You dont have javascript enabled! Please enable it! 1948.04.29 | ছাত্রদের দেশবিরোধী আখ্যা দেয়ায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিবাদ। হিন্দুদের দেশ ছাড়তে নিষেধ করলেন সোহরাওয়ার্দী - সংগ্রামের নোটবুক

ছাত্রদের দেশবিরোধী আখ্যা দেয়ায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিবাদ। হিন্দুদের দেশ ছাড়তে নিষেধ করলেন সোহরাওয়ার্দী

ডিআইও কর্তৃক জমা দেয়া প্রতিবেদন থেকে বাছাই করা তথ্য অনুসারে ২৯.৪.১৯৪৮ তারিখে এস এন একাডেমি প্রাঙ্গনে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে হুসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি, শেখ মুজিবুর রহমান এবং সভার সভাপতি বক্তব্য প্রদান করেন। শেখ মুজিবুর রহমান তার বক্তৃতায় সাধারন জনগণের দুঃখ ও দুর্দশার কথা এবং ছাত্রদের উপরে সরকারের অত্যাচার ও নিপীড়নের বিষয়ে উল্লেখ করেন।

ফরিদপুর, ৪ মে ১৯৪৮

৪.৫.৪৮ তারিখে ডিআইও কর্তৃক জমা দেয়া প্রতিবেদনের কপি থেকে প্রতিলিপি নেয়া হয়েছে

২৯.৪.১৯৪৮ তারিখে এস এন একাডেমি প্রাঙ্গনে জনাব মুজাফফর হুসাইন (এম এল) এর সভাপতিত্বে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ১০০০ মানুষ সেখানে উপস্থিত ছিলেন যাদের দুই-তৃতীয়াংশই ছিল হিন্দু। দলীয় স্লোগান এবং ‘সোহরাওয়ার্দি জিন্দাবাদ’ স্লোগানের মাধ্যমে সভা শুরু হয়। জনাব সোহরাওয়ার্দি, শেখ মুজিবুর রহমান (আগেই উল্লেখ করা হয়েছে) এবং সভাপতি তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বস্ত্র, খাদ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাবের কথা তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন এসব পণ্যের অভাবের মধ্যে কিভাবে গরীব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন যে ছাত্ররা পাকিস্তানের জন্য জীবন দিল তাদেরকে আজ দেশের শাসকরা শত্রু বলে অবিহিত করছেন যখন তারা সরকারের যেকোনো নীতির বিরুদ্ধে যৌক্তিক দাবী নিয়ে সাংবিধানিক উপায়ে সমালোচনা করছে। ছাত্রদের কেন তিনি পাকিস্তানের সংগ্রামের ভিতরে টেনে আনছেন এ বিষয়ে তিনি জনাব সোহরাওয়ার্দি্র কাছে ব্যখ্যা চান।

৮.৫.১৯৪৮ তারিখে সপ্তাহান্তে পূর্ব বাংলা পুলিশ ইন্টেলিজেন্সের দায়ের করা প্রতিবেদন থেকে প্রতিলিপি নেয়া হয়েছে, যেখানে উল্লেখ করা হয় যে ২৯.৪.১৯৪৮ তারিখে এস এন একাডেমি প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমান ভাষণ প্রদান করেন। তিনি খাদ্য ও বস্ত্রের ঘাটতি নিয়ে বলেন এবং ভাষা আন্দোলনরত ছাত্রদের উপরে পুলিশের হামলার সমালোচনা করেন। হুসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি তাঁর ভাষণে উপস্থিত সকলকে হিন্দু-মুসলিম ঐক্য বজায় রাখতে বলেন এবং পূর্ব বাংলার হিন্দুদের প্রতি অনুরোধ করেন তারা যেন ভারতে চলে না যান। তিনি উল্লেখ করেন তিনি তাঁর “গুড উইল মিশন” কে কাজে লাগিয়ে অরাজনৈতিক উপায়ে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের বিষয়ে কাজ করছেন।

ঢাকা, ৮ মে ১৯৪৮

পূর্ব বাংলা পুলিশ ইন্টেলিজেন্স সিরিয়াল নং ৩৪-ভলিউম ২ থেকে প্রতিলিপি করা হয়েছে।

তারিখ ৮ মে ১৯৪৮, শনিবার

৫৪১। ফরিদপুর- ২৯ এপ্রিল এস এন একাডেমী প্রাঙ্গনে আরেকটি সভা অনুষ্ঠিত হয় যেখানে সভাপতি ছিলেন মুসলিম লীগের উপবিভাগীয় সম্পাদক জনাব কাজি মুজাফফর হুসাইন। বক্তব্য প্রদান করেন গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর নিবাসী লুতফর রহমানের ছেলে মুজিবুর রহমান। তিনি তাঁর বক্তব্যে পূর্ব পাকিস্তানের সাধারন মানুষের খাদ্য ও বস্ত্রের অভাব এবং ভাষা নিয়ে বিতর্কের সময়ে ছাত্রদের উপরে পুলিশের হামলার সমালোচনা করেন। হুসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি তাঁর ভাষণে উপস্থিত সকলকে হিন্দু-মুসলিম ঐক্য বজায় রাখতে বলেন এবং উল্লেখ করেন এটা ব্যতীত পাকিস্তান কিংবা ভারত কেউই উন্নতি করতে পারবে না। তিনি উপস্থিত জনতাদের কায়েদে আজমের ঘোষণার কথা স্মরণ করিয়ে বলেন পাকিস্তানে সকল সংখ্যালঘুরা সমান অধিকার পাবে। তিনি সবাইকে অনুরোধ করেন হিন্দুরা যেন এই দেশ ছেড়ে ভারতে পাড়ি না জমায়। জনসংখ্যার ভিত্তিতে দুই বাংলা একত্রিত হবার যে অলীক স্বপ্ন অনেকের মনে আছে সেটা বাতিল করবার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেন। তিনি আরও বলেন রাষ্ট্রের সত্যিকারের সমালোচক যারা, তাদেরকেই শত্রু বানানো মোটেই ঠিক হচ্ছে না। তিনি তাঁর “গুড উইল মিশনের” মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমানদের ক্ষতি করবার চেষ্টা করছেন- কয়েকটি পত্রিকার এমন অভিযোগ খণ্ডন করে তিনি বলেন তিনি আসলে অরাজনৈতিক উপায়ে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের ব্যাপারে কাজ করছেন।

২০। যুগান্তর পার্টি – প্রাদেশিক বাংলায় যুগান্তর পার্টি ছিল শীর্ষস্থানীয় বিপ্লবী সংগঠন। সংগ্রামী জাতীয়তাবাদের মুখপাত্র যুগান্তরের নামানুসারে দলের নাম রাখা হয়। দলের নেতা ছিলেন বারীন্দ্র, যিনি ইংরেজদের হাত থেকে ভারতকে মুক্ত করবার শপথ নিয়েছিলেন। তিনি ধর্মীয় মতবাদে উদ্বুদ্ধ ছিলেন কিন্তু প্রয়োজনে সংঘাতেও জড়াতেন, মানবকল্যাণের স্বার্থে ক্ষত্রিয়দের হত্যাকেও তিনি অনুমোদন করতেন। তিনি দেশ ভাগের বিরুদ্ধে বেশ শক্ত ও উদ্যমী প্রতিবাদ গড়ে তোলেন। তিনি ও তার ২১ জন সাগরেদ মিলে অস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুদ করেন এবং বোমা তৈরি করেন, যেটা বিপ্লবী সংগঠন যুগান্তরের ভিত্তি গড়ে দেয়।

২১। ফিফথ কলামিস্টঃ একটি দেশের ভিতরে থেকে সেই দেশের শত্রুপক্ষের হয়ে কোন রাজনৈতিক বা সামরিক উদ্দেশ্যে কাজ করা গোপন বিপ্লবী সংগঠন। এই শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয় ১৯৩৬ সালে যখন চার সারি সৈন্য স্পেন (মাদ্রিদ) আক্রমণের পরে ভিতর থেকে সাহায্য পায়। [1]

অনুবাদ – শিহাব শাহরিয়ার মুকিত

Reference:

[1]       S. Hasina, Secret Documents of Intelligence Branch on Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman. Hakkany Publisher’s, 2018.

মূল দলিল –