অবিলম্বে মুক্তাঞ্চলে সুষ্ঠ প্রশাসন চাই
(বিশেষ প্রতিনিধি) বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল আজ শত্রুমুক্ত। এই মুক্তাঞ্চলের পরিধি ক্রমেই বৃদ্ধি পাইতেছে। মুক্তাঞ্চলের এই পরিধি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বও বৃদ্ধি পাইতেছে। অবিলম্বে নিম্নলিখিত বিষয়গুলির ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের সুস্পষ্ট নীতি ঘােষণা ও উহা কার্যকরী হওয়া বাঞ্ছনীয়।
ক) জমা জমির খাজনা ট্যাক্স ও হাট-বাজারের তােলা আদায়ের ব্যাপারে সুষ্ঠু প্রশাসন। সরকারের অননুমােদিত আদায় বন্ধ করা।
খ) প্রাথমিক স্কুল, হাইস্কুল কলেজ প্রভৃতি পরিচালনা এবং শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের নিয়মিত বেতন প্রদান। কোন কোন মুক্তাঞ্চলের প্রাথমিক শিক্ষকগণ ৮ মাস যাবৎ বেতন পান নাই বলিয়া জানা যায়।
গ) গ্রাম্য পুলিশবাহিনী পরিচালনা ও তাহাদের নিয়মিত বেতন দানের ব্যবস্থা করা।
ঘ) মুক্তাঞ্চলে কোন চিনিকল না থাকায় ইক্ষু চাষীরা অসুবিধার সম্মুখীন। এ ব্যাপারে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
ঙ) মুক্তাঞ্চলে রেশনিং ব্যবস্থা ও ঔষধপত্র সরবরাহের ব্যবস্থা করা।
চ) কঠোর হস্তে অপরাধমূলক কাজকর্ম দমনের ব্যবস্থা করা।
ছ) লবণ, কেরােসিন তৈল, বস্ত্র প্রভৃতি নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যাদি সরবরাহের ব্যবস্থা করা। উপরােক্ত বিষয়গুলি হইল মুক্তাঞ্চলে বর্তমান প্রশাসনের জন্য একেবারে নিম্নতম চাহিদা যাহা পূরণ করিলেই নহে। কিন্তু দায়িত্ব এখানেই শেষ হইয়া যায় না। মুক্তাঞ্চলের প্রশাসন ও জীবনধারণ যে অধিকৃত অঞ্চল অপেক্ষা অধিকতর সম্মানজনক ও উন্নতর উহাও প্রমাণ করিতে হইবে। ইহার দ্বারা যেমন স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি প্রতি ফলিত হইবে তেমনি উহা অধিকৃত অঞ্চলের মানুষকে আকৃষ্ট করিবে ও শক্রর বিরুদ্ধে সংগ্রামে তাহাদেরকে আরও উদ্বুদ্ধ করিয়া তুলিবে। পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন যে, উপরােক্ত লক্ষ্যে প্রয়ােজনীয় সকল ব্যবস্থাদি গ্রহণ ও কার্যকরী করা আশু কর্তব্য।
নতুন বাংলা ॥ ১: ১৫ ॥ ২৫ নভেম্বর ১৯৭১
সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৪