মুজিবকে চ্যালেঞ্জ করবে মুক্তিযােদ্ধারাই
১২ অক্টোবর, ১৯৭১
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং দিল্লিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেনেথ কিটিংকে আরাে বললেন, পাকিস্তান যদি কোনাে অজুহাতে ভারতের সঙ্গে ঝামেলা পাকাতে আসে, তাহলে ভারত নিজেকে রক্ষা করবেই। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, এমন ঘটনাবলি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। সিং আরাে উল্লেখ করেন, ‘দয়া করে আপনার সরকারকে জানিয়ে দিন, আমরা কোনাে প্রকার উত্তেজনা। বা ভয়ের বশবর্তী হয়ে কথা বলছি না। আমরা এই প্রশ্ন রাখছি- কেন ওয়াশিংটন এমনটা ভাবতে বসেছে যে, পাকিস্তান যদি কিছু শুরু করে তাহলে তা কেন ভারতযুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে ক্ষগ্রিস্ত করবে? আমরা দুদেশের মধ্যে যে কোনাে ধরনের ভুল বােঝাবুঝির অবসানের সম্ভব সব চেষ্টাই চালিয়ে যাব। এ বিষয়টি আমরা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন যুক্তরাষ্ট্র সফরকে সামনে রেখে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। মিসেস গান্ধী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভুল বােঝাবুঝির সম্পূর্ণ অবসান দেখতে আগ্রহী। কিন্তু তারপরও যদি কিছু অবশিষ্ট থাকে তাহলে তার বােঝা বহন করা তার জন্য হবে দুর্ভাগ্যজনক।’ কিটিং লিখেছেন- আমি তাকে বললাম, আমি কখনােই বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিনি। যদিও আমার কতিপয় জুনিয়র কর্মকর্তা কলকাতা ও দিল্লিতে অনানুষ্ঠানিকভাবে শ্রবণ করেছে তাদের কাহিনী। আমি এ সময় তার কাছে কমিউনিস্টপন্থি ‘পেট্রিয়ট’ পত্রিকায় প্রকাশিত অভিযােগের দিকে তার মনােযোেগ আকর্ষণ করি। অভিযােগ হচ্ছে, আমি মুক্তিবাহিনী ও আওয়ামী লীগের মধ্যে অভ্যন্ত রীণ কোন্দল ও বিভেদ সৃষ্টি করতে চেয়েছি। আমি বললাম, আমাদের তাে তেমন কিছু করার ক্ষমতা নেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করলাম, আমরা তেমন কিছুই করিনি। তবে আমি স্বীকার করলাম যে, আমরা এই মর্মে কিছু বিরােধাত্মক কথাবার্তা জানতে পেরেছি। শুনেছি, বাংলাদেশ নেতৃবৃন্দ ও মুক্তিবাহিনীর মধ্যে মতবিরােধ দেখা দিয়েছে।
কিন্তু এমন কিছুর অবনতি দেখা কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য নয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এটা জানা আছে যে, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে সংলাপের চেষ্টা চলছে। পেট্রিয়ট পত্রিকার দৃষ্টিভঙ্গি জানার কোনাে প্রয়ােজন মনে করে না ভারত সরকার। আমি তাকে বললাম, একটা সংলাপ অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা দৃশ্যত এখনাে বিরাজমান। কিন্তু উক্তরূপ মতবিরােধ থেকে ফায়দা লােটার কিছু নেই। যা হােক সিং বললেন, যুক্তরাষ্ট্র মুজিবকে বাইপাস করতে চাইছে। আমি তাকে বললাম, ওয়াশিংটনের নির্দেশনার ভিত্তিতে ইসলামাবাদের মার্কিন দূতাবাস সবেমাত্র প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছে পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠানের তাগিদ দিয়েছে। আমি স্পষ্টতই মুজিবের দিকে ইঙ্গিত করলাম। এরপরে আমি নির্দিষ্ট করে বললাম, ইয়াহিয়া যদি মুজিবের সঙ্গে সংলাপে বসেন তাহলে যুক্তরাষ্ট্র হবে উৎফুল্ল।
২০ অক্টোবর, ১৯৭১
ঢাকার কনসাল জেনারেল স্পিভাক স্টেট ডিপার্টমেন্টের কাছে প্রেরিত এক টেলিগ্রামে উল্লেখ করেন, গত তিন মাসে পূর্ব পাকিস্তানে মুক্তিযােদ্ধাদের তৎপরতা তীব্র হয়েছে। তারা আগের তুলনায় অনেক বেশি এলাকায় তাদের অভিযান বিস্তৃত করতে সক্ষম হয়েছে। তারা গ্রামাঞ্চলেই নিজেদের ব্যস্ত রেখেছে। শহরে তাদের উপস্থিতি প্রতীকী। ব্যতিক্রমটাও পদ্ধতিগত প্রতীয়মান হয়। যেমন চট্টগ্রামে অব্যাহতভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। মুক্তিবাহিনী রাস্তাঘাট, ব্রিজ, রেল বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। এক্ষেত্রে তারা সারাদেশেই সফল। কিছু জেলায় যেমন ঢাকা, কুমিল্লা, ফরিদপুর, নােয়াখালী, বাকেরগঞ্জে তারা তাদের খেয়ালখুশিমতাে ঘুরে বেড়াতে পারে এবং কিছু স্থানে দৃশ্যত তারা ইতােমধ্যেই সমান্তরাল প্রশাসন তৈরি করে নিয়েছে। সাক্ষ্য-প্রমাণ মিলছে যে, বিদ্রোহীরা আগের তুলনায় আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত। স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র, মর্টার, শক্তিশালী বিস্ফোরক তাদের করায়ত্ত এবং ক্রমবর্ধমান হারে মাইন দিয়ে জাহাজ ও ব্রিজ উড়িয়ে দেয়ার মতাে গেরিলা তৎপরতায় তারা সাফল্যের পরিচয় দিচ্ছে। মধ্য এবং দক্ষিণ অঞ্চলীয় জেলাগুলােতে মুক্তিবাহিনী বেপরােয়া মনােভাব প্রদর্শন করছেন।
তারা দক্ষতার সঙ্গে রাজাকার (ভলান্টারি হােমগার্ডস) ও পাকসেনাদের বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে। অনেক সময় এসব হামলায় হতাহতের সংখ্যাও হচ্ছে। বিপুল। উল্লিখিত এলাকা বাদে দেশের অন্যত্র মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা বেশিরভাগই ব্রিজ, কালভার্ট, রেললাইন ইত্যাদি ধ্বংস করার মধ্যেই সীমিত এবং এসব কাজও তারা পাকসেনাদের অগােচরে সম্পাদনই অধিক আগ্রহী বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। স্পিভাক আরাে লিখেছেন- গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মুক্তিযােদ্ধাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি ও তৎপরতা প্রদর্শনের নেপথ্যে রয়েছে ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রশিক্ষণ। তারা সবরকম সহযােগিতা পেয়ে পূর্ব পাকিস্তানে সহজেই অনুপ্রবেশ করতে পারে। ভারতীয়রা সীমান্ত এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিপুলসংখ্যক নিয়মিত সেনাসদস্যকে ব্যস্ত রেখেছে। এর উদ্দেশ্য হলাে মুক্তিবাহিনীর অপারেশনের বিরুদ্ধে যাতে পাকসেনারা অধিকমাত্রায় রাজাকার, পুলিশ ও অন্য আধা-সামরিক অথবা আধা-স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ওপর নির্ভরশীল থাকতে বাধ্য হয়। কারণ, এসব শক্তি নিয়মিত সৈন্যদের তুলনায় কম দক্ষ এবং তাদের ওপর তেমন আস্থাও রাখা যায় না। একাধিক রিপাের্ট আমরা পেয়েছি, যাতে দেখা যাচ্ছে স্বপক্ষ ত্যাগের ঘটনা ঘটছে। রাজাকাররা মুক্তিবাহিনীর কাছে কখনাে ব্যক্তিগতভাবে, আবার কখনাে গণহারে আত্মসমর্পণ করছে। এটা করতে গিয়ে তারা তাদের অস্ত্রও তুলে দিচ্ছে মুক্তিবাহিনীর হাতে।
একটি রিপাের্টে বলা হয়েছে, মুক্তিবাহিনীকে সহযােগিতা করার সন্দেহে পাকসেনারা একদল রাজাকারকে গুলি করে হত্যা করেছে। পূর্ব পাকিস্তান সরকারের কর্মকর্তারা ক্রমাগতভাবে এই ব্যাখ্যা দিয়ে চলেছেন যে ভারতীয়রা সীমান্তে গােলাবর্ষণের তীব্রতা। বৃদ্ধি করে চলেছে। এই সুযােগে তারা আসলে নতুনভাবে প্রশিক্ষিত মুক্তিবাহিনীকে ব্যাপক সংখ্যায় পূর্ব পাকিস্তানে অনুপ্রবেশ করতে দিচ্ছে। পূর্ব পাকিস্তানের সংবাদপত্রে নিয়মিতভাবে ভারত থেকে আসা অস্ত্র ও গােলাবারুদের উদ্ধার তৎপরতার খবর ছাপা হয়। সীমান্ত থেকে অনুপ্রবেশের পরে যাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে তাদের বলা হচ্ছে, ভারতীয় এজেন্ট’। আসলে এখন প্রকাশ্যেই এবং স্বীকৃতভাবেই ভারতীয় সমর্থন ও সাহায্য পেয়ে চলেছে মুক্তিবাহিনী। এটা সন্দেহাতীতভাবে এখন গুরুত্বপূর্ণ। ফ্যাক্টর যে, মুক্তিবাহিনীর শক্তি খাটো করে দেখার উপায় নেই। আমরা বিশ্বাস করি যে, দেশের বহু এলাকায় মুক্তিবাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। এবং তারা নিজেদের মধ্যে সংহতি এমন সুষ্ঠুভাবে গড়ে তুলেছে যে, এখন যদি ভারত তার প্রকাশ্য সমর্থন প্রত্যাহার বা হ্রাসও করে নেয় তাহলেও মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা। টিকে থাকবে। বর্তমানে ভারতীয় সমর্থন যেভাবে বজায় রয়েছে তাতে মুক্তিবাহিনীর গেরিলা অপারেশন চালানাের ক্ষমতা ও পরিধি যে আরাে বৃদ্ধি পাবে তাতে কোনাে সন্দেহ নেই। স্পিভাক এ পর্যায়ে মন্তব্য করেন যে, এ পর্যন্ত এবং সঙ্গত অদূরভবিষ্যতে মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জন্য ভয়ানক হুমকি হয়ে দাঁড়াবে ।
যদিও তাদের সংখ্যা ও তৎপরতায় আরাে বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। ভিয়েতনাম পরিস্থিতির সঙ্গে এক্ষেত্রে একটা ফারাক রয়েছে। ভিয়েতনামের মতাে অস্থায়ীভাবে নির্মিত কোনাে দুর্গে ঠাই নেয়ার সুযােগ নেই মুক্তিবাহিনীর। যেখানে তারা জনগণের কাছ থেকে প্রাপ্ত অস্ত্র ও রসদ জমা করে রাখতে পারবে। অথবা তাদের সামনে কোনাে সংরক্ষিত ট্রেইল বা চিহ্নরেখা নেই, যা ব্যবহার করে তারা কোনাে সমুদ্র বন্দর থেকে ভারি অস্ত্রশস্ত্রের বিরাট কোনাে চালান নিজেদের ঘাটিতে নিয়ে আসতে সক্ষম হবে। আরাে বহু মাস কেটে গেলেও মুক্তিবাহিনীর তুলনায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অস্ত্র ও প্রশিক্ষণে এগিয়ে থাকবে। তবে বর্তমানে মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা বিবেচনায় এটা বলা যায় যে, তারা সেনাবাহিনীর জন্য মারাত্মক কাটা। পাকসেনাদের হতাহতের সংখ্যা সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনাে নির্ভরযােগ্য তথ্য নেই। তবে এমন ইঙ্গিত রয়েছে যে, নিহতের সংখ্যা দিনে গড়ে ১০ থেকে ১২ জন তাে হবেই। একইসংখ্যক পাকসেনা কোনাে না কোনােভাবে জখম হচ্ছে। যদিও পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানরত পাকসেনারা এখনাে পঙ্গু হয়ে পড়েনি, তবে হতাহতের এই সংখ্যা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ভবিষ্যতে তা তাদের গুরুতর নৈতিক সমস্যার কারণ হতে পারে। এমনিতেই তারা তাদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে এবং বসবাস করছে বন্ধুহীন এক প্রতিকূল পরিবেশে। ঢাকার সামরিক আইন কর্তৃপক্ষ ইতােমধ্যেই উদ্বেগ অনুভব করছে। কারণ, তাদেরকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় সংরক্ষণে সতর্কতা অবলম্বন করতে দেখা যাচ্ছে। বিমানবন্দর, বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রভৃতি স্থানে ইটের দেয়াল দিয়ে রাইফেল অথবা মেশিনগান তাক করে প্রহরীরা থাকছে সদাসতর্ক।
প্রধান প্রধান সড়কেও বালুর বস্তা দিয়ে গড়ে তুলেছে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যুহ। গুলশান আবাসিক এলাকার উত্তরাংশে বেশ কিছু বাড়ির ছাদে সারাক্ষণ মােতায়েন থাকছে সশস্ত্র প্রহরী। পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতির সূচক ধীর হলেও নিচের দিকে নামছে। পূর্ব পাকিস্তান সরকারের ‘বেসামরিকীকরণ” এবং সাধারণ ক্ষমা কার্যত বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণে একেবারে অসার প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের মনে হচ্ছে, প্রায় যে কোনাে মূল্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতি শহুরে মধ্যবিত্তদের কিছুটা সমর্থন লক্ষ্য করা গেলেও তরুণ বাঙালি প্রজন্ম বিশেষ করে যারা গ্রামাঞ্চলে বাস করে তারা ইসলামাবাদের প্রতি বিমুখ। পাকসেনাদের বিরুদ্ধে তাদের তিক্ততা প্রকট। এই ধরনের অবস্থার মধ্যে প্রধানত পাকসেনা কিংবা রাজাকারদের কর্তৃক নানা নির্যাতন ও নিষ্ঠুরতার কাহিনী পরিস্থিতিকে আরাে নাজুক করছে। এমনকি অনেক রক্ষণশীল বাঙালি ভাবতে শুরু করেছেন, জোরপূর্বক পাকসেনাদের বিতাড়ন করলেই সবার জন্য মঙ্গল। বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী হিসেবে মুক্তিবাহিনীর আত্মপ্রকাশ সম্পর্কে আমরা সম্প্রতি কিছু রিপাের্ট পেয়েছি কিন্তু সেক্ষেত্রে তাদের মধ্যে সমস্যা হচ্ছে সমন্বয় ও যোগাযােগের। দৃশ্যত মুক্তিবাহিনীর বিভিন্ন গ্রুপ বিভিন্ন ধরনের লাইন ও নীতি অনুসরণ করছেন। সাম্প্রতিক ক্যাস (কন্ট্রোলড আমেরিকান সাের্স) রিপাের্টে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে, মুক্তিবাহিনী ভেতরে ভেতরে সামগ্রিক স্বাধীনতা আন্দোলন নকশালীদের মতাে চরমপন্থিদের হাতে চলে যায় কি না তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। আবার অন্যান্য রিপাের্ট থেকে এ খবরও মিলছে যে, কলকাতায় বাংলাদেশ রাজনীতিকদের এক গ্রুপের সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর মতবিরােধ দেখা দিয়েছে। আমরা অবশ্য এখনাে বিশ্বাস করি যে, শেখ মুজিবকে মুক্তি দেয়া হবে। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় তিনি স্বাধীনভাবে অংশ নিতে পারবেন। আর এটা বাস্তব হলে মুজিব মুক্তিবাহিনীর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাও করতে পারবেন।
মুজিব তার নীতির বাস্তবায়নের স্বার্থেও মুজিববাহিনীকে একটি নিয়মতান্ত্রিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে আগ্রহী থাকবেন। কিন্তু এতে যদি বেশি বিলম্ব ঘটে তাহলে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। আমাদের বিবেচনায় মুক্তিবাহিনীর ভেতর থেকেও নতুন নেতৃত্বের উত্থান ঘটতে পারে। যুদ্ধে অংশ নেয়ার মেজাজ থাকবে তাদের আর তার বশবর্তী হয়ে এমন একদিন আসতে পারে, যেদিন তারা পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন কিংবা বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের জন্য মুজিব এবং পুরনাে আওয়ামী লীগারদের নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করে বসতে পারে। তবে সম্ভাব্য সেই নতুন নেতৃত্বের ঝোঁক বাম কিংবা ডানঘেঁষা হবে তা এই মুহূর্তে বলা কঠিন।
মার্কিন কনসাল জেনারেল হার্বাট ডি. স্পিভাক ১৯৭১ সালের জুন থেকে সেপ্টেম্বর ১৯৭২ পর্যন্ত ঢাকায় দায়িত্ব পালন করেন।
সূত্র: ১৯৭১ আমেরিকার গোপন দলিল – মিজানুর রহমান খান – সময় প্রকাশন