বানরের পিঠা ভাগ
(স্টাফ রিপাের্টার) সিলেট ১৪ই সেপ্টেম্বর—চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে দুজন রাজাকার জোরপূর্বক অভিভাবকসহ দুজন মুসলিম মেয়েকে উক্ত এলাকার ব্রিগেডিয়ারের নিকট ধরে নিয়ে যায়। উদ্দেশ্য রাজাকার দু’জন ঐ মেয়ে দু’টিকে বিয়ে করবে। কিন্তু মেয়ে দুটির অভিভাবকরা কিছুতেই এমন কাজ করতে অস্বীকার করে। এমতাবস্থায় রাজাকারদ্বয় ব্রিগেডিয়ার প্রভুর কাছে তাদের এই সখের কথা জানায়। ব্রিগেডিয়ার হুকুম দিল “উসকো পাকাড়কে লাও। হাম লােক বিলকুল ম্যানেজ কর ল্যায়েঙ্গা।” নির্বোধ রাজাকারদ্বয় ‘জো হুকুম’ বলে প্রভুর আজ্ঞা পালন করল। এবার ব্রিগেডিয়ার সাহেব রাজাকারদ্বয়ের পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল, বহুৎ আচ্ছা, পরে এসাে। রাজাকারদ্বয় আর কী করে। ম্লান মুখে ফিরে এলাে গ্রামে কিন্তু সেই মেয়ে দুটি? তারা আজও বন্দী হয়ে রয়েছে সিলেট শহরের সেই ব্রিগেডিয়ারের বাড়িটাতে।
সাপ্তাহিক বাংলা ॥ ১:১ ॥ ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
জল্লাদদের বধ্যভূমি লঙ্কাটিলা
সিলেট, ১৫ই সেপ্টেম্বর বিয়ানী বাজার থানার সুখতলা গ্রামের বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ কর্মী ইসমাইল আলীসহ ৫ ব্যক্তিকে সম্প্রতি পাক সেনারা লঙ্কাটিলায় ধরে নিয়ে যায়। সেখানে প্রথমে তাদেরকে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে। পরে সবাইকে খান সেনারা নির্মমভাবে গুলী করে হত্যা করে। ইতিপূর্বে খান সেনারা এদের বাড়ী-ঘরগুলিকেও জ্বালিয়ে দেয়। এই ঘটনার আড়াই ঘণ্টার মধ্যে রাজাকার বাহিনীর লােকেরা অপর ৪ ব্যক্তিকে উক্ত লঙ্কাটিলায় নিয়ে যায় এবং সামরিক বাহিনীর হাতে সােপর্দ করে। এই চারজনকেও খানসেনারা গুলী করে হত্যা কিন্তু এখানেই শেষ নয়। এই ঘটনার পরে কিছুক্ষণের মধ্যেই নারী ও শিশুসহ ১৪ ব্যক্তিকে ঐ টিলার উপরে গুলী করে বর্বর পশুরা হত্যা করে। শুধু একটিমাত্র দুগ্ধ পােষ্য শিশু সৌভাগ্য বশত: রক্ষা পায়। খানসেনাদের স্থানীয় কুখ্যাত দালাল কালা মিয়ার বাড়িতে রয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখযােগ্য যে, লঙ্কাটিলায় জল্লাদরা যে সব বাঙালীকে হত্যা করেছে তাদের মৃতদেহগুলি পাশেই একটা নর্দমার মধ্যে ঠেলে ফেলে দেয়।
টিলার পার্শ্ববর্তী সেই নালাটির মধ্যে অসংখ্য নারী-পুরুষের মৃতদেহ আজও গলিত-অর্ধগলিত। মুক্তি যােদ্ধারা দালালদের গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে। সম্প্রতি বড়লেখা থানায় জনৈক মুক্তিযােদ্ধাকে খানসেনাদের স্থানীয় দোসররা ধরে নিয়ে যায়। পরে উক্ত মুক্তি সেনাকে হানাদারদের হাতে সােপর্দ করে। মুক্তি যােদ্ধারা পরে এইসব দেশেদ্রোহী দালালদের তিনখানা গ্রাম সম্পূর্ণ জ্বালিয়ে দিয়েছে। ফলে এখানে খান সেনাদের সঙ্গে এক সংঘর্ষে ৪ জন খান সেনা নিহত এবং ১৫ জন মুক্তিবাহিনীর হাতে বন্দী হয়। মুক্তি বাহিনীর বীর সেনারা ঐদিন সম্পূর্ণ বড় লেখা থানা দখল করে নেয়। এখনাে পর্যন্ত এই অঞ্চল মুক্তিবাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধীন রয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসন চালু করার চেষ্টা চলছে।
সাপ্তাহিক বাংলা ॥ ১:১ ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৪