মুক্তিযোেদ্ধাদের সাহায্য ও সমর্থন জানানাের উদ্যোগ নিন। কমিউনিস্ট পার্টির রাজ্য পরিষদের আহ্বান
(স্টাফ রিপাের্টার)
বাঙলাদেশের মুক্তিযােদ্ধাদের সাহায্য ও সমর্থনদানের জন্য সর্বপ্রকারে উদ্যোগী হতে আজ ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির রাজ্য পরিষদের কার্যকরী কমিটি আহ্বান জানিয়েছেন। “বাঙলাদেশ সরকারের প্রতি অবিলম্বে স্বীকৃতিদানের জন্য ভারত সরকারের কাছে দাবি জানান হয়েছে।
“বাঙলাদেশ মুক্তি-সংগ্রাম সহায়ক কমিটি”কে রাজ্যের সর্বস্তরে সংযুক্তভাবে প্রতিষ্ঠা করা এবং অর্থ, ঔষধ, চিকিৎসার অন্যান্য ব্যবস্থাদি সংগ্রহ করার আবেদন করা হয়েছে। “বাঙলাদেশ” মুক্তিসংগ্রামের সাহায্যার্থে একদিনের মজুরী ও বেতনদান ও রক্তদানের জন্য কমিউনিস্ট পার্টির সমস্ত সদস্যদের কাছে আহবান জানান হয়েছে। সীমান্তের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তােলার ডাক দেওয়া হয়।
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পরিষদের কার্যকরী কমিটির এক সভায় আজ এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তবলী গৃহীত হয়। সমস্ত গণতান্ত্রিক দলগুলির সমর্থনে “বাঙলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সাহায্য আন্দোলন গড়া হবে।
প্রস্তাবে বলা হয় : পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াশীল সামরিক চক্র কর্তৃক লক্ষ লক্ষ বাঙালী জনগণকে নির্বিচারে নৃশংস ও বর্বরভাবে হত্যা করার ঘটনায় কমিউনিস্ট পার্টির রাজ্য কার্যকরী পরিষদ গভীর ক্ষোভ ও তীব্র ধিক্কার প্রকাশ করছে। পরিষদ মনে করছে যে, ইয়াহিয়া খাঁ ও তার অনুচরবর্গ পাকিস্তানের সাম্প্রতিক নির্বাচনে জনগণের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়কে লঙ্ঘন করে বর্তমান গণহত্যার পথ ধরেছে।
এই পরিস্থিতিতে কমিউনিস্ট পার্টি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যে, এক শক্তিশালী “বাঙলাদেশ মুক্তি সংগ্রাম সাহায্য কমিটি গড়ার কাজে তার সর্বশক্তি নিয়ােগ করবে। সমস্ত গণতান্ত্রিক পার্টিগুলাের সমর্থনে এই আন্দোলন হবে। এর প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রাম সহায়ক যুক্তি কমিটিকে পূর্ণ সমর্থন দেওয়া হবে। এই কমিটি বাঙলাদেশের মুক্তিযোেদ্ধাদের জন্য অর্থ, ঔষধ ও অন্যান্য সাহায্যাদি সংগ্রহ করবে। পশ্চিমবঙ্গে প্রতি জেলায় এরূপ যুক্ত কমিটি গঠিত হবে।
বাঙলাদেশের মুক্তিযােদ্ধাদের সমর্থনে সংযুক্ত গণসমাবেশ গড়ে তােলায় পার্টি উদ্যোগ গ্রহণ করবে। সীমান্ত এলাকায় অবিলম্বে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তােলা হবে।
রাজ্য কমিটি এই সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে স্বীকৃতিদানের জন্য ভারত সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। বাঙলাদেশে পাকিস্তানের সৈন্য ও অস্ত্র সরবরাহের সমস্ত সুযােগ-সুবিধা বাতিল করার জন্য সিংহল ও বন্ধু সরকারের কাছে আবেদন জানান হয়েছে।
কমিউনিস্ট পার্টি এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যে, পার্টির সমস্ত সদস্য ও দরদীরা পার্টির “বাঙলাদেশ মুক্তি সংগ্রাম” তহবিলে অন্তত একদিনের মজুরি দেবেন ও রক্তদানের জন্য তাদের নাম পাঠাবেন।
সূত্র: কালান্তর, ২.৪.১৯৭১