You dont have javascript enabled! Please enable it! খােকসা-কুমারখালীর কাই সিরাজ এখন ঢাকার ধনাঢ্য ব্যক্তি হাজী সিরাজুল ইসলাম - সংগ্রামের নোটবুক

খােকসা-কুমারখালীর কাই সিরাজ এখন ঢাকার ধনাঢ্য ব্যক্তি হাজী সিরাজুল ইসলাম

এমএ রকিব, কুষ্টিয়া থেকে ॥ একাত্তরে কুষ্টিয়ার খােকসা-কুমারখালী এলাকার। শীর্ষস্থানীয় জামায়াত নেতা রাজাকার ‘কাই সিরাজ’ এখন হাজী সিরাজুল ইসলাম বিশ্বাস। ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত। ‘৭১-এ অসংখ্য নিরপরাধ মানুষকে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনে নেতৃত্বদানকারী ওই রাজাকারের কথা স্মরণ করে এলাকার মানুষ আজও আঁতকে ওঠেন। এককালের সামান্য কাঠখড়ি বিক্রেতা ও বইয়ের দোকানদার ‘কাই সিরাজ’ আজ দেশের অন্যতম ধনাঢ্য ব্যক্তি। ঢাকা ও মানিকগঞ্জে রয়েছে তার কয়েকটি ব্যবসা (৫০) প্রতিষ্ঠান। একাত্তরের সেই সব অপকর্মের কারণে এই ঘৃণ্য মানুষটি দীর্ঘ ৩০ এ বছর তার গ্রামের বাড়ি আসতে সাহস পায় না। তবে অঢেল বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়ে পড়ায় ওই সময় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কেউ এখন আর তাকে ঘটাতে চায় না। এলাকার বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে এ সব তথ্য। মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের অন্য জেলাগুলাের মতাে কুষ্টিয়াতেও পাকি বাহিনীর ছত্রছায়ায় সংগঠিত হয় স্বাধীনতাবিরােধীচক্র। গড়ে ওঠে তথাকথিত পিস কমিটি এবং কুখ্যাত রাজাকার ও আলবদর বাহিনী। ওই সময় জামায়াত নেতা ‘কাই সিরাজ’ ছিল কুমারখালী-খােকসা অঞ্চলের রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার ও পিস কমিটির অন্যতম নেতা। বাবার পথ অনুসরণ করে ওই সময় সিরাজের চার ছেলেও রাজাকারের খাতায় নাম লেখায়।

কুমারখালী-খােকসা এলাকার বিভিন্ন স্থান সরেজমিনে ঘুরে কথা হয় বেশ কিছু মুক্তিযােদ্ধা ও সে সময়কার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার-পরিজনের সঙ্গে। তারা মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজাকার প্রধান সিরাজ ও তার দোসরদের বিভিন্ন অপকর্ম ও ঘৃণ্য কার্যকলাপের বিশদ বর্ণনা দেন জনকণ্ঠকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সূত্রগুলাে জানায়, মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে সিরাজ ছিল জ্বালানিকাঠ বিক্রেতা ও বইয়ের দোকানদার। কুমারখালী-খােকসা বাজার এলাকায় তার ছিল খড়ির আড়ত,। কুমারখালীর কর্মকার পট্টিতে তার ছিল একটি ছােট বইয়ের দোকান। নাম ছিল ‘বইঘর’। এটি ১৯৬৮-৬৯ সালের কথা। মূলত জ্বালানি কাঠ বিক্রি করার কারণেই এলাকাবাসী তার নাম দিয়েছিল কাই সিরাজ’। ওই সময় তার আর্থিক অবস্থাও তেমন সচ্ছল ছিল না। সিরাজ স্বাধীনতাকামী অসংখ্য নিরীহ, নিরপরাধ মানুষকে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনে নেতৃত্ব দিয়েছিল। তার ভয়াবহ নৃশংসতার কথা স্মরণ করে এলাকার মানুষ আজও শিউরে ওঠে। একাত্তরের এপ্রিলের প্রথম দিকে বিমান বহরের প্রচণ্ড আক্রমণের মধ্য দিয়ে পাকি বাহিনী কুমারখালী-খােকসা এলাকাটি দখল করে নেয়। উর্দু ভাষায় পারদর্শী জামায়াত নেতা সিরাজ এ সময় সহজেই পাক সেনা অফিসারের প্রিয় পাত্রে পরিণত হয়। দখলের পর পাকি সেনারা পিস কমিটি গঠনের জন্য জামায়াত ও মুসলিম লীগ নেতাদের প্রতি আহ্বান জানায়।

সিরাজ এ সময় কুমারখালী ও খােকসা থানা এলাকায় ওই কমিটি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গােলাম মােহাম্মদ, শামসুদ্দিন মাস্টার, আজিজুল হক, মােন্তাজ প্রামাণিক, মহসিন মেম্বার ও ডাঃ মনসুরের নেতৃত্বে কুমারখালী এবং আকাম উদ্দিন বিশ্বাস, জালাল উদ্দিন, করম আলী, সাদেক বেপারী, ইসাহাক আলী বিশ্বাস, সিরাজুল হক ও সিতাব উদ্দিন বিশ্বাসের নেতৃত্বে গঠন করা হয় খােকসা থানা পিস কমিটি। এদের অনেকেই এখন আর বেঁচে । নেই। এ সময় সিরাজকে ওই অঞ্চলের রাজাকার বাহিনীর কমান্ডারের দায়িত্ব দেয়া হয়।’ তার নেতৃত্বে ওই এলাকায় গড়ে ওঠে বিশাল বাহিনী। এদের নেতৃস্থানীয় ছিল ইদ্রিস আলী, আব্দুল গনি, আব্দুল কুদুস, মঈনুদ্দিন, বরুণ শেখ, আজিজল শেখ ও মকছেদ আলী প্রমুখ। কমান্ডার সিরাজ এ সময় অস্ত্র নিয়ে দোর্দণ্ড প্রতাপে এলাকায় চলাফেরা করত। তার রাজাকার বড় দু’ছেলের নামেও ইস্যু করা হয়েছিল অস্ত্র । পাকি বাহিনীর ছত্রছায়ায় এবং সিরাজের নেতৃত্বে ও নির্দেশে এ সময় রাজাকাররা কুমারখালী-খােকসা এলাকায় খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন ও লুণ্ঠনে মেতে ওঠে। কুমারখালীর দয়রামপুর, হাসিমপুর, মহেন্দ্রপুর ও চাপাইগাছি গ্রাম এলাকায় ছিল তাদের অন্যতম ঘাঁটি। কুমারখালীর শেরকান্দি গ্রামের বিশিষ্ট হিন্দু কাঙ্গালী পরিবারের ৯ সদস্যকে পাকি বাহিনী। ও রাজাকাররা নৃশংসভাবে হত্যা করে ও মালামাল লুটে নেয়। দয়রামপুর গ্রামের বিত্তশালী সুধীর ঘােষকে আগুনে পুড়িয়ে ও গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সূত্র আরও জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও মাদারীপুর এলাকার ৩৫ জন মুক্তিকামী যুবক মাতৃভূমি রক্ষার যুদ্ধে অংশ নেবার জন্য উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে হেঁটে ভারত যাচ্ছিল। কুমারখালীর পুরনাে চড়াইকোল গ্রামে পৌছামাত্র খবর পেয়ে সিরাজ তার দোসরদের দিয়ে পাকি বাহিনীর হাতে তাদের তুলে দেয়। পরে তারা মুক্তিপাগল ওই বীর সন্তানদের গড়াই রেল ব্রিজের নিকট এনে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে। খােকসা এলাকার ঈশ্বরদী, একতারপুর, মানিককাট, বিহারিয়া, দশকাহনিয়া, ইসলাট, নিছলাট ও খাগড়বাড়ীয়া গ্রামে নিরীহ মানুষের ওপর চালানাে হয় এ কল হয়) নির্যাতন, তাদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযােগ ও লুটপাট করা হয়।

লুটপাট করা হয় -খােকসা এলাকার বিভিন্ন স্থান সরেজমিনে ঘুরে কথা হয় বেশ কিছু মুক্তিযােদ্ধা ও সে সময়কার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার-পরিজনের সঙ্গে। তারা মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজাকার প্রধান সিরাজ ও তার দোসরদের বিভিন্ন অপকর্ম ও ঘৃণ্য কার্যকলাপের বিশদ বর্ণনা দেন জনকণ্ঠকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সূত্রগুলাে জানায়, মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে সিরাজ ছিল জ্বালানিকাঠ বিক্রেতা ও বইয়ের দোকানদার। কুমারখালী-খােকসা বাজার এলাকায় তার ছিল খড়ির আড়ত,। কুমারখালীর কর্মকার পট্টিতে তার ছিল একটি ছােট বইয়ের দোকান। নাম ছিল ‘বইঘর’। এটি ১৯৬৮-৬৯ সালের কথা। মূলত জ্বালানি কাঠ বিক্রি করার কারণেই এলাকাবাসী তার নাম দিয়েছিল কাই সিরাজ’। ওই সময় তার আর্থিক অবস্থাও তেমন সচ্ছল ছিল না। সিরাজ স্বাধীনতাকামী অসংখ্য নিরীহ, নিরপরাধ মানুষকে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনে নেতৃত্ব দিয়েছিল। তার ভয়াবহ নৃশংসতার কথা স্মরণ করে এলাকার মানুষ আজও শিউরে ওঠে। একাত্তরের এপ্রিলের প্রথম দিকে বিমান বহরের প্রচণ্ড আক্রমণের মধ্য দিয়ে পাকি বাহিনী কুমারখালী-খােকসা এলাকাটি দখল করে নেয়। উর্দু ভাষায় পারদর্শী জামায়াত নেতা সিরাজ এ সময় সহজেই পাক সেনা অফিসারের প্রিয় পাত্রে পরিণত হয়। দখলের পর পাকি সেনারা পিস কমিটি গঠনের জন্য জামায়াত ও মুসলিম লীগ নেতাদের প্রতি আহ্বান জানায়। সিরাজ এ সময় কুমারখালী ও খােকসা থানা এলাকায় ওই কমিটি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গােলাম মােহাম্মদ, শামসুদ্দিন মাস্টার, আজিজুল হক, মােন্তাজ প্রামাণিক, মহসিন মেম্বার ও ডাঃ মনসুরের নেতৃত্বে কুমারখালী এবং আকাম উদ্দিন বিশ্বাস, জালাল উদ্দিন, করম আলী, সাদেক বেপারী, ইসাহাক আলী বিশ্বাস, সিরাজুল হক ও সিতাব উদ্দিন বিশ্বাসের নেতৃত্বে গঠন করা হয় খােকসা থানা পিস কমিটি। এদের অনেকেই এখন আর বেঁচে । নেই। এ সময় সিরাজকে ওই অঞ্চলের রাজাকার বাহিনীর কমান্ডারের দায়িত্ব দেয়া হয়।’ তার নেতৃত্বে ওই এলাকায় গড়ে ওঠে বিশাল বাহিনী। এদের নেতৃস্থানীয় ছিল ইদ্রিস আলী, আব্দুল গনি, আব্দুল কুদুস, মঈনুদ্দিন, বরুণ শেখ, আজিজল শেখ ও মকছেদ আলী প্রমুখ। কমান্ডার সিরাজ এ সময় অস্ত্র নিয়ে দোর্দণ্ড প্রতাপে এলাকায় চলাফেরা করত। তার রাজাকার বড় দু’ছেলের নামেও ইস্যু করা হয়েছিল অস্ত্র । পাকি বাহিনীর ছত্রছায়ায় এবং সিরাজের নেতৃত্বে ও নির্দেশে এ সময় রাজাকাররা কুমারখালী-খােকসা এলাকায় খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন ও লুণ্ঠনে মেতে ওঠে। কুমারখালীর দয়রামপুর, হাসিমপুর, মহেন্দ্রপুর ও চাপাইগাছি গ্রাম এলাকায় ছিল তাদের অন্যতম ঘাঁটি। কুমারখালীর শেরকান্দি গ্রামের বিশিষ্ট হিন্দু কাঙ্গালী পরিবারের ৯ সদস্যকে পাকি বাহিনী। ও রাজাকাররা নৃশংসভাবে হত্যা করে ও মালামাল লুটে নেয়। দয়রামপুর গ্রামের বিত্তশালী সুধীর ঘােষকে আগুনে পুড়িয়ে ও গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সূত্র আরও জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও মাদারীপুর এলাকার ৩৫ জন মুক্তিকামী যুবক মাতৃভূমি রক্ষার যুদ্ধে অংশ নেবার জন্য উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে হেঁটে ভারত যাচ্ছিল। কুমারখালীর পুরনাে চড়াইকোল গ্রামে পৌছামাত্র খবর পেয়ে সিরাজ তার দোসরদের দিয়ে পাকি বাহিনীর হাতে তাদের তুলে দেয়। পরে তারা মুক্তিপাগল ওই বীর সন্তানদের গড়াই রেল ব্রিজের নিকট এনে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে। খােকসা এলাকার ঈশ্বরদী, একতারপুর, মানিককাট, বিহারিয়া, দশকাহনিয়া, ইসলাট, নিছলাট ও খাগড়বাড়ীয়া গ্রামে নিরীহ মানুষের ওপর চালানাে হয় ২ খােকসা এলাকার বিভিন্ন বাজার।

এসব ঘটনায় পাকি বাহিনী ও রাজাকারদের হাতে বহু মানুষ নিহত হয়। মুক্তিযুদ্ধকালে ‘কাই সিরাজ’-এর প্রত্যক্ষ মদদে খুনের শিকার হয় তার প্রতিবেশী মােড়াগাছা গ্রামের মরহুম পানা উল্লাহ খানের মেজো ছেলে মুক্তিযােদ্ধা আনসার আলী খান। ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদশী শহীদ আনসারের ছােট ভাই মুক্তিযােদ্ধা। সেলিম উদ্দিন খান। সেদিন মুক্তিযােদ্ধা আনসার ভারত থেকে উচ্চ প্রশিক্ষণ নিয়ে দু’জন মুক্তিযােদ্ধাকে নিয়ে মােড়াগাছায় গ্রামের বাড়িতে ফেরেন। বাড়ির কাচারিঘরে সেলিমসহ তারা বসে যুদ্ধকৌশল নিয়ে আলােচনা করছিলেন। বেলা ৩টার দিকে পার্শ্ববর্তী মসজিদ থেকে সিরাজের নির্দেশে তার ছেলে রাজাকার শফিকুল ইসলাম ওরফে ছানা অতর্কিতে চাইনিজ রাইফেল দিয়ে মুক্তিযােদ্ধা আনসারকে গুলি করে। এতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই তিনি শহীদ হন। এর পর রাজাকাররা তাদের ঘরবাড়ি লুটে নেয়। দু’তিন দিন পর স্বাধীনতাবিরােধী সিরাজ নিজ হাতে আরও তিন মুক্তিযােদ্ধাকে গুলি করে হত্যা করে। তারা হলেন রতনপুর গ্রামের মােজাহার আলী বিশ্বাস এবং হেলালপুর গ্রামের দুলা ও টুলা নামের দু’সহােদর। এছাড়াও তার নির্দেশে নারায়ণচন্দ্র সরকার, রাখাল কর্মকার, বলরাম মাঝি ও গৌরের পিতাকে হত্যা করা হয়। মুক্তিযােদ্ধা আনসার নিহত হলে সে সময় খােকসা থানায় একটি মামলাও হয়। এ মামলায় ‘কাই সিরাজ’ ও তার ছেলে শফিকুল ইসলামকে অন্যতম আসামী করা হয়। কিন্তু পরে ওই মামলার কার্যক্রম আর এগােয়নি। শহীদ পরিবারটি আজও বিচার পায়নি। সূত্র জানায়, সিরাজ, আকামউদ্দিন বিশ্বাস ও জালাল মিয়া এ তিনজনের বিরুদ্ধে কলাবােরেটর মামলায় বিশ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। কিন্তু আকাম ও জালাল গ্রেফতার হয়ে কারাগারে গেলেও সিরাজ আত্মগােপন করে থাকে। এদিকে রাজাকারদের হাতে ভাই নিহত হবার পর সেলিম উদ্দিন খানও মুক্তিযুদ্ধে যােগ দেন। সংঘটিত একটি যুদ্ধের বর্ণনা দিয়ে তিনি জানান, মােড়াগাছা প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকায় ছিল রাজাকারদের মজবুত ক্যাম্প। সেখানে কংক্রিটের বাংকারে ৩০/৩৫ জন সশস্ত্র রাজাকার অবস্থান করত। এ রাজাকার বাহিনীর পরিচালনার দায়িত্বে ছিল সিরাজ নিজে। মুক্তিযােদ্ধারা ডিসেম্বরের প্রথম দিকে একদিন ওই ক্যাম্প আক্রমণ করে। মধ্যরাত থেকে ভাের ছয়টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলে)।

টানা ছয় ঘণ্টার এ যুদ্ধে মুক্তিযােদ্ধাদের গােলাবারুদ ফুরিয়ে যাওয়ায় বাংকারে অবস্থিত ঐ রাজাকারদের কোন ক্ষতি করা যায়নি। খােকসা থানা মুক্তিযােদ্ধা কমান্ডার আলাউদ্দিন খান ও লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে সেলিম উদ্দিন খান, দুলাল, আনজুসহ প্রায় ২৫ মুক্তিযােদ্ধা এতে অংশ নেন। যুদ্ধে মুক্তিযােদ্ধাদের পক্ষে আনজু নামে একজন পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে রাজাকার সিরাজের অন্যতম সহযােগী ছিল খােকসা থানা পিস-কমিটির চেয়ারম্যান মৃত আকাম উদ্দিন বিশ্বাস ও কুমারখালী থানা পিস কমিটির চেয়ারম্যান গােলাম মােহাম্মদ। পরে গােলাম মােহাম্মদ মুক্তিযােদ্ধাদের হাতে নিহত হয়। এদিকে পাকি বাহিনীর পরাজয় আঁচ করতে পেরে দেশ স্বাধীন হবার পূর্বমুহূর্তে সে গােপনে পরিবারসহ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় ঢাকায়। সেখানে গিয়ে তারা নিকটাত্মীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা হাশমতের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। ঢাকায় অবস্থানকালে রূপকথার আলাদিনের চেরাগ পাবার মতােই সিরাজের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যেতে থাকে। ৮/১০ বছরের মধ্যেই সে হয়ে পড়ে অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক। ঢাকায় সিরাজের এই উত্থান কুমারখালী-খােকসা এলাকার মানুষের কাছে স্বপ্নের মতাে মনে হয়। তারা হিসাব মেলাতে পারে না। এককালের সামান্য খড়ি বিক্রেতা; যে হাই স্কুল পেরােতে পারেনি সে কিভাবে এমন বিত্তবৈভবের মালিক হলাে। এলাকার অনেকের ধারণা, একাত্তরে সে লুটপাট ও আত্মসাতের মাধ্যমে। প্রচুর টাকা-পয়সা ও সােনাদানা হাতিয়ে নেয়। এগুলােই তার ভাগ্য খুলে দিতে। অনেকাংশে সহায়তা করেছে। পরবর্তীতে সে জনরােষে পড়ার আশঙ্কায় গত বছরে একবারও গ্রামের বাড়ি মােড়াগাছায় আসতে পারেনি। তবে বছর ১০/১২ আগে সে। একবার গ্রামের বাড়িতে আসতে গিয়ে রাজবাড়ীর মাছপাড়া রেল স্টেশনের কাছে গণধােলাই খেয়ে ঢাকা ফিরতে বাধ্য হয়।

জনকণ্ঠ। ২৭-০১-২০০১

সূত্র : সেই রাজাকার – জনকন্ঠে প্রকাশিত রিপোর্টের সংকলন