You dont have javascript enabled! Please enable it! লাতিন আমেরিকায়ও মিছিল - সংগ্রামের নোটবুক

লাতিন আমেরিকায়ও মিছিল

কতোদূর লাতিন আমেরিকা! কোথায় আর্জেন্টিনা, কোথায় চিলি বা ভেনিজুয়েলা। কিন্তু ১৯৭১ সেখানেও মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছিল। ভিক্টোরিয়া ওকাম্পাে নামটি আমাদের বিশেষভাবে পরিচিত রবীন্দ্রনাথের কারণে কিন্তু তিনি নিজগুণেই আর্জেন্টিনার বুদ্ধিজীবী মহলে বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন। বোহের্সের তো এখন বিশ্বজোড়া খ্যাতি স্পেনিশভাষার অন্যতম লেখক হিসেবে। বাঙালির প্রতি ওকাম্পোর দূর্বলতা থাকা অস্বাভাবিক নয়। রবীন্দ্রনাথ তাঁর নাম দিয়েছিলেন বিজয়া। অনুমান করছি আর্জেন্টিনার বুদ্ধিজীবীরা যে বাঙালিদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন তার উদ্যোগ নিয়েছিলেন ভিক্টোরিয়া।১৯৭১ সালের ১১ জুন আর্জেন্টিনার লেখক, অ্যাকাডেমিশিয়ান, শিল্পী, বুদ্ধিজীবীরা মিলে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে একটি স্মারকলিপি পেশ করেন। স্মারক লিপির মূল কথা ছিল পূর্ব পাকিস্তানে যা চলছে তা অনভিপ্রেত বিশেষ করে ভারতে শরণার্থীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, সুতরাং এর প্রতিকার হওয়াউচিত।তারা লিখেছিলেন মানবতার দুর্দশা স্থানীয় নয়, এটি সমগ্র মানবজাতির আশঙ্কা।কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে যা হচ্ছে তাতে মানবতা জাগ্রত হচ্ছে বলে মনে হয় না। তাদের ভাষায়- Human tragedy should know no national barriers; suffering, death and destitution any where in the world should be concern of entire humanity. Yet it is unfortunate that international! conscience does not seem to have awakened sufficiently to the happenings in East Bengal.” | স্মারকলিপিটির অনুবাদ পূর্ব বাংলার সাম্প্রতিক ট্র্যাজিক ঘটনায় অবিশ্বাস্যসংখ্যক মানুষ পুরুষ, মহিলা ও শিশু নিজ দেশ ছেড়ে পালিয়ে প্রতিবেশি দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ মানবিক সমস্যা। ঐতিহ্যের প্রতি অনুরক্ত থেকে ভারত শান্তি, সহাবস্থান ও সমমর্মিতার প্রতি নিবেদিত- হতভাগ্য শরণার্থী, যাদের সংখ্যা ৪০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে, তাদের খাওয়াতে-পরতে ও বাসস্থান দিতে ভারত হিমশিম খাচ্ছে। ভারত যখন নিজেই জাতি গঠনের কাজে নিয়োজিত, তখন এই বিপুলসংখ্যক মানুষের ভার একা বহন করা ভারতের পক্ষে সম্ভব নয়। মানুষের ট্রাজেডি জাতীয়তা ও সীমান্তের বাধা মানে না; পৃথিবীর যেকোনো স্থানে ভোগান্তি, মৃত্যু ও বিপন্নতা সমগ্র মানবজাতির উদ্বেগের কারণ। তার পরও এটা দুর্ভাগ্যজনক যে পূর্ব বাংলায় যা ঘটছে, তার পরও বিশ্ববিবেক ঠিকভাবে জেগে ওঠেনি। এমনকি অন্য দেশের দায়ভার, যার সৃষ্টিতে ভারতের কোনো ভূমিকা নেই, তা প্রশাসনের মাধ্যমে মানবিক সমস্যা কমাতে পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক সাড়া পাওয়া যায়নি। সরকারগুলোর কিছু সাহায্য-তহবিল থেকে থাকে, কিন্তু সংকটের যে আকার, তাতে পরিস্থিতির দাবি-বিশ্বমানবতা এগিয়ে আসুক, এ সমস্যার ভার বহনে অংশী হেকি। এটি আন্তর্জাতিক সমস্যা, জাতীয় নয়।‘এই বিশেষ ক্ষেত্রে জনাব কিন্তু তাত্ত্বিকভাবে একাত্মতা ঘোষণা করা নয়, কিংবা কেবল অনুধাবনের সাক্ষ্য নয়, এটা হতে হবে ধনাত্মক ও সরাসরি সাহায্য হতে হবে নগদ সাহায্য কিংবা দ্রব্যসামগ্রী সেই সঙ্গে বিশ্ববিবেক জাগানো এবং এই সংকটকে সমষ্টিগত দায়িত্ব হিসেবে বিবেচনা করা তো রয়েছেই। আশা করা যায়, আমাদের সরকার বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও সংহতির প্রতি বিশ্বস্ত থেকে পরিস্থিতির দাবি অনুযায়ী জরুরি ভিত্তিতে সর্বোচ্চ সাড়া দেবে এবং ভারতের ওপর আরোপিত দুর্দশা লাঘব করবে।’ | যারা স্বাক্ষর করেছিলেন তাদের নামের পুরো তালিকা পাওয়া যায়নি তবে ভেনিজুয়েলার এক রিপোর্ট থেকে কিছু নাম পাওয়া যায় তা পরে উল্লেখ্য এখানে যে তিনজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন ভিক্টোরিয়া ওকাম্পাে, জর্জ লুই বোহের্স এবং রেভারেন্ড ফাদার ইসমায়েল কুইলেস।তার পর পরই ২৪ জুন ভেনিজুয়েলার কাউন্সিল ফর ওয়ার্ল্ড পিস এ্যাণ্ড হিউমান রাইটস ‘এক কড়া বিবৃতি প্রদান করে। সংস্থার সেক্রেটারি জেনারেল ড, রিকার্ডো মোলিনা মার্টি কঠোর ভাষায় পাকিস্তানীদের নিন্দা করেন পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা চালানোর জন্য। তার ভাষায় পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াশীল ও সমরবিদরা চারদিকে তাদের ফ্যাসিস্ট বাহিনী পাঠিয়ে গণহত্যা চালাচ্ছে।| জুলাই ১৪ তারিখে ভেনিজুয়েলার ল্য রিলিজিয়ন পত্রিকার খবরে জানা যায়, ঐ দেশের ২৯ জন বুদ্ধিজীবী ও শিল্পী পূর্বপাকিস্তানে মানবতার বিপর্যয়ের অবসান জানিয়েছেন, তারা ভারতকে সবধরনের সাহায্যের জন্য আবেদন করেন।বিবৃতিতে তারা বলেন, আর্জেন্টিনায় ইতোমধ্যে তাদের সহযোগীরা এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাঁরা আর্জেন্টিনার যাদের নাম উল্লেখ করেন।
তাঁরা হলেন ভিক্টোরিয়া ওকাম্পাে, জর্জ লুই বোহের্স, এডােয়ার্ডো মালিয়া, আর্নেবেটা সাবাতো, ফিডা সুকৎজ দ্যা মন্টোনি হেকটর বাসালদুয়া, এডেলফো দ্য ওবিয়িত প্রমুখ, বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয় ভেনিজুয়েলার কার্ডিনাল হোসে মেৰার্তো কুইনটেরোর কথা যিনি ইতোমধ্যে বাঙালিদের জন্য উচ্চকণ্ঠে আবেদন জানাচ্ছিলেন, পত্রিকার ভাষায়, “…Quintero has already raised his vibrant voice…”,সু : Bangladesh Docies. vol: 2.

tagore and ocampo

রবীন্দ্রনাথ ও ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো