You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.03 | উত্তরাঞ্চলের মুক্ত এলাকা স্বাধীন বাংলার প্রশাসন ব্যবস্থা চালু : পুনর্গঠন কর্মসূচী গ্রহণ - সংগ্রামের নোটবুক

উত্তরাঞ্চলের মুক্ত এলাকা স্বাধীন বাংলার প্রশাসন ব্যবস্থা চালু : পুনর্গঠন কর্মসূচী গ্রহণ

(নিজস্ব প্রতিনিধি) বাংলাদেশের বীর মুক্তিযােদ্ধারা রংপুর জেলার পাক দস্যু কবলিত ১২ শত বর্গ মাইল বিস্তীর্ণ আটটি থানা এলাকা সম্পূর্ণ মুক্ত করেছে। এই এলাকায় মােট ৭ লক্ষ লােকের বসতি রয়েছে। বীর মুক্তিযােদ্ধাদের বেপরােয়া আক্রমণের ফলে ভীত সন্ত্রস্ত হানাদার বাহিনী ক্রমশ: কোনঠাসা হয়ে পড়ছে। তারা অস্ত্রশস্ত্র ফেলে এবং বিপুল ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে পালিয়ে প্রাণ বাঁচানাের নীতি গ্রহণ। করেছে। মুক্তিযােদ্ধাদের সাফল্য এবং জনগণের ইস্পাত-দৃঢ় প্রতিরােধের ফলে মুক্তাঞ্চলের পরিধি প্রতিদিনই বেড়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে সরকার মুক্তাঞ্চলে প্রশাসন ব্যবস্থা চালু করার জন্য ব্যবস্থা। গ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশ সরকার গ্রাম এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রশাসন ব্যবস্থা চালু করার কাজে হাত দিয়েছেন। অসামরিক ধরণের মামলা পরিচালনা করার জন্য ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়ােগ করা হয়েছে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক এলাকায় শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য পুলিশবাহিনীও কাজ করেছেন। জেলখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ম্যাজিষ্ট্রেটদের বিচারে অভিযুক্ত কয়েকজন অপরাধীকে উক্ত কয়েদ খানায় আটক রাখা হয়েছে। উক্ত এলাকায় ডাক চলাচল শুরু হয়েছে এবং টেলিফোন সংযােগ স্থাপন করা হয়েছে। জমি হস্তান্তর এবং বিবাহ রেজিষ্ট্রেশনের জন্য সাব-রেজিস্ট্রার দফতর নিয়মমত কাজ করছে। আবগারী ও স্থল-শুল্ক দফতরের কাজও শুরু হয়ে গেছে। অধিকাংশ স্কুল কলেজ খুলেছে। প্রাইমারী স্কুলগুলােতে নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে। প্রতিটি থানায় একটি করে ডিসপেনসারী স্থাপন করা হয়েছে এবং পুরােদমে কাজ শুরু হয়ে গেছে। স্বেচ্ছাসেবকদের সহযােগিতায় হেলথ অফিসারগণ কলেরা প্রতিরােধ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।

হানাদার বাহিনীর হাত থেকে ছিনিয়ে আনা এ সমস্ত অঞ্চলে এখন খাদ্যাভাব বিরাজ করছে আঞ্চলিক কাউন্সিলের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার টেষ্ট রিলিফের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশে অসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা চালু করার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ জনগণের মনােবল উন্নত রাখার জন্য জনসভার আয়ােজন করেছেন। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের আঞ্চলিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান জনাব মতিউর রহমান এম, এন, এ রংপুর জেলার পাটগ্রাম, ফুলবাড়ি, সােনহাট, হাতিবান্ধা থানার হেডকোয়ার্টারে আয়ােজিত জনসভায় ভাষণ দেন। নেতৃস্থানীয় এম, এন, এ এবং এম, পি, এ গণও বক্তৃতা করেন। বিপুল সংখ্যক শ্রোতা উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে জনসভায় যােগদান করে। নেতৃবৃন্দ স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে, সরকারী  কর্মচারী এবং মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে আলাপ-আলােচনা করেন। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন ফ্রন্টে মুক্তিযােদ্ধাদের মনােরঞ্জনের জন্য বাংলাদেশের পুরুষ ও মহিলা শিল্পীগণ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করছেন।

জয়বাংলা (১) # ১: ৩০ ॥ ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১

সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৪