You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.03 | মুজিবের বিচার প্রহসন পাকিস্তানের জন্য ক্ষতির কারণ হবে- জঙ্গীশাহীর সামরিক আদালতে মুজিবের বিচার প্রহসন - সংগ্রামের নোটবুক
মুজিবের বিচার প্রহসন পাকিস্তানের জন্য ক্ষতির কারণ হবে
সাবেক বৃটিশ পার্লামেন্টে শ্রমিক দলীয় সদস্য এবং উইলসন সরকারের কেবিনেট মন্ত্রী মিঃ পিটার শাের গত ২৮শে আগষ্ট কলকাতায় বলেন যে, শেখ মুজিবর রহমানের বিচার প্রহসন পাকিস্তানের জন্য একটা অমর্যাদাকর ব্যাপার এবং তা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানের অসামান্য ক্ষতির কারণ হবে। তিনি বলেন, ‘অনুরূপ একটা বিচার গােপনে অনুষ্ঠানের কথা চিন্তা করাও লজ্জাজনক।’ মিঃ শাের সরেজমিনে বাংলাদেশ সমস্যা সম্পর্কে তথ্যানুসন্ধানের জন্য ঐ দিনই নয়া দিল্লী থেকে কলকাতা আসেন। বিমান বন্দরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ সমস্যার যে কোন সমাধান তথাকার জনগণের অনুমােদন লাভে করতে হবে। তিনি বলেন, জনগণের ইচ্ছা অনিচ্ছা নিরূপনের সর্বোত্তম পন্থা হল গণভােট। তবে গত নির্বাচনে শেখ মুজিবের দলের বিপুল বিজয়ের পর সেখানকার জনগণ কি চায় সে সম্পর্কে আমার কোনও সন্দেহ নেই।
জয়বাংলা (১) ॥ ১: ১৭ ॥ ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
জঙ্গীশাহীর সামরিক আদালতে মুজিবের বিচার প্রহসন
(নিজস্ব প্রতিনিধি)
পাকিস্তানের সামরিক আদালতে শেখ মুজিবুর রহমানের তথাকথিত বিচারের বিরুদ্ধে বিশ্বে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। সারা পাকিস্তানের আইনসঙ্গতভাবে রাজদণ্ডের অধিকারীকে, ইয়াহিয়ার  জঙ্গীশাহী কর্তৃক অভিযােগ প্রমাণিত হলে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে’ ঘােষণায় বিশ্ববাসী আজ উদ্বিগ্ন।  বিশ্ব জনমত পাক জঙ্গীশাহীর প্রতিটি পদক্ষেপ গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে। দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন মহল এই অবৈধ বিচারে উদ্বেগ প্রকাশ উহা স্থগিত এবং মুজিবের মুক্তির দাবী করেছেন।  জাতিসংঘের সেক্রেটারী জেনারেল মিঃ উথান্ট বলেছেন—“শেখ মজিবুর রহমানের ভাগ্যের পরিণাম পাকিস্তানের বাইরেও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।’ উল্লেখযােগ্য যে, জঙ্গীশাহী এই উক্তির প্রতিবাদ করেছে। বাঙলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিচারপতি জনাব আবু সাইদ চৌধুরী বিশ্বের ২৮টি এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী ২৪টি রাষ্ট্রের নিকট তারবার্তা পাঠিয়েছেন। তারবার্তায় বিচার বন্ধ ও মুজিবের মুক্তির জন্য ঐ সব রাষ্ট্রকে পাকিস্তানের উপর নিজেদের প্রভাব বিস্তারের জন্য অনুরােধ করা হয়েছে। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি জনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম জাতিসংঘ সহ বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের প্রতি এ সম্পর্কে চাপ প্রদানের আবেদন জানিয়েছেন। রেডিও পাকিস্তানের এক খবরে প্রকাশ, মুজিবের পক্ষে জনাব এ, কে, ব্রোহীকে জঙ্গীশাহী দাঁড় করাবে। আসল ব্যাপার হল, সামরিক আদালতে বিচার প্রহসনকে বিশ্বের চোখে ‘বৈধ’ রূপ দেওয়ার | ইহা এক অপকৌশল। এ যেন অনেকটা পাখা দিয়ে ঢেকে ঢুকে শুকুনির মরা খাওয়ার মত আর কি।

সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ০৩