You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.19 | আনন্দে বেদনার সুর - জিবনগর থেকে ঢাকায় একই প্রশ্ন -বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য ভারত সক্রিয়-নবাবগঞ্জে জনসভা - সংগ্রামের নোটবুক

আনন্দে বেদনার সুর (নিজস্ব বার্তা পরিবেশক)

বাংলাদেশের রাহুমুক্তিতে প্রতিটি দেশবাসী আনন্দে উদ্বেল হইয়া উঠিলেও এই আনন্দের মধ্যেই বাজিতেছে বেদনার সুর। বাঙলাদেশের জনগণের প্রিয় নেতা গণপ্রজাতন্ত্রী বাঙলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান শেখ মুজিবর রহমান আজ আমাদের মধ্যে নাই। তিনি কসাই ইয়াহিয়ার নির্জন কারাগারে বন্দী। তিনি কোথায় আছেন, কেমন আছেন, কেহ জানে না। শেখ সাহেবের অনুপস্থিতি সকল আনন্দ উৎসবকে স্নান করিয়া দিতেছে।

মুক্তিযুদ্ধ ॥ ১ : ২৪ | ১৯ ডিসেম্বর ১৯৭১

মুজিবনগর থেকে ঢাকায় একই প্রশ্ন ঃ বঙ্গবন্ধু কবে ফিরছেন – জয়বাংলা প্রতিনিধি

এখন মুজিবনগর থেকে ঢাকাসর্বত্র একই প্রশ্ন, একই বিষাদমাখা জিজ্ঞাসাবঙ্গবন্ধু কবে ঢাকা ফিরবেন? পাকিস্তানী জঙ্গী জান্টার নতুন প্রেসিডেন্ট ভূট্টো বঙ্গবন্ধুকে জেল থেকে মুক্ত করে অজ্ঞাতস্থানে গৃহবন্দী করেছেন এবং বাংলার মীরজাফর নুরুল আমিনকে ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদে নিয়ােগ করেছেন। এতে পর্যবেক্ষকমহল সন্দেহ করছেন। বাংলাদেশ প্রশ্নে পিকিংয়ের মদত নিয়ে ভূট্টো-চক্র নতুন চক্রান্তে অবতীর্ণ হতে পারে। কিন্তু মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর হাতে এখন প্রায় লক্ষের কাছাকাছি হানাদার সৈন্য এবং নিয়াজীফরমান আলী সহ বহু হানাদার অফিসার বন্দী। সুতরাং এই বন্দীদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য করাচীলাহাের-পেশােয়ারে যে বিক্ষোভ শুরু হবে, তার পরিণতিতে ভূট্টো বঙ্গবন্ধুকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হবেন, এমন একটি আশা এখন সকলের মনেই অঙ্কুরিত হয়েছে। পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দীদের লক্ষ লক্ষ পরিবার পরিজনের সম্মিলিত দাবীর মুখে ভূট্টোর ভণ্ডামী বেশীদিন টিকবে না এবং বঙ্গবন্ধু শীঘ্রই ঢাকা ফিরবেন, এই দৃঢ় প্রত্যয় এখন সকলের বুকে। বঙ্গবন্ধুকে ফিরিয়ে দিতে গড়িমসি করলে পাকিস্তানকে আরেকটি বড় আঘাতের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে এবং ভূট্টোকেও ইয়াহিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করতে হবে।

জয়বাংলা (১)  ১: ৩৪ ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭১

বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য ভারত সক্রিয়

ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী বলেছেন যে, ভারত তার দূতাবাসগুলির মারফৎ বিশ্বের সমস্ত সরকারকেই বাংলাদেশ নেতা, বর্তমানে পশ্চিম পাকিস্তানে কারারুদ্ধ, শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি আদায়ে সাহায্য করার আবেদন জানিয়েছে। সম্প্রতি সাডে টাইমসের মিঃ নিকোলাস ক্যারলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন আমরা যথেষ্ট চাপ দিতে পারি, আমি এরূপ মনে করি না। তবে আমরা আন্তরিকভাবে আশা করি তারা (অন্যান্য রাষ্ট্র) পাকিস্তানের উপর (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি আদায়ের জন্য) চাপ সৃষ্টি করবেন।

জয়বাংলা (১) # ১: ৩৪ | ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭১

নবাবগঞ্জে জনসভা

গত ১৮ই ডিসেম্বর স্বাধীনতা উৎসব উপলক্ষে এক বিরাট জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির জন্য সংগ্রাম অব্যাহত রাখার সঙ্কল্প গ্রহণ করা হয়। সভার প্রত্যেক বক্তা যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলার অর্থনৈতিক পুনর্গঠন করার জন্য জনগণকে নিঃস্বার্থভাবে এগিয়ে আসার আহবান জানান। সভায় সভাপতিত্ব করেন নবাবগঞ্জ থানা বেসামরিক সংগ্রাম পরিষদের প্রধান সদস্য জনাব আব্দুল আজিজ মুন্সি। বিভিন্ন বক্তাদের মধ্যে ছিলেন বেসামরিক সংগ্রাম পরিষদের সদস্য জনাব আব্দুল হামিদ খান মজলিশ, জনাব আব্দুল মান্নান, জনাব আজিজ মোড়ল, জনাব জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, আব্দুল বাতেন, শহীদুল্লাহ খান এবং মিজানুর রহমান। চুড়াইন : গতকাল চুড়াইন তারিনীবামা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এক বিরাট জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার প্রারম্ভে জাতির জনক শেখ মুজিব, ইন্দিরা-মুজিব জিন্দাবাদ, ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী অমর। হােক, জাতির পিতার মুক্তি চাই, পাকিস্তানেকে ধ্বংস করবাে – শেখ মুজিবকে মুক্ত করবাে বিভিন্ন শ্লোগানে চুড়াইনের আকাশ বাতাস মুখরিত হয়ে উঠে। সভায় সভাপতিত্ব করেন নবাবগঞ্জ বেসামরিক থানা পরিষদের সদস্য জনাব মহিউদ্দিন খান। সভায় বক্তৃতা করেন মােঃ ইয়াকুব, মােহঃ ইস্রাফিল, রহমান, আজিজ মােড়ল, আঃ মান্নান, আজিজুর রহমান (ফকু), বদিউজ্জামান, মিজানুর রহমান, কায়কোবাদ, আঃ বাতেন, আঃ ছালাম, আঃ রব প্রমূখ।

বিভিন্ন বক্তাগণ তাদের বক্তৃতার মাধ্যমে জাতির জনক শেখ মুজিবকে স্বৈরাচারী জালিমশাহীর কারাগার থেকে মুক্ত করে আনার বজ্রশপথ গ্রহণ। করেন। বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, গণতন্ত্র, ধর্মীয় নিরপেক্ষতা এবং সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি এই তিনটি মৌল আদর্শের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র প্রণীত হবে। একটি শােষণহীন সমাজ ব্যবস্থাই বাংলার জনগণের কাম্য। যুদ্ধোত্তরকালে দেশের ভেঙ্গে পড়া অর্থনীতিকে পূনরুজ্জীবিত করার জন্য সরকারকে সক্রিয়ভাবে সহযােগিতা করতে জনগণের প্রতি। আহ্বান জানানাে হয়। | আগুলা । গত ১৯শে ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুর মুক্তির শপথ গ্রহণের জন্য এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জনাব আঃ হামিদ খান মজলিস এবং বক্তৃতা করেন জনাব আঃ গফুর, জনাব মােহাম্মদ আলী, জনাব জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং সুবেদার রাহাত আলী প্রমুখ।

| বাংলাদেশ (8) ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭১।

সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৩