকপ্টারটি ১৪ আগস্ট ‘৭৫ রওনা দিয়ে ফেনী এলাকায় আসে তখন একটি দুর্ঘটনার শিকার হয়। একজন চাক্ষুষ সাক্ষী জানান, যখন এটা ফেনী এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলো তখন একটি শকুন হেলিকপ্টারের পাখায় লেগে যায়। এর ফলে পাখাটি খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে হেলিকপ্টারটি একটি পাথরের মত মাটিতে পড়ে যায়। এর সমস্ত যাত্রীরা মারা যায়। এই ঘটনাটিতে আর্মি হেড কোয়ার্টার সহ সবার মন বিষণ্ণ হয়ে পড়ে। তারা আমাদের মেহমান। স্বাভাবিকভাবেই এটি আমাদের সবার জন্য দুঃখজনক একটি ঘটনা। আমরা সেই লাশগুলো ঢাকা হয়ে কোলকাতায় পাঠাবার ব্যবস্থা করি। আইন অনুযায়ী ফেনী কুমিল্লা গ্যারিসনের অন্তর্ভুক্ত। ঘটনা ঘটার সাথে সাথে আমি কুমিল্লা গ্যারিসনের কমান্ডার কর্নেল (পরবর্তীতে মেজর জেনারেল) আমজাদ চৌধুরী পি এস সি এর সাথে যোগাযোগ করে তাকে অতি সত্বর সেখানে কিছু অফিসার ও সেনাসদস্য পাঠাতে বলি যাতে করে তারা ঘটনাস্থল বেষ্টনী করে রাখতে পারে এবং উদ্ধারকাজ চালাতে ও দুর্ঘটনার তদন্ত করতে পারে।
অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিস্ফোরণের ঘটনায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। কারণ পরদিন বঙ্গবন্ধু সেখানে যাবেন। তৎকালীন আই জি পি নুরুল ইসলাম সাহেব আমার সাহায্য চাইলেন। সেসময় পুলিশ বাহিনীর বিস্ফোরক পদার্থ সনাক্ত করার মত সক্ষমতা বা অভিজ্ঞতা তৈরি হয়নি যাতে করে এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় আমি CGS ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফকে ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়ন থেকে কিছু এক্সপার্ট পুলিশের কাছে পাঠাতে নির্দেশনা দিলাম। একই সাথে আমি FIU কে চোখকান খোলা রাখতে DMI কে আদেশ দিলাম। কর্নেল জামিল সার্বিক গোয়েন্দা নির্দেশনা দিলেন যার শীঘ্রই ডিজিএফআই হবার কথা। টানটান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে পুলিশ এবং গোয়েন্দা বিভাগ মিলে পুরো এলাকার জন্য একটি বৃহৎ পরিসরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার আয়োজন করল। ডিজি হিসেবে অপেক্ষমাণ ও MS (P) কর্নেল জামিল পুরো কার্যক্রম সমন্বয় করেন। ব্রিগেডিয়ার রউফ, যিনি শীঘ্রই ডিজি থেকে চলে যাবেন, পরেরদিন তার কর্নেল জামিলের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের কথা (১৫ আগস্ট ১৯৭৫)। তিনি নিজেও সক্রিয়ভাবে গোয়েন্দা অপারেশন তদারকিতে থাকলেন।
Translated by Dr Razibul Bari
Reference: 15th August A National Tragedy Major Gen K M Safiullah BU PSC