জুরিষ্ট কমিশন কর্তৃক বাংলাদেশে গণহত্যার তদন্তের উদ্যোগ
আন্তর্জাতিক জুরিষ্ট কমিশনের পক্ষ হইতে একটি অনুসন্ধান কমিশন আগামী ডিসেম্বর মাসে ভারত সফরে আসিবেন। বাংলাদেশে পাকিস্তান কর্তৃক মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হইবার ফলে উদ্ধৃত পরিস্থিতিতে লক্ষ লক্ষ শরণার্থী ভারতে আগমনের ব্যাপারে বিস্তারিত রিপাের্ট দান করিবার জন্য তাঁহারা। ভারতে আসিবেন । তাহারা পাকিস্তানও সফর করিতে পারেন। উক্ত কমিশন বাংলাদেশে কি পরিস্থিতি এবং কি হারে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হইয়াছে উহা এবং বাংলাদেশের অধিকৃত এলাকায় আইন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করিয়া জানুয়ারী মাসের দিকে তাহাদের রিপাের্ট পেশ করিবেন। তিন সদস্য বিশিষ্ট উক্ত কমিশন জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের সদস্য অস্ট্রেলিয়ার অধ্যাপক আরমাকোয়া ঘানার প্রধান বিচারপতি অধ্যাপক বেনসি এনচিল এবং ইউরােপীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক অপশহলকে লইয়া গঠিত হইতে পারে বলিয়া ধারণা করা হইতেছে । বাংলাদেশে জঙ্গীশাহীর বর্বর গণহত্যার দায় দায়িত্ব নির্ধারণের ইহাই হইবে প্রথম আন্তর্জাতিক প্রয়াস। আন্তর্জাতিক জুরিষ্ট কমিশন এ ব্যাপারে তথ্য ও সাক্ষ্য প্রমাণ সরবরাহের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজুদ্দিন আহমদের নিকট একটি পত্র প্রেরণ করিয়াছেন। বাংলাদেশের পক্ষে বিচারপতি জনাব আবু সাইদ চৌধুরী এই কমিশনের সামনে হাজির হইবেন বলিয়া আশা করা যায় । কমিশন ইহার সামনে স্বীয় বক্তব্য পেশের জন্য পাকিস্তান সরকারের প্রতিও আহবান জানাইয়াছেন। টাইমস অব ইন্ডিয়া
বাংলার বাণী # ৬ সংখ্যা ॥ ৫ অক্টোবর ১৯৭১
জঙ্গীশাহীর বন্দীশালা হইতে আরও ৪ জনের পরিত্রাণ
কূটনৈতিক সংবাদদাতা । ইসলামাবাদের জঙ্গী অসুর শাহীর দিল্লীস্থ হাই কমিশন নামধারী বন্দীশালা হইতে আরও ৪ জন বাঙ্গালী কর্মচারী সুকৌশলে মুক্ত হইয়া স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকারের প্রতি তাঁহাদের আনুগত্য প্রকাশ করিয়াছেন। এই চারজন কর্মচারী হইতেছেন মেসার্স মফিজুর রহমান (স্টেনােগ্রাফার) এ, কে, আজাদ (ইউ, ডি সহকারী), মােহাম্মদ জয়নাল আবেদীন (এল, ডি, সহকারী) এবং গােলাম মােস্তফা (ডিস। পেনসার) তাহাদের সহিত তাঁহাদের পরিবারের সদস্যবর্গ ও জঙ্গীশাহীর হাই কমিশন নামধারী কারাগার হইতে মুক্তিলাভ করিয়াছেন। উল্লেখযােগ্য যে, দিল্লীস্থ ইসলামাবাদ হাই কমিশনের উচ্চপদস্থ বাঙ্গালী কূটনীতিবিদ এবং অন্যান্য কয়েকজন বাঙ্গালী কর্মচারী বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের পর হইতে অসুর শাহীর দিল্লীস্থ হাইকমিশনটিকে প্রকৃত পক্ষে বাঙ্গালী কর্মচারীদের জন্য একটি বন্দীশালায় পরিণত করা হয়। বাঙ্গালী কর্মচারীগণকে জরুরী প্রয়ােজনীয় কাজেও মিশনের বাহিরে যাইতে দেওয়া হয় নাই। কিন্তু কামান বন্দুক রাইফেল মেসনিগানের গুলিতে লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা গেলেও কাহাকে ও তাঁহার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যে বেশীদিন আটকাইয়া রাখা যায় না, জঙ্গীচক্র তাহা বেমালুম ভুলিয়া গিয়াছে। বাঙ্গালী কর্মচারীগণ ইসলামাবাদ জঙ্গীচক্রের মুখে চুনকালী ও থুথু দিয়া মুক্ত হইয়া আসিয়া এই কথাই প্রমাণ করিয়াছেন।
প্রকাশ, জঙ্গীশাহী তাহাদিগকে দিল্লীস্থ হাই কমিশন নামধারী বন্দীশালায় আটকাইয়া রাখিতেও ভরসা করিতে না পারিয়া সম্প্রতি তাহাদিগকে একটি বাসযােগে ইসলামাবাদ সাম্রাজ্যে লইয়া যাইতেছিল। তাহাদের সঙ্গে ছিল জঙ্গীশাহীর কড়া গােয়েন্দা প্রহরা। কিন্তু উক্ত বাসটি তাহাদিগকে লইয়া রাতে দিল্লী হরিয়ানা সীমান্তে উপস্থিত হইলে বাঙ্গালী কর্মচারীগণ সুকৌশলে এবং এক নাটকীয় কায়দায় ছেলে মেয়ে ও স্ত্রীসহ বাস হইতে নামিয়া স্থানীয় জনসাধারনের সাহায্যে মুক্ত হইয়া আসেন। পরে তাহারা দিল্লীতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁহাদের উপর জঙ্গীশাহীর নয়া দিল্লীস্থ হাই কমিশনে যে নির্যাতন চালানাে হইয়াছিল তাহার মর্মান্তিক কাহিনী বর্ণনা করেন।
বাংলার বাণী ॥ ৬ সংখ্যা ॥ ৫ অক্টোবর ১৯৭১
সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৪