বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকায় এবার বৌদ্ধ-নির্যাতন
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজধানী গুলােতে বাংলাদেশের বৌদ্ধগণ পাকিস্তানী প্রতিনিধি দলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে জঙ্গী সরকারের পক্ষে সাফাই প্রচার করতে রাজী না হওয়ায় নতুন করে বৌদ্ধদের উপর নির্যাতন শুরু হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বৌদ্ধ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু ধর্মবীর্য নয়াদিল্লীতে একথা জানান। তিনি বলেন, বৌদ্ধ ফেলােশিপের পাকিস্তান শাখার সাধারণ সম্পাদক শ্রী ডি, পি, বড়ুয়াকে পাক সেনারা সম্প্রতি হত্যা করেছে। শ্রী বড়ুয়ার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে। শ্রী বড়ুয়া ঢাকাস্থ ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক অব পাকিস্তানের জনসংযােগ অফিসার ছিলেন। শ্রী ধর্মবীর্য আরাে জানান যে, চট্টগ্রামের সাতপাড়িয়া বৌদ্ধ মন্দিরটি অপবিত্র করা হয়েছে। পাকিস্তান বৌদ্ধপ্রধান একশত বছরের বৃদ্ধ সংঘনায়ক অভতিষ্য মহাথেরােকে গত ১৭ই ও ১৮ই সেপ্টেম্বর পাক সৈন্যরা প্রহার করেছে। সংঘের অপরাপর ভ্রমকদের উপরও অমানুষিক দৈহিক নির্যাতন করা হয় ।
ভগবান বুদ্ধের মূর্তি, মূল্যবান পুঁথিপত্র ও অপরাপর সামগ্রীও পাক সেনারা নিয়ে গেছে। শ্রী ধর্মবীর্য থাইল্যান্ড সিংহল ও জাপানের বৌদ্ধ প্রধানদেরকে তারবার্তায় অবিলম্বে এক সম্মেলন আহ্বান করার অনুরােধ জানিয়েছেন। সেই সম্মেলনে পাক সেনাবাহিনীর নির্যাতন সম্পর্কে আলাপ আলােচনা হবে। বেঙ্গল বুদ্ধিষ্ট এসােসিয়েশনের উদ্যোগে কলকাতাস্থ বুদ্ধিষ্ট টেম্পল স্ট্রীটে প্রবারণা পূর্নিমা উৎসব উদযাপিত হয়। অধিকৃত বাংলাদেশে পাক জঙ্গীশাহীর বর্বর অত্যাচারের জন্য বৌদ্ধ নরনারীগণ দারুণ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বৌদ্ধরা হিংসায় বিশ্বাস করেন না। তথাপি পাকিস্তানী ফৌজ যেভাবে একজন বৌদ্ধ কর্মীকে হত্যা করেছে তার নিন্দা করার মত ভাষা তাদের জানা নেই এবং এ ধরণের হত্যাকান্ড সম্পূর্ণ মানবতা বিরােধী কাজ বলেই তারা মনে করেন । এ ছাড়া বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনও হাজার হাজার বৌদ্ধ রয়েছেন। সেখানে তাদের নিরাপত্তার কোন ব্যবস্থা না থাকায় উৎসবে সমবেত বৌদ্ধগণ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা জানান, এরই মধ্যে বহু বৌদ্ধ পাকিস্তানী ফৌজ ও আমলাশাহীর দৌরাত্মে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
জয়বাংলা (১) ॥ ১: ২৩ ॥ ১৫ অক্টোবর ১৯৭১
বিচারের নামে অবিচার
১২ অক্টোবর, গত ৪ঠা অক্টোবরে বাংলাদেশে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে অপারেশন ওমেগার দু’জন সদস্য প্রবেশ করলে জল্লাদ ইয়াহিয়া সরকার এঁদের বন্দী করে যশাের জেলে আটকে রাখে। মানবতার সেবায় উৎসর্গিত এই সদস্য দুজনকে জঙ্গীশাহী ২ বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত করেছে বলে ঢাকাস্থ বৃটিশ হাইকমিশন থেকে জানা গেছে। সদস্যদের একজন আমেরিকান এবং অন্যজন বৃটিশ নাগরিক। এদের নাম যথাক্রমে মি: গর্ডন স্ন্যাভেন ও মিসেস এ্যালেন কনেট।
বিপ্লবী বাংলাদেশ ॥ ১: ৯ ॥ ১৭ অক্টোবর ১৯৭১
সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৪