বঙ্গবন্ধুর বিচার স্থগিত
কিছুদিন আগে পাকিস্তান সরকার বাংলার মুকুটহীন সম্রাট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাণদণ্ড দান করেছেন। এই খবর ভারতের প্রভাবশালী সংবাদপত্র ষ্টেটসম্যান সহ অন্যান্য কাগজে প্রকাশিত হয়েছে। জনৈক ফরাসী সাংবাদিকের সঙ্গে সাক্ষাক্তারের সময় তার এক প্রশ্নের জবাবে পাকিস্তানের জঙ্গি লাট দম্ভভরে উচ্চারণ করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের পক্ষে যেমন সমস্ত কয়েদীদের সম্পর্কে জানা সম্ভব নয় তেমনি জঙ্গী লাটের পক্ষেও বঙ্গবন্ধুর সম্পর্কে কিছু খবর রাখা অস্বাভাবিক। তাই তাঁরা। কাগজে কলমে বাঙলার প্রিয় নেতার মৃত্যু দণ্ড ঘােষণা করেছেন। ইয়াহিয়া খান প্রথম নন আগে তার প্রভু আয়ুব খানও কাগজে কলমে মৃত্যু দণ্ড লিখে রেখে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করেছিলেন। বাঙলার জনগণ সেই মামলার নতিপত্র ডাষ্টবিনে ছুড়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে মুক্ত করে আনেন। এবারেও বাঙলার জনগণ বুলেট-বেয়নেটের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করবে। বঙ্গবন্ধুকে ছিনিয়ে আনবে। বাঙলাদেশের দশ লক্ষ মানুষের যারা হন্তা, নব্বই লক্ষ লােকের দেশ | ত্যাগের যারা কারণ এবং বাকী সাড়ে ছয় কোটি মানুষের জীবন মরণ নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলছে : প্রকাশ্য গণ আদালতে তােজো মুসােলিনির মত তাদের বিচার করবে, ফাসিকাষ্ঠে লটকাবে, থুথু ছুড়ে দেবে—সেদিন সুদূর নয়। জঙ্গি ইয়াহিয়া যে প্রবল চাপের মুখে নরম হয়ে পড়েছেন সামরিক আদালতে বঙ্গবন্ধুর গােপন বিচার নভেম্বর পর্যন্ত স্থগিত রাখাই তার প্রমাণ।
দাবানল ১: ৪ ৩১ অক্টোবর ১৯৭১
বঙ্গবন্ধুকে কি হত্যা করা হয়েছে? বার্তা সম্পাদক আবদুল মালেক প্রদত্ত
পশ্চিম পাকিস্তানের জঙ্গী শাহীর হাতে বন্দী বাংলার মুকুটবিহীন সম্রাট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কি জীবিত না মৃত? বিশ্বের প্রতিটি বিবেকবান মানুষের নিকট আজ এই প্রশ্ন? আমাদের আশঙ্কা হয়তাে বা জঙ্গী-শাহী বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। কারণ জঙ্গী ইয়াহিয়ার কতা বার্তা ও কার্যকলাপ। বিশ্লেষণ করলে আমরা এটা বুঝতে পারি বর্বর ইয়াহিয়া ইরানের এক সংবাদপত্রের প্রতিনিধির সহিত সাক্ষাঙ্কারে সদম্ভে ঘােষণা করেছিল যে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন (ইয়াহিয়ার মনমত) যখন বসবে। তখন শেখ সাহেব বেঁচে থাকবেন কিনা তা তিনি বলতে পারেন না। বঙ্গবন্ধু বেঁচে আছেন এমন কোন প্রমান নেই। গত পাঁচ মাস ধরে জঙ্গী শাহীর হাতে বাদী থাকা অবস্থায় তার সহিত কোন সাংবাদিককে দেখা করতে দেয়া হয়নি। এছাড়া বৃটিশ পার্লামেন্টারী প্রতিনিধি দেশের নেতা আর্থার বটমলী পাক ভারত সফরের সময় বঙ্গবন্ধুর সহিত সাক্ষাতের ব্যবস্থা করার জন্য ইয়াহিয়ার নিকট অনুরােধ করেছিলেন। কিন্তু জঙ্গী ইয়াহিয়া সাক্ষাতের সুযােগ না দিয়ে। বলেছিল যে অপরাধীর সহিত কোন সাক্ষাক্তার বা আলােচনা হতে পারে না।
বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ সাহেবের সহিত সাক্ষাক্কার করার জন্য জঙ্গী পাক সরকারের নিকট আবেদন করে … হয়েছেন। এরপর শেখ সাহেবের বিচার প্রহসন শুরু হওয়ার মাত্র কদিন আগেও লন্ডনের এক সংবাদ পত্রের প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাত করার সময় বর্বর ইয়াহিয়াকে যখন প্রশ্ন করা হয়েছিল যে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসা পর্যন্ত শেখ সাহেব জীবিত থাকবেন কিনা তার নিশ্চয়তা আপনি দিতে পারেন না, তবে কি বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসি দেওয়া হবে? এর জবাবে ইয়াহিয়া বলেছিল শেখ মুজিবের স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুও হতে পারে। এ কথার অর্থ কি? ইয়াহিয়া বঙ্গবন্ধুর বিচারের প্রহসনের কথা ঘােষণা করে বিশ্ব জনমত জানতে চেয়েছে যে কি প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। বিচার শুরু হবে একথা শুনে বিশ্বের বিভিন্ন মহল একে বিচার প্রহসন না করার জন্য আহ্বান জানানাে হয়েছে। এই বিচার প্রহসন শুরু হওয়ার পর এই চাপ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কোন কোন মহল থেকে হুশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে। যদি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়ে থাকে তবে একে … (অস্পষ্ট)
সােনার বাংলা (মুক্তি) ॥ ১: ৭ অক্টোবর ১৯৭১।
সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৩