ইয়াহিয়ার ঔদ্ধত্য জনগণ চাইলে শেখ মুজিবকে ক্ষমা করতে পারি
প্যারিস, ১৮ই অক্টোবর—পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান লেদ সংবাদপত্রের প্রতিনিধির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, জনগণ চাইলে আমি শেখ মুজিবর রহমানকে ক্ষমা করতে পারি। বর্তমানে পাকিস্তানের জঙ্গী শাহীর আদালতে গােপনে শেখ মুজিবরের যে বিচার চলছে সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে উক্ত প্রতিনিধি ইয়াহিয়া খাকে প্রশ্ন করেন, সামরিক আদালত শেখ মুজিবকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করলে তিনি তার ক্ষমা প্রদর্শনের অধিকার প্রয়ােগ করবেন কিনা। উত্তরে পাক প্রেসিডেন্ট বলেন, এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেবার আগে আমাকে জনমত জানতে হবে। জনগণ যদি ক্ষমা প্রদর্শন চায় তাহলে আমি তাঁকে ক্ষমা করবাে। করাচীতে অনুষ্ঠিত এই সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক জিরাদ ভিরাতেলের আর এক প্রশ্নের উত্তরে প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি বাংলাদেশের নেতার সঙ্গে কোনরকম আলােচনা করব না। যতক্ষণ না বিচারকারী সামরিক আদালত শেখ মুজিবকে নির্দোষ বলে রায় দিচ্ছে, ততক্ষণ একজন বিদ্রোহীর সঙ্গে আমি কোন কথা বলতে অক্ষম। এই সাক্ষাৎকারের বিবরণ আজ লেমদে প্রকাশিত হয়েছে। এই সাক্ষাৎকারে ইয়াহিয়া বলেছেন, ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সকল বিরােধের মীমাংসার পথ—যুদ্ধ নয়, পারস্পরিক আলােচনা। যুদ্ধের ফলে দু-দেশের মানুষের দুর্দশার বােঝাই বাড়বে, এর দ্বারা শরণার্থী সমস্যার কোন সমাধান হবে না।
বাংলাদেশ (১) [১: ১৮ !
২৫ অক্টোবর ১৯৭১
বার্তা প্রতিষ্ঠান এ. পি’র খবর মুজিব কর্তৃক আপােষ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান- (বিশেষ প্রতিনিধি)।
এসােসিয়েটেড প্রেস’ (এ, পি) নামক একটি পাশ্চাত্য বার্তা সরবরাহ প্রতিষ্ঠান এশিয়ান কর্তৃপক্ষীয় মহলের বরাত দিয়া লণ্ডন হইতে পরিবেশিত এক খবরে জানান যে, শেখ মুজিবর রহমান পাকিস্তানের কাঠামাের মধ্যে বাংলাদেশ সমস্যার সমাধানের জন্য মার্কিন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন এবং শেখ মুজিবর রহমান নিজেকে বাংলাদেশ সংগ্রামের সহিত একাত্ম বলিয়া জানাইয়া দিয়াছেন। শেখ মুজিবর রহমানের নিকট কে, কিভাবে এবং কোথায় এই প্রস্তাব করিয়াছে, উহার কোন আভাস ঐ খবরে দেওয়া হয় নাই। তবে, খবরটি যে গুরুত্বপূর্ণ তাহাতে পৰ্যবেক্ষকমহলে দ্বিমতের কোন অবকাশ নাই। ঐ খবরে বলা হয়, আমেরিকা পাকিস্তানের কাঠামাের মধ্যে “স্বায়ত্তশাসিত বাংলাদেশ” এর প্রস্তাব লইয়া ইয়াহিয়া খান ও বাংলাদেশ সরকারের নেতৃবৃন্দের সহিত ঘরােয়াভাবে (informal) যােগাযােগ রক্ষা করিতেছেন এবং এই যােগাযােগের প্রক্রিয়ার মধ্যে ঐ প্রস্তাব হাজির করা হইয়াছে। ইয়াহিয়া নাকি এই প্রস্তাবে রাজীও আছে। কলিকাতা হইতে প্রকাশিত ষ্টেটসম্যান’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক সাক্ষাঙ্কারে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী জনাব কামরুজ্জামান ঐ খবর সম্পর্কে মন্তব্য করিতে গিয়া বলেন যে, আমেরিকার সরকার তাহাদের নিকট আনুষ্ঠানিকভাবে বা ঘরােয়াভাবে কোন প্রস্তাব করেন নাই। তিনি আরও বলেন। যে, স্বাধীনতা ছাড়া আর কোন সমাধান নাই ।
পর্যবেক্ষক মহল বলেন, আসলে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী চক্র পাকিস্তানের কাঠামাের মধ্যে একটি | সমাধান তথা নাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম বানচালের জন্য নানান চক্রান্ত ও দৌগিরি করিতেছে। এই। উদ্দেশ্যে তাহারা একদিকে ইয়াহিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করিয়া প্রকাশ্য হুমকি দিতেছে ও অন্যদিকে এক শ্রেণীর লােককে সাহায্যের নামে টাকা-পয়সা দিয়া হাত করিতেছে।
নতুন বাংলা ॥ ১ : ১১
২৮ অক্টোবর ১৯৭১
সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৩