মুজিবের বিচারের অধিকার পাকিস্তানের নাই—গলব্রেথ (কলিকাতা প্রতিনিধি)
কলিকাতা ১২ই সেপ্টেম্বর অধ্যাপক জন গলব্রেথ গত বৃহস্পতিবার এখানে সাংবাদিকদের নিকট বলেন যে শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার করিবার কোন অধিকার পাকিস্তান সরকারের নাই । তথাপিও যদি পাকিস্তান এ কাজে অগ্রসর হয়, উহা বিশ্ব জনতার আদালতে একটি অমার্জনীয় অপরাধ বলিয়া বিবেচিত হইবে এবং ইহার প্রতিক্রিয়া হইবে ভয়াবহ। ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক জন কেনেথ গলব্রেথ দৃঢ় আশা প্রকাশ করেন যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পাকিস্তানে উপর চাপ সৃষ্টি করিয়া শেখ মুজিবুর রহমানকে এই বিচার প্রহসন হইতে রক্ষা করিবে। অধ্যাপক গলব্রেথ দুই দিনের জন্য শরণার্থীদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করিবার উদ্দেশ্যে পশ্চিমবঙ্গে আগমন করেন। তিনি বলেন যে সিনেটর কেনেডীর শরণার্থী শিবির সফর মার্কিন জনজীবনে বাংলাদেশের মানুষের জন্য গভীর সহানুভূতি ও সমবেদনা সঞ্চার করিতে সমর্থ হইয়াছে।
বাংলার বাণী ॥ ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
বঙ্গবন্ধুর মুক্তি ও বাংলাদেশের স্বীকৃতি দাবী
বাংলাদেশের জাতীয় গণমুক্তি দলের সহ-সভাপতি শ্রীবিনােদ বিহারী চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ডাঃ কালিদাস বৈদ্য নিম্নলিখিত বিবৃতি দিয়েছেন ? ‘জাতীয় গণমুক্তি দল’ ইহার প্রতিষ্ঠাকাল হইতেই বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের দৃঢ় সমর্থক। আওয়ামী লীগ ভিন্ন এই একটি মাত্র দলের কর্মসূচীতেই ছয়দফা’ অন্তর্ভুক্ত ছিল। গত মার্চ মাস হইতে বাংলাদেশ সরকার যে স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনা করিতেছেন, জাতীয় গণমুক্তিদল তাহার প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানাইতেছেন এবং সর্বক্ষেত্রে সংগ্রামে সহযােগিতা করার কর্মসূচী গ্রহণ করিয়াছে। জাতীয় গণমুক্তিদল পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রের প্রতি অবিলম্বে বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতিদান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের মুক্তির জন্য চাপ সৃষ্টির আবেদন জানাইতেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান ব্রতে যে সমগ্র শহীদ আত্মদান করিয়াছেন জাতীয় গণমুক্তিদল। তাহাদের পুণ্য আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করিতেছে, এবং বাংলাদেশে সুপরিকল্পিত অভূতপূর্ব। গণহত্যার জন্য অপরাধীদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের জন্য দাবী করিতেছে।
বাংলার বাণী ॥ ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সমঝােতার উপদেশ
লণ্ডনের রক্ষণশীল দৈনিক ডেলী টেলিগ্রাফ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সঙ্গে একটা সমঝােতায় পৌছিবার জন্য ইয়াহিয়া খানকে উপদেশ দিয়াছেন। পত্রিকায় বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধে নিয়ােজিত গেরিলাবাহিনী বাংলাদেশে সগর্বে বিরাজমান। জনগণের অধিকাংশের মনেই ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে সূতীব্র ঘৃণাও বিক্ষোভের ঝড় প্রবাহিত হইতেছে। অর্থনীতিভাঙ্গিয়া পড়িয়াছে, খাদ্য সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার দরুণ দূর্ভিক্ষের আশংকা দেখা দিয়াছে শরণার্থীদের। ফিরিয়া যাওয়ার কোনই সম্ভাবনা নাই। পত্রিকাটি আরও বলেন, এই পরিস্থিতিতে ভূট্টো হুমকি দিতেছে তাহাকে সমগ্র পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী করা না হইলে পশ্চিম পাকিস্তানে গণ-আন্দোলন শুরু হইবে।’ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভূট্টো পায় ৮১টি সিট আর শেখ মুজিব ১৬৭টি অর্থাৎ সারা পাকিস্তানে মেজরিটি। ইয়াহিয়া ভূট্টো সংঘাতের কারসাজিও কম দায়ী নয়। আর এ হেন ভূট্টোকে বাংলার মানুষ মােটেও সহ্য করিতে রাজী হইবে না, সুতরাং, ইয়াহিয়ার সামনে সর্বোত্তম যে পথটি খােলা রহিয়াছে উহা হইতেছে শেখ মুজিবের সাথে সমঝোতায় আসা।
বাংলার বাণী ৪ ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৩