জাকার্তায় ওরা ৫০ জন
১৯৭১ সালে, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দেশগুলি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সমর্থন করেনি। তারা পাকিস্তানী প্রচারে বিশ্বাস করত। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যখন জাকার্তার পাকিস্তান দূতাবাস থেকে বাঙালি কর্মকর্তারা স্বপক্ষ ত্যাগের ঘোষণা দেন তখনও তারা সহানুভূতি দেখায়নি। ইন্দোনেশিয়ায় বাঙালি কর্মকর্তা আবুল ফজল শামসুজ্জামান লিখেছেন, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা মোহাম্মদ নাসেরের সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়েছিলেন। নাসের তাকে বলেছিলেন “স্বাধীন না হয়ে আপনারা ভারতের একটি প্রদেশ হলেইতো পারতেন? অবাক হয়ে বললাম, একথা বলছেন কেন? তিনি বললেন, ইন্ডিয়ার সাহায্যে আপনারা স্বাধীন হয়েছেন, ইন্ডিয়ার প্রভাব আপনাদের চিরদিন প্রভাবান্বিত করবে।” এ হেন ইন্দোনেশিয়াও গণহত্যার শুরুর এক সপ্তাহ পরে ৫০ জন ছাত্র জাকার্তার রাজপথে বিক্ষোভ করে। সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এই ৫০ জন নেহায়েত সাহসীই ছিলেন না মানবিক গুণসম্পন্নও ছিলেন। তারা বাংলাদেশ কোথায়, কী হচ্ছে সে সম্পর্কে তেমন জানতেন বলে মনে হয় না । ইন্দোনেশীয় কাগজেও তেমন কিছু ছাপা হতো না। গণহত্যার খবর বিশ্ব গণমাধ্যমে পৌছায় ২৬ মার্চের পরে। আর সেই ৫০ জন ইন্দোনেশীয় ছাত্র প্রতিবাদ জানায় ৭ এপ্রিল। এ সম্পর্কে একটি বাংলা প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল দৈনিক কালান্তরে। পাকিস্তানের বর্বরতার প্রতিবাদ জাকার্তায় ছাত্র মিছিল জাকার্তা, ৭ এপ্রিল-ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা শহরেও বাঙলাদেশে ইয়াহিয়ার বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল হচ্ছে। এ-পি জানাচ্ছে, আজ প্রায় ৫০ জন ছাত্র তাদের ক্লাস থেকে বেরিয়ে পাকিস্তান দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ জানায়।পাকিস্তান দূতাবাসের জনৈক কমকর্তা ছাত্রদের বলেন, “ভারতীয় দূতাবাসে যাও, তারাই আগুনে ঘি ঢালছে।”
কিন্তু ছাত্ররা এই কৌশলে বিভ্রান্ত না হয়ে এক বিবৃতি মারফত দাবি করেন, “পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের উপর সশস্ত্র হামলা অবিলম্বে বন্ধ করে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলি নিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ মীমাংসার ব্যবস্থা করা হোক।
”সূত্র : আবুল ফজল শামসুজ্জামান, জাকার্তায় একাত্তরের ঢেউ, ঢাকা। দৈনিক কালার, ৮/৪/ ১৯৭১।